স্বাস্থ্য অমূল্য সম্পদ। স্বাস্থ্যকে ভালো রাখতে চাইলে এর প্রতি যত্নবান হতে হবে। নবীজি (সা.) নিজের সুস্থতার প্রতি যত্নশীল ছিলেন। এ জন্য তিনি নিয়ম মেনে চলতেন।
নিজের শরীরের আর্দ্রতা, উষ্ণতা, খাবারের পরিমাণ ইত্যাদি সব ক্ষেত্রেই ভারসাম্য নীতিতে চলতেন। সুস্থতার জন্য খাবারদাবার, বাসস্থান, নিয়মিত ঘুম এবং যথাসময়ে জাগ্রত হওয়া ইত্যাদি সব বিষয়ে ছিলেন ভারসাম্যপূর্ণ। নিম্নে নবীজি (সা.)-এর খাদ্যনীতি উল্লেখ করা হলো—
সর্বদা এক ধরনের আহার গ্রহণ করতেন না : সর্বদা একই খাবার খাওয়া এটা রাসুল (সা.)-এর অভ্যাস ছিল না। আর এটা মানুষের স্বভাবপরিপন্থী। বরং তিনি গোশত, রুটি, খেজুর, ফল ইত্যাদি খাবারে সংমিশ্রণ ঘটাতেন। দুই রকমের খাবার হলে প্রয়োজন মনে করলে দুটোকে মিশ্রণ করে নিতেন। সাহল বিন সাদ (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) তাজা খেজুর কাঁকড়ির সঙ্গে মিশিয়ে আহার করতেন। (ইবনে মাজাহ, হাদিস : ৩৩২৬)
কারণ কাঁকড়ি ঠাণ্ডা আর খেজুর উষ্ণ, একত্রে মিশিয়ে খেলে শরীরে মধ্যপন্থা সৃষ্টি হবে। তা ছাড়া কাঁকড়ি একটু বিস্বাদ আর খেজুর মিষ্টি, মিশ্রণের দ্বারা আলাদা স্বাদ চলে আসে।
অপছন্দনীয় খাবার খেতেন না : সব খাবার সবার পছন্দ হবে এটা জরুরি নয়। রাসুল (সা.) যদি কোনো খাবার অপছন্দ করতেন, কিংবা আগ্রহ না পেতেন, তাহলে জোর করে আহার করতেন না। সুস্থ থাকার জন্য এটা বড় একটি মূলনীতি। মানুষ যখন অনিচ্ছা সত্ত্বেও জোর করে কোনো আহার গ্রহণ করে, এটা তার স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকারক। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী (সা.) কখনো কোনো খাবারের দোষত্রুটি ধরেননি। ভালো লাগলে তিনি খেতেন এবং খারাপ লাগলে রেখে দিতেন। (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৫৪০৯)
প্রিয় খাবার ছিল গোশত : রাসুল (সা.) গোশত পছন্দ করতেন এবং গোশতের মধ্যে বাহু, পিঠ ও রানের গোশত বেশি পছন্দ করতেন। কারণ মাংসপেশি ও বাহুর গোশত দ্রুত হজম হয়। আবু দারদা (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, দুনিয়াবাসী ও জান্নাতবাসীদের খাদ্যের মধ্যে শ্রেষ্ঠ খাদ্য হলো গোশত। (ইবনে মাজাহ, হাদিস : ৩৩০৫)
অন্য হাদিসে এসেছে, নবী (সা.) বাহুর গোশত বেশি পছন্দ করতেন। (আবু দাউদ, হাদিস : ৩৭৮১)
আবদুল্লাহ বিন জাফর (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে বলতে শুনেছেন…গোশতের মধ্যে অপেক্ষাকৃত উত্তম হচ্ছে রানের (পাছার) গোশত। (ইবনে মাজাহ, হাদিস : ৩৩০৮)
মিষ্টান্ন পছন্দ করতেন : রাসুল (সা.) মিষ্টি খাবার বেশি পছন্দ করতেন। মধু, হালুয়া ইত্যাদি পছন্দ করতেন। কারণ এগুলো খাবারের মধ্যে শ্রেষ্ঠতম। সুস্বাস্থ্য ও সুস্থতার জন্য উপকারী। আয়েশা (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) হালুয়া ও মধু ভালোবাসতেন। (বুখারি, হাদিস : ৫৪৩১)
তরকারি দিয়ে রুটি খেতেন : তিনি সিরকা দিয়ে ভিজিয়ে রুটি খেতেন এবং বলতেন, সিরকা তো খুব মজাদার তরকারি। (মুসলিম, হাদিস : ৫২৪৫)
শহরের মৌসুমি ফল খেতেন : মৌসুমি ফলের মধ্যে আল্লাহ তাআলা অনেক রোগ প্রতিষেধক রেখে দিয়েছেন। মৌসুমি ফল শুধু সুস্বাদুই নয়, পুষ্টিগুণেও ভরপুর। এগুলো পানি, খাদ্য আঁশ ও প্রাকৃতিক চিনিরও উৎস। মৌসুমি ফলে পুষ্টিগুণের পাশাপাশি রয়েছে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা। এ জন্য প্রিয় নবী (সা.) আগ্রহের সঙ্গে মৌসুমি ফল খেতেন।
আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, মৌসুমের প্রথম ফল রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে দেওয়া হতো। তিনি তখন বলতেন, হে আল্লাহ! আমাদের মদিনায়, আমাদের ফলে (বা উৎপন্ন ফসলে), আমাদের মুদ্দ-এ ও আমাদের সা-এ বরকত দান করুন, বরকতের ওপর বরকত দান করুন। অতঃপর তিনি ফলটি তাঁর কাছে উপস্থিত সবচেয়ে ছোট শিশুকে দিয়ে দিতেন। (মুসলিম, হাদিস : ৩২২৬)