কবি সুনীল গাঙ্গোপাধ্যায়ের ‘কেউ কথা রাখেনি’ কবিতাটি পাকিস্তান ক্রিকেটের ক্ষেত্রে বেশ যুতসই হয়ে উঠেছে। কবিতার প্রথম লাইনেই ‘তেঁত্রিশ বছর কাটলো, কেউ কথা রাখেনি’। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে পাকিস্তানের ওয়ানডে ইতিহাসটা তো এমনই হয়ে উঠেছে। ৩৩ নয়, বরং ৪২ বছর কেটে গেল পাকিস্তানের কোনো খেলোয়াড় কথা রাখতে পারলেন না। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ওয়ানডেতে পাকিস্তানের দৈন্যদশা জারি। ১৯৭৪ সালের পর থেকে ইংল্যান্ডের মাটিতে সিরিজ জেতা হয়নি পাকিস্তানের। এবার ইংল্যান্ড সফরে ৪ ম্যাচের টেস্ট সিরিজ ২-২ এ ড্র করে টেস্ট র্যাঙ্কিংয়ের শীর্ষে ওঠে পাকিস্তান।
ওয়ানডে সিরিজ শুরু হয় দুঃস্বপ্ন দিয়ে। টানা দুই ম্যাচ হেরে তৃতীয় ম্যাচে ঘুরে দাঁড়ানোর প্রত্যয়ে ছিল তারা। কিন্তু এই ম্যাচে উল্টো তারা পড়লো বড় লজ্জায়। ১৬৯ রানের বিশাল ব্যবধানে হেরে ফের সিরিজ হেরে বসলো তারা। তাদের বিপক্ষে ইংল্যান্ড বিশ্বরেকর্ড গড়ে তুললো ৩ উইকেটে ৪৪৪ রান। ওয়ানডে ক্রিকেটের ইতিহাসে এটিই সর্বোচ্চ রানের ইনিংস। এই রানের পাহাড়ের জবাবে পাকিস্তান ৪২.৪ ওভারে অলআউট হলো ২৭৫ রানে। ম্যাচটিতে বেশ কয়েকটি গর্বের রেকর্ড গড়েছে ইংল্যান্ড। আর পাকিস্তান গড়েছে একাধিক লজ্জার রেকর্ড। নিচে তার কিছু তুলে ধরা হলো-
এক নজরে নটিংহ্যাম ম্যাচ
* ওয়ানডে ক্রিকেটে সর্বোচ্চ ৪৪৪ রানের বিশ্বরেকর্ড গড়লো ইংল্যান্ড। এর আগে সর্বোচ্চ ৪৪৩ রানের রেকর্ড ছিল শ্রীলঙ্কার দখলে। ২০০৬ সালে নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে তারা এই রান করে।
* পাকিস্তানের বিপক্ষে কোনো দলের সর্বোচ্চ রানের ঘটনা এটি। এর আগে তাদের বিপক্ষে সর্বোচ্চ ৩৯২ রান ছিল দক্ষিণ আফ্রিকার। ২০০৭ সালে সেঞ্চুরিয়নে এই রান করে প্রোটিয়ারা।
* ওয়ানডেতে ইংল্যান্ডের হয়ে সর্বোচ্চ ১৭১ রানের ইনিংস খেলেছেন এদিন অ্যালেক্স হেলস। এর আগে সর্বোচ্চ ১৬৭* রানের ইনিংস ছিল রবিন স্মিথের। ১৯৯৩ সালে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে এজবাস্টনে তিনি এই রান করেন। এছাড়া পাকিস্তানের বিপক্ষে কোনো ব্যাটসম্যানের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রানের ইনিংস এটি। ২০১২ সালে পাকিস্তানের বিপক্ষে সর্বোচ্চ ১৮৩ রান করেন ভারতের বিরাট কোহলি।
* ইংল্যান্ডের মাটিতে টানা ৯ ওয়ানডে সিরিজ জয়হীন পাকিস্তান। ইংল্যান্ডের মাটিতে তারা একমাত্র ওয়ানডে সিরিজ জেতে ১৯৭৪ সালে। সেটা ছিল পাকিস্তানের প্রথম ইংল্যান্ড সফর। এরপর ১৯৭৮ সাল থেকে তারা হেরেই চলেছে।
* ২২ বলে ফিফটি করে ইংল্যান্ডের দ্রুততম ফিফটির রেকর্ড গড়লেন জস বাটলার। এর আগে দ্রুততম ২৪ বলে ফিফটির রেকর্ড ছিল পল কলিংউডের ২০০৮ সালে। অবশ্য তার এই রেকর্ড মঙ্গলবার স্পর্শ করেছের এউইন মরগ্যান।
* ৪৬.২ ওভারে ৪০০ রানের মাইলফলক স্পর্শ করে এদিন ইংল্যান্ড। এর আগে ঠিক এই ওভারে ৪০০ রানের মাইলফলক স্পর্শ করে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে দক্ষিণ আফ্রিকা। দ্রুততম ৪০০ রান স্পর্শ করায় এই দু’টি এখন শীর্ষে।
* দ্বিতীয় উইকেটে অ্যালেক্স হেলস ও জো রুট ২৪৮ রানের জুটি গড়েন। পাকিস্তানের বিপক্ষে যে কোনো জুটিতে সর্বোচ্চ রানের ঘটনা এটি। এর আগে তাদের বিপক্ষে সর্বোচ্চ ২৩৮ রানের জুটি ছিল দক্ষিণ আফ্রিকার হাশিম আমলা ও এবি ডি ভিলিয়ার্সের ২০০১২ সালে। আর ইংল্যান্ডের হয়ে যে কোনো উইকেটে তৃতীয় সর্বোচ্চ রানের জুটি এটি।
* ইংল্যান্ডের ষষ্ঠ ব্যাটসম্যান হিসেবে টানা ৫ ওয়ানডেতে ফিফটি প্লাস রান করলেন জো রুট। সর্বশেষ পাঁচ ওয়ানডেতে তিনি ৬৫, ৯৩, ৬১, ৮৯ ও ৮৫ রান করলেন। এর আগে এমন টানা পাঁচ ফিফটি করেছেন ইংল্যান্ডের জিওফ বয়কট, গ্রাহাম গুচ, অ্যালেক স্টুয়ার্ট, জোনাথন ট্রট ও অ্যালেক্স হেলস।
* এদিন দ্বিতীয় উইকেটে অ্যালেক্স হেলস ও জো রুট ২৪৮ ও চতুর্ত উইকেটে এউইন মরগ্যান ও জস বাটলার ১৬১ রানের জুটি গড়েন। একই ওয়ানডেতে দুই জু’টিতে ১৫০- ওপর রান যোগ করার সপ্তম ঘটনা এটি। তবে ইংল্যান্ড এই প্রথম এমন কাজ করল।
* শ্রীলঙ্কার সঙ্গে যৌথভাবে এক ওয়ানডেতে ৫৯ বাউন্ডারি হাঁকানোর রেকর্ড গড়লো ইংল্যান্ড। এদিন ইংল্যান্ডের ব্যাটসম্যানরা ৪৩ চার ও ১৬ ছক্কা হাঁকায়। আর নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে শ্রীলঙ্কা ৫৬ চার ও ৩ ছক্কা হাঁকায়। ওয়ানডের এক ম্যাচে নিজেদের সর্বোচ্চ ছক্কা হাঁকানোর রেকর্ডও গড়েছে এদিন ইংল্যান্ড।