গণতন্ত্র নামধারী যে কোনও দেশে একটি রাজনৈতিক দলই ক্ষমতাসীন থাকবে বছরের পর বছর, দীর্ঘকাল, নিশ্চয় কাম্য নয়, থাকাও অনুচিৎ। পালাবদল দরকার অবশ্যই। গণতন্ত্রের জন্যেও জরুরি।
পালাবদলের দায়িত্ব জনগণের, ভোটদাতার। প্রত্যেক গণতান্ত্রিক দেশেই এই চিত্র। সচারচরমধ্যপ্রাচ্যে বা কমিউনিস্ট-দেশে যে ভোটাধিকার, তাও সরকার নিয়ন্ত্রিত। জনগণেশের ইচ্ছে অনিচ্ছের বালাই নেই।
যে দেশ ধর্মের মোড়কে আচ্ছাদিত, সেকুলারিজম বাহুল্য। যে দেশ ধর্মের জিগিরে মানুষকে জাগরিত করে, ধর্মকে পাথেয় করে, ধর্মকেই নির্বাচনে হাতিয়ার করে, সেই দেশের আখের ঝরঝরে।ধর্মই নিয়ন্ত্রণ করবে সমাজ-রাষ্ট্র। মহামতি কার্ল মার্কসের ভবিষ্যদ্ববাণী মিথ্যে নয়।
জনগণ যদি ধর্মকে বেছে নেয় রাজনৈকিক নেতাদের উস্কানি ও কুমতলবে, বুঝতে হবে, জনগণও অপেক্ষায় ছিল ধর্মীয়-মন্ত্রণার। যেমন দেখা গেল ভারতের ষোড়শ নির্বাচনে। হিন্দুত্বই পুরোভাগে।
আরএসএস-বিজেপি হাজার-হাজার কোটি টাকা খরচ করেছে, বিলিয়েছে, টাকার বিনিময়ে ভোটার কিনেছে, বিরোধীদলের এ সব অভিযোগ ধোপে টিকবে না। দুর্বল নির্বাচন কমিশনও শুনতে নারাজ।
ভারতের এবারের নির্বাচনে বড়ো অভিযোগ, নির্বাচন কমিশনের কর্তা থেকে শুরু করে মঝারিও মোদি-ঘেঁষা। শুরু থেকেই বিরোধীদলের (আরএসএস-বিজেপি ছাড়া) আপত্তি ছিল এই নির্বাচন কমিশন নিয়ে। কিন্তু, কংগ্রেসরা কাড়েনি। কংগ্রেস সরকারই তো ষোড়শ নির্বাচন কমিশন গঠন করেছিল।
আরএসএস-বিজেপির সেবক, কর্মীরা ভারতের অধিকাংশ রাজ্যে, শুধু লিফলেট প্রচারণা নয়, মিটিংই নয়, ঘরে-ঘরে গিয়ে বলেছে, ভারত হিন্দুর দেশ। হিন্দু ঐতিহ্য, সংস্কৃতিকে প্রত্যেক হিন্দুকেই ফিরিয়ে আনতে হবে। কংগ্রেস, কমিউনিস্ট পার্টির তথাকথিত সেকুলারিজমে হিন্দুত্ব গোল্লায় গেছে, ফিরিয়ে আনো। কংগ্রেসের সেকুলারিজমের নামে ভারত আজ অতলে। কংগ্রেস হঠাও। আমরা হিন্দু, রামরাজ্য প্রতিষ্ঠার জন্যে চাই হিন্দুত্ব। রামরাজ্যের রাম হবেন নরেন্দ্র দামোদাস মোদি। এখানেই শেষ নয়। সোনিয়া, রাহুল, প্রিয়াঙ্কাকে দেশ থেকে তাড়াও, উচ্ছেদ করো। ওরা বিদেশিভারতের শত্রু। এইসব খবর, গত এক মাসে, ভারতের বিভিন্ন সংবাদপত্রে প্রকাশিত। ইংরেজি দ্য হিন্দু, দ্য হিন্দুস্তান টাইমস, নর্দান ইন্ডিয়া পত্রিকাসহ কলকাতার এই সময়, গণশক্তি, আজকাল এ।
আরএসএস-বিজেপি-শিবসেনার প্রচারণায়, হিন্দুত্বকেই ফিরিয়ে আনতে মোদিকে ভোট দিয়েছে জনগণ।
ভারতে সেকুলারিজমের কবর খোঁড়া শুরু হয়েছে। এখনই দৃশ্যমান নয়। কিছুকাল পরেই স্পষ্ট দেখা যাবে। বিপদ ঘনিয়ে আসছে, এরকমই আশংকা দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস এবং দ্য উইক সাপ্তাহিকের।
নিজেদের বাঁচানোর জন্য অধিকাংশ মুসলিমই মোদিকে ভোট দিয়েছে, দিতে বাধ্য হয়েছে। ভোটের পরে জানা যাবে নির্বাচনী পর্যালোচনার হিসেবে বুথভিত্তিক গণনায় কে কাকে ভোট দিয়েছে।
সংখ্যালঘুরা ইতিমধ্যেই আতঙ্কগ্রস্ত। হিন্দুত্বরের নবজাগরণে সেকুলার ভারত নয় আর, ভারত এবার ঘোর হিন্দুত্ববাদী। সেকুলার পশ্চিমবঙ্গেও কালো ছায়া। সেকুলার কংগ্রেস, কমিউনিস্ট পার্টির অস্তিত্ব সন্দেহজনক। মোদির হিন্দুত্বে ভারতীয় হিন্দুরা মুখরিত, জয়গানে দিশেহারা। ভারতের প্রতিবেশি দেশগুলো চিন্তিত, শঙ্কিত। সেকুলারিজম ও গণতন্ত্র টিকিয়ে রাখতে পারবে কি না? প্রশ্নসাপেক্ষ ভারতে হিন্দুত্ববাদীর জাগরণে মৌলবাদীরাও জিগির তুলবে, আস্ফালন করবে, মরীয়া হবে। ভয় নানা দিক থেকেই। ভারত যে ভয়ের সংস্কৃতি তৈরি করছে তা নিঃসন্দেহে ভয়ঙ্কর ও উদ্বেগজনক।