বাংলাদেশে প্রায় দুই কোটি মানুষ আর্সেনিক যুক্ত পানি পানি করছে। এ ব্যাপারে যথাযথ পদক্ষেপ নিতে ব্যর্থ হচ্ছে বাংলাদেশ সরকার। এ কথা বলেছে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার বিষয়ক সংগঠন হিউম্যান রাইটস ওয়াচ। আজ বুধবার প্রকাশিত ১১১ পৃষ্ঠার রিপোর্টে এসব কথা বলা হয়েছে। ওই রিপোর্টের শিরোনাম ‘নেপোটিজম অ্যান্ড নেগলেক্ট: দ্য ফেইলিং রেসপন্স টু আর্সেনিক ইন দ্য ড্রিংকিং ওয়াটার অব বাংলাদেশেজ রুরাল পুওর’। এতে বলা হয়েছে, আর্সেনিকের বিষয়টি আন্তর্জাতিক নজরে আসার প্রায় ২০ বছর পরেও আর্সেনিকযুক্ত পানি পান করছে বাংলাদেশের মানুষ, বিশেষ করে গ্রামের মানুষ। এক গবেষণায় বলা হয়েছে প্রতি বছর আর্সেনিক সংক্রান্ত অসুস্থতায় প্রায় ৪৩ হাজার মানুষ মারা যাচ্ছে। প্রাথমিকভাবে ত্বকের ওপর ফুসকুড়ি দেখে আর্সেনিক আক্রান্ত ব্যক্তিকে সনাক্ত করছে সরকার, যদিও আর্সেনিক আক্রান্ত বেশির ভাগ মানুষের শরীরে এসব লক্ষণ দেখা যায় না। যাদের শরীরে আর্সেনিক রয়েছে তারা ক্যান্সার, হৃদযন্ত্রের অসুস্থতা, ফুসফুসে সংক্রমণ সহ নানা জটিল রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছেন। তবে তাদের বেশির ভাগই কোন চিকিৎসা সেবা নেয় না বললেই চলে। এ বিষয়ে হিউম্যান রাইটসের সিনিয়র গবেষক রিচার্ড পিয়ারহাউজ বলেন, গ্রামের লাখ লাখ মানুষের জন্য আর্সেনিকমুক্ত পানীয় পানি সরবরাহের জন্য পদক্ষেপ নিচ্ছে না বাংলাদেশ। তিনি বলেন, সরকার এমন ভাব দেয়ায় যে, মনে হয় বেশির ভাগ সমস্যার সমাধান হয়ে গেছে। সরকার ও বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক দাতারা যদি আরও জোরালো পদক্ষেপ নিয়ে এগিয়ে না আসে তাহলে প্রতিরোধযোগ্য আর্সেনিক সংশ্লিষ্ট রোগে লাখ লাখ বাংলাদেশী মারা যাবেন। এ রিপোর্ট করতে গিয়ে হিউম্যান রাইট ওয়াচ কথা বলেছে ১৩৪ জন মানুষের সঙ্গে। এর মধ্যে রয়েছেন আর্সেনিক আক্রান্ত হিসেবে সন্দেহ করা হচ্ছে এমন ব্যক্তি, ৫টি গ্রামে সরকারি নলকুপের রক্ষণাবেক্ষণকারী, সরকারি কর্মকর্তা, বেসরকারি সংগঠনের কর্মকর্তারা। ২০০৬ সাল থেকে ২০১২ সালের মধ্যে সরকার বসিয়েছে এমন ১ লাখ ২৫ হাজার স্থাপনার পানি নিয়ে তা বিশ্লেষণ করা হয়েছে। আর্সেনিক পাওয়া গেছে হস্তচালিত নলকুপে। এর বেশির ভাগই অগভীর। গ্রামের বেশির ভাগ নলকুপই এ রকম। যদিও গভীর নলকুপের পানি অপেক্ষাকৃত মানসম্পন্ন , তা সত্ত্বেও সরকার নতুন নলকুপ বসানোর কর্মসুচি নিয়েছে এমন সব এলাকায়, যেখানে আর্সেনিকযুক্ত থাকার সম্থাবনা উচ্চ। তার ওপর আবার এসব নলকুপ স্থানীয় রাজনীতিক ও নেতারা যাদের জন্য সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন সেই মানুষগুলোকে উপেক্ষিত রেখে, তাদের রাজনৈতিক সমর্থক ও মিত্রদের দিয়ে দিয়েছে। হিউম্যান রাইটস ওয়াচকে একজন সরকারি কর্মকর্তা বলেছেন, যদি একজন এমপি নতুন বরাদ্দের শতকরা ৫০ ভাগ এবং একজন উপজেলা চেয়ারম্যান শতকরা ৫০ ভাগ নিয়ে নেন তাহলে যাদের জন্য অত্যন্ত প্রয়োজন তাদেরকে দেয়ার কিছু থাকে না।