রংপুরের পীরগঞ্জে সন্ধান পাওয়া একটি বৃক্ষ মানব পরিবার পথেঘাটে ভিক্ষা করছে। বৃক্ষ মানব আবুল হোসেন বাজানদারের মতোই হাতে পায়ে গাছের মতো শেকড় গজানো বিরল রোগে আক্রান্ত হয়ে দুর্বিষহ জীবনযাপন করছেন তাজুল ইসলাম (৪৮) ও তার শিশুপুত্র রুহুল আমিন (১০)। তাদের বাড়ি পীরগঞ্জ উপজেলার রামনাথপুর ইউনিয়নের আব্দুল্লাপুর কালসারডাড়া গ্রামে। মঙ্গলবার সকালে সরেজমিনে বিরল রোগে আক্রান্ত পরিবারের সাথে কথা বলে জানা গেছে, প্রায় ৪৮ বছর ধরে তারা এ রোগে আক্রান্ত হয়ে মানবেতর জীবন-যাপন করছেন। বংশ পরস্পরায় তারা এ রোগে ভুগছেন বলে জানান বৃক্ষ মানব তাজুল। তিনি বলেন, তার বাবা আফাস মুন্সিও এ রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান। তার বড় ভাই বাছেদ আলীও এ রোগে আক্রান্ত। কিছুদিন আগে তার দুপা কেটে ফেলা হলেও হাতে গাছের মতো গজানো শেকড় নিয়ে মানবেতর জীবন-যাপন করছেন। তাজুল ইসলাম আরও জানান, তিনি তার বাবার কাছে শুনেছেন তার জন্মের দুই মাস পরই হাত ও পায়ের নখগুলো বড় হতে থাকে। ধীরে ধীরে তা গাছের শেকড়ের মতো বের হয়ে আসছে। দিন যতই গড়াচ্ছে নখগুলো ততই বড় হচ্ছে। তার দুই ছেলে রুবেল মিয়া (১২) ও রুহুল আমিন (১০)। রুবেল সুস্থ ও স্বাভাবিকভাবে জন্ম নিলেও রুহুল আমিন হাত ও পায়ে বড় বড় নখ নিয়ে জন্ম গ্রহণ করে। রুহুল যতই বড় হচ্ছে শেকড়ের মত গজানো নখগুলো ততই বড় হচ্ছে। বাবা ছেলে কখনোই নিজ হাতে খেতে পারেন না। তার স্ত্রী রুবি বেগম তাদেরকে খাইয়ে দেন। কখনো কখনো চামচ দিয়ে খাওয়ার চেষ্টা করেন। তাজুল ইসলাম এ প্রতিবেদককে জানান, রোগটি মূলত জন্মগত হওয়ায় কোন কাজ করতে পারেন না তিনি। তাই বেছে নিয়েছেন ভিক্ষাবৃত্তি পেশাকে। ছেলে রুহুল আমিনও তার মত এই পেশায় জড়িয়েছেন। এ রোগের চিকিৎসা করেছেন কিনা জানতে চাইলে তিনি জানান, ‘দুইবেলা খাবারে জোটে না বাহে, চিকিৎসা করমু কী দিয়া। ভিক্ষা করি যেটা পাই সেকনা দিয়ে কোন মোতন বাঁচি আছি।’ এরপরও রংপুরের বিভিন্ন স্থানে বিনামূল্যে চিকিৎসা করিয়েছেন তিনি। কিন্তু কোন ফল পায়নি তিনি। চিকিৎসকরা বলেছেন হাত ও পা কেটে ফেলতে হবে। কান্নাজড়িত কণ্ঠে তাজুল জানান, এখন যেভাবে বেঁচে আছি তাতে বাকি দিনগুলো ভিক্ষা করে স্ত্রী-সন্তানদের মুখে দুবেলা খাবার জোটাতে পারবো। হাত ও পা কেটে ফেললে কিভাবে তাদের মুখে আহার তুলে দেবেন বলে প্রশ্ন করেন তিনি। স্বাভাবিক জীবন ফিরে পাওয়ার আর্তি জানিয়ে তাজুল ইসলাম বলেন, হাত দুটো কোনরকম নাড়াচাড়া করতে পারলেও পা দুটোর ওজন অনেকটা ভারী। যার জন্য উঁচু করতে পারি না, খুব কষ্ট হয়। তবে হাতের চেয়ে পা দুটোর অবস্থা খুব খারাপ। সার্বক্ষণিক জ্বালা-পোড়া করে। তীব্র ব্যাথায় বাবা ছেলে ঘুমাতে পারি না। হাত ও পায়ের নখ কাটলেই বের হতে থাকে রক্ত। তিনি স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে চান। পরিশ্রম করে স্ত্রী ও সন্তানদের মুখে তুলে দিতে চান খাবার। এ জন্য তাজুল ইসলাম তার নিজের ও সন্তানের চিকিৎসার ব্যয়ভার বহন করার জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, স্পিকার ড. শিরিন শারমিন চৌধুরীসহ সমাজের দানশীল ও বিত্তবান ব্যক্তিদের এগিয়ে আসার আকুল আবেদন জানান। রামনাথপুর ইউনিয়নের সাবেক মেম্বার আব্দুল কুদ্দুস জানান, তাজুলের পরিবারটি দীর্ঘদিন এ রোগে আক্রান্ত হয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। এই এলাকায় অনেক বেসকরকারী ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন কাজ করলেও পরিবারটি পাশে এসে কেউ দাঁড়ায়নি। রামনাথপুর গ্রামের শহিদুল ইসলাম ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, এই পরিবারটি অজানা এক বিরল রোগে আক্রান্ত হয়ে অসহনীয় জীবনযাপন করলেও এলাকার জনপ্রতিনিধি কিংবা সরকারি কোন প্রতিষ্ঠান তার সাহায্যে এগিয়ে আসেননি। গ্রামবাসী এই পরিবারটিকে বাঁচানোর জন্য পীরগঞ্জের পুত্রবধূ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন। সেই সঙ্গে তাজুলের পরিবার যাতে সুস্থ্য জীবনে ফিরে আসে সে জন্য দ্রুত ব্যবস্থা নেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।