
নিজস্ব প্রতিবেদক :দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)- এর তদন্ত, ঢাকা জেলা প্রশাসনের তদন্তে বিভাগীয় মামলা প্রমাণিত হবার পর রাজধানীর তেজগাঁও সার্কেলের অর্ন্তভূক্ত বাড্ডা ভূমি অফিসের উপ-সহকারি কর্মকতা এসএম আবুল কাশেম একজন চিহ্নিত দুর্নীতিবাজ হিসেবে ভূমিমহলে পরিচিত হন। এসবের পরও বিগত তত্বাবধায়ক সরকারের আমল থেকে অদ্যাবধি দুর্নীতির অভিযোগ উঠা এই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে কার্যকর কোনো ব্যবস্থা না নেয়ায় প্রশ্ন উঠেছে। আর এ সুযোগে ঊর্দ্ধতন কর্মকর্তাদের অর্থের বিনিময়ে ম্যানেজ করে দুর্নীতির উৎসবে মেতে সম্পদের পাহাড় গড়েছেন দুর্নীতির অভিযোগে ৬ থেকে ৭বার বদলি হওয়া এই কর্মকর্তা। ঢাকা জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তা-কর্মচারিদের মধ্যে তার দুর্নীতির কথা ওপেনসিক্রেট। বর্তমানে তার অপকর্মে বাড্ডা ভূমি অফিসে নামজারি ও খাজনা দিতে আসা জমি মালিকরা অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছেন। ভূক্তভোগীদের প্রশ্ন- আর কতদিন এই কর্মকর্তার হাতে জিম্মি থাকতে হবে এবং তার সম্পর্কে দুর্নীতির অভিযোগ প্রমাণ হবার পরও কীভাবে তিনি বহাল তবিয়্যতে আছেন?
একাধিক ভুক্তভোগীর অভিযোগÑ বাড্ডা ভূমি অফিসের আওতাধীন যে কোনো মৌজার নামজারি করতে হলে সবার আগে ওই অফিসের উপ-সহকারি কর্মকর্তা আবুল কাশেমের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হতে হয়। আর প্রতিটি নামজারির জন্য তাকে দিতে হয় ১০ থেকে ১২ হাজার টাকা পর্যন্ত। কেউ যদি নিজেই তার নামজারি করতে চায় তা হলে মাসের পর মাস ঘুরতে হচ্ছে। জমির কাগজপত্র ঠিক থাকা সত্বেও নানা অজুহাতে ঘুরাতে থাকেন। এছাড়া খাজনা দিতে আসা জমির মালিকদের নির্ধারিত ফির বাইরেও অতিরিক্ত টাকা দিতে হচ্ছে তাকে। এমনকি যে সব জায়গা খাজনা সরকারিভাবে কাটা নিষিদ্ধ অতিরিক্ত টাকার বিনিময়ে কেটে থাকেন। এসব বিষয়ে সংশ্লিষ্ট উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কাছে অভিযোগ করলে কোনো প্রতিকার হচ্ছে না।
ঢাকা জেলা প্রশাসন ও বাড্ডা ভূমি অফিস সূত্র জানায়, ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের যোগসাজশে বিভিন্ন ভূমি অফিসের কর্মকর্তা ও কর্মচারিদের মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে বদলি বাণিজ্যও করেন এই আবুল কাশেম। এসবের মাধ্যমে তিনি কোটি কোটি টাকার মালিক হয়েছেন। মোহাম্মদপুরে নামে বেনামে ২টি পাঁচ তলা বাড়ি রয়েছে তার। যাতায়াতের জন্য ৩টি প্রাইভেটকারও আছে। এছাড়া দেশের বিভিন্ন স্থানে নামে বেনামে তার প্রচুর সম্পদ রয়েছে বলে শোনা যায়। গত বছর আবুল কাশেমের দুর্নীতি তদন্ত করে দুর্নীতি দমক কমিশন (দুদক)।
ঢাকা জেলা প্রশাসন থেকে ২২/০৬/২০১২ তারিখে স্বাক্ষরিত এক অফিস আদেশ সূত্রে জানা যায়, এসএম আবুল কাশেম প্রাক্তন ইউনিয়ন ভূমি উপ-সহকারী কর্মকর্তা রূহিতপুর ভূমি অফিসে কর্মরত সরকারি স্বার্থ সংশ্লিষ্ট কেরানীগঞ্জ থানাধীন রূহিতপুর ইউনিয়নের জিঞ্জিরা মৌজার ২ নং খতিয়ানের ৭ দশমিক ২০ একর সরকারি সম্পত্তি ব্যক্তি মালিকানায় ১১৮টি নামজারি করার সুপারিশ করে সরকারের বিপুল পরিমাণ অর্থ ক্ষতিসাধন করেছেন। তিনি এই অপরাদের জন্য সরকারি কর্মচারি বিধি মালার ১৯৮৫ এর ৩(বি) ও (ডি) ধারা মোতাবেক ২২/০৭/২০০৭ তারিখে জে: প্র: ঢা: /রা:-৪/৮৩(অডিট) ৯৮-১৭১৩ নং স্মারকে ০৬/২০০৭ নং বিভাগীয় মামলা দায়ের করা হয়। এটি তদন্ত করার জন্য জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের২২/০৯/২০১০ তারিখের জে:প্র:ঢা:/রা:-৪/৪১৬/২০০৭-২৫৬২/১(১) নং স্মারকে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট এসএম মাহবুবুর রহমানে নিয়োগ করা হয়। তিনি আবুল কাশেমের বিরুদ্ধে সরকারি কর্মচারি (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালা ১৯৮৫ এর ৩(বি) ও (ডি) ধারায় আনীত অসদাচরণের ও দুর্নীতির অভিযোগসমূহ প্রমাণিত হয়েছে বলে মতামত দেন।
এ ব্যাপারে ভূমি উপ-সহকারি কর্মকর্তা আবুল কাশেম বলেন, দুর্নীতির সঙ্গে আমার কোনো সম্পৃক্ততা নেই। আমার বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ থাকলে সেটা উর্ধতন কর্মকর্তারা তদন্ত করে দেখবে।