মো: আকরাম খাঁন: ঈদ মানে আনন্দ, ঈদ মানে খুশি। ঈদের আনন্দকে বাড়িয়ে দিতে পরিবারের সবাই শত ব্যস্ততার মাঝেও এক হয়। ঈদ উপলক্ষে সরকারি, বেসরকারি সকল প্রতিষ্ঠানে বিশেষ ছুটি ঘোষণা করা হয়। ছুটিতে জীবন বাজি রেখে মানুষ ফিরেছে তাদের শিকড়ের টানে। পথে পথে দুর্ভোগ পেরিয়ে বাড়ি পৌঁছেই ভুলে গেছে তাদের পথের ক্লান্তি। ঈদের ছুটিতে প্রিয় মানুষকে কাছে পেয়ে আনন্দে মাতোয়ারা সবাই। কিন্তু এমন ঈদ আনন্দের সময়ও কিছু গুরুত্বপূর্ণ সেবার সাথে সংশ্লিষ্ট মানুষের ঘরে ফেরা হয় না। নানা কারণে হয় না ছুটি। পেশাগত কারণে দায়িত্বের বোঝা মাথায় নিয়ে কিছু মানুষ থাকে উৎসব-আনন্দের ঊর্ধ্বে। কর্মস্থলে থেকে তাদের দায়িত্ব পালন করতে হয় ঈদের দিনও। অন্যের ঈদ আনন্দের সঙ্গে নিজের আনন্দ ভাগাভাগি করে নেন তারা।
বিশেষ করে দেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য, চিকিৎসা সেবা, সংবাদ মাধ্যমে নিয়োজিত কর্মী, ফায়ার সার্ভিস ও নিরাপত্তারক্ষীসহ কিছু পেশার মানুষ ছাড়া একদিনও চলতে পারেনা দেশ। সেজন্য ঈদের দিনেও এমন সেবার সাথে জড়িতরা সবাই বাড়ি যেতে পারেন না। পালা করে যেকোনো এক ঈদের ছুটি ছাড় দিতে হয়।
ছুটি না পেয়ে দায়িত্ব পালনে ব্যস্ত থাকা এসব মানুষ বলছেন, পরিবার-পরিজনের জন্য সবারই মন কাঁদে। আমাদেরও কাঁদে। তবে এই ভেবে ভালো লাগে যে, বৃহত্তর মানব গোষ্ঠী ও দেশের জন্য কাজ করতে গিয়ে আনন্দ ত্যাগ করতে পেরেছি।
অসুস্থ থাকার কারণে অনেকেই ঈদ কাটাচ্ছেন দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে। ঈদের এ দিনটিতেও অসুস্থ রোগীর সেবায় নিয়োজিত আছেন অনেক ডাক্তার নার্স। সব মিলিয়ে হাসপাতালগুলোতে কাটছে অন্যরকম ঈদ।
জাতীয় হৃদরোগ ইন্সটিটিউট ও হাসপাতালে গিয়ে দেখা গেল, ঈদের সকালেই প্রায় সংকটাপন্ন মমতাজের বাবার। রোগী বাঁচাতে প্রাণান্তকর চেষ্টা চিকিৎসকদের। ঈদের সকালটাও কারো কারো জীবনে কতটা করুণ হতে পারে তা কেবল হাসপাতালে গেলেই বোঝা যায়। হাসপাতালে রোগীর সঙ্গে আছেন স্বজনও।
দেশবাসীর ঈদ উদযাপন নির্বিঘ্ন করতে বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর লক্ষাধিক সদস্য দায়িত্ব পালন করছেন। স্বজনদের সময় না দিয়ে তারা জননিরাপত্তায় বিরামহীন দায়িত্ব পালন করছেন সারা দেশে। একই সঙ্গে গণমাধ্যমকর্মীদেরও একটি বড় অংশ দেশের সর্বশেষ পরিস্থিতি ও অবস্থার তাৎক্ষণিক তথ্য দেশবাসীকে জানাতে ঈদের দিনেও রাস্তায় ও অফিসে দায়িত্ব পালন করছেন। নিজেদের ঈদ আনন্দ বাদ দিয়ে টিভি পর্দায় তুলে ধরছেন অন্যদের ঈদ আনন্দের খবর। নগরীর প্রাইভেট সিকিউরিটি গার্ডরাও বিভিন্ন বাসাবাড়ি, অফিস-আদালত, ব্যাংক ও বুথের নিরাপত্তায় দায়িত্ব পালন করছেন ঈদের ছুটিতে। ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা রয়েছেন সদা প্রস্তুত। যেকোনো দুর্ঘটনার খবর পেলে যেন দ্রুত উদ্ধার তৎপরতা চালাতে পারেন তারা।
উত্তরার একটি ভবনে সিকিউরিটির দায়িত্ব পালন করছেন শেরপুরের আব্দুর রহিম। তিনি বলেন, দুই বছর যাবত ঢাকাতে চাকরি করছি। ছুটি হয় না বলে ঈদ এখানেই করতে হয়। ঈদের সময় নিজের ৮ ঘণ্টা দায়িত্বের সঙ্গে ওভারটাইমও করতে হবে। এজন্য অবশ্য বাড়তি টাকা পাওয়া যায়। কিন্তু গ্রামে না যেতে পেরে মনটা খুব খারাপ লাগছে।