বাংলাদেশে যে ছাত্রীর হত্যাকাণ্ডকে ঘিরে গত প্রায় এক সপ্তাহ ধরে ব্যাপক প্রতিবাদ চলছে, সেই সোহাগী জাহান তনুর লাশ বুধবার কবর থেকে তুলে দ্বিতীয় দফা ময়না তদন্ত করা হয়েছে। পুলিশ বলছে, তারা ধারণা করছে হত্যার আগে তাকে ধর্ষণ করা হয়েছিল। দশ দিন আগে কুমিল্লা সেনানিবাস এলাকায় নিহত তনুর লাশ পাওয়া যায়। এখনো পর্যন্ত এই ঘটনায় কোন সন্দেহভাজনকে গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ। পুলিশ দাবি করেছে, ঘটনাটি অন্য জায়গায় ঘটানোর পর কুমিল্লা সেনানিবাস এলাকায় মৃতদেহ ফেলা হয়। সোহাগী জাহান তনুর মৃতদেহ কুমিল্লার মুরাদনগরে তাদের গ্রামে দাফন করা হয়েছিল। সেখানে পুলিশি পাহারায় ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতিতে কবর থেকে মৃতদেহ তোলা হয়। সে সময় তনুর বাবাসহ পরিবারের সদস্যরাও উপস্থিত ছিলেন। এরপর মৃতদেহ কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে দ্বিতীয় দফায় ময়নাতদন্ত করা হয়। প্রথমে যে ময়নাতদন্ত করা হয়েছিল তার প্রাথমিক প্রতিবেদনের ভিত্তিতে পুলিশ বলছে, হত্যার আগে তনু ধর্ষণের শিকার হয়েছিল। এখন পুলিশ এমন ধারণা করছে। তবে এ ব্যাপারে আরও নিশ্চিত হতে এবং সুনির্দিষ্ট তথ্য প্রমাণের জন্য দ্বিতীয় দফায় ময়নাতদন্ত করার কথা পুলিশ বলছে। কুমিল্লা জেলার পুলিশ সুপার শাহ আবিদ হোসেন বলছিলেন, ‘এটি যে হত্যা, এ ব্যাপারে কোন সন্দেহ নেই। পারিপার্শ্বিক বিষয়গুলো এবং তনুর শরীরে যেসব উপসর্গ পাওয়া গেছে, তাতে মনে হয়েছে, হত্যার আগে তনু ধর্ষণের শিকার হয়েছে।’ পুলিশ সুপার আরও বলেন, ‘যেখানে তার লাশ পাওয়া গেছে, সেখানে হত্যাকাণ্ডটি সংঘটিত হয়নি। সেখানে শুধু লাশটি ফেলা হয়েছে। এ ব্যাপারে আমরা নিশ্চিত হয়েছি। এছাড়া মৃতদেহ পাওয়ার জায়গায় কিছু আলামত ছড়িয়ে ছিটিয়ে রাখা হয়েছিল। এটা সাজানো নাটকের মতো করা হয়েছিল।’ ঘটনার কয়েকদিন পরই আন্ত:বাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর বা আইএসপিআর-এর এক বিবৃতিতে বলা হয়েছিল, কুমিল্লা সেনানিবাস সংলগ্ন এলাকায় মৃতদেহ পাওয়া যায়। এদিকে, সোহাগী জাহান তনুর বাবা ইয়ার হোসেন বলে আসছেন, তিনি নিজে তার মেয়ের মৃতদেহ কুমিল্লা সেনানিবাস এলাকা থেকে উদ্ধার করেছেন। এদিনও কথা বলার সময় এই একই কথা তুলে ধরে তিনি বলেছেন, এর বাইরে অন্য কোন কথা তিনি বলতে পারবেন না। কবর থেকে মৃতদেহ তুলে দ্বিতীয়দফায় ময়নাতদন্ত করার বিষয়টিও মেনে নিতে পারছেন না ইয়ার হোসেন। তিনি বলেন, ‘প্রথমে যে ময়নাতদন্ত করা হয়েছিল, সে সম্পর্কেই আমরা এখনও কিছু জানতে পারিনি। এখন আবার লাশ কবর থেকে তোলার খবরে তনুর মা আহাজারি করেন। আসলে আমাদের মধ্যে হতাশা তৈরি হয়েছে।’ ঘটনার পর দশদিনেও জড়িত কাউকে যে চিহ্নিত করা যায়নি, সেটা নিয়েও ইয়ার হোসেন হতাশা প্রকাশ করেছেন। কুমিল্লার পুলিশ সুপার শাহ আবিদ হোসেন বলেছেন, এখনও কাউকে চিহ্নিত করা না গেলেও কিছু ধারণা এবং সম্ভাবনা নিয়ে তদন্ত করা হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, ‘স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এবং আইজি নির্দেশ দিয়েছেন, এই ঘটনা নিয়ে যেনো কোন নাটক সাজানো না হয়। ফলে সতর্কতার সাথে তদন্ত করা হচ্ছে।’ তনু হত্যাকান্ডের প্রতিবাদে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় বিক্ষোভ অব্যাহত রয়েছে। এসব বিক্ষোভ থেকে জড়িতদের দ্রুত চিহ্নিত করার দাবি জানানো হয়েছে।