নারায়ণগঞ্জ থেকে সাতজনকে অপহরণ ও খুনের ঘটনার ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই সবকিছু জেনে যায় র্যাব সদর দপ্তর৷ কীভাবে তাঁদের ধরে নিয়ে হত্যা করা হয়, কারা জড়িত— তাৎক্ষণিক জিজ্ঞাসাবাদে তা স্বীকার করেছিলেন র্যাব-১১-এর অভিযুক্ত দুই কর্মকর্তা তারেক সাঈদ মোহাম্মাদ ও আরিফ হোসেন৷ কিন্তু র্যাব সদর দপ্তর অভিযুক্ত কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে তখন কোনো ব্যবস্থাই নেয়নি। তদন্তসংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা এ তথ্য জানিয়েছেন।
অপহরণের ঘটনা ঘটে ২৭ এপ্রিল দুপুরে৷ ওই দিন মধ্যরাতেই র্যাব সদর দপ্তরে ডেকে নেওয়া হয় র্যাবের কর্মকর্তা মেজর আরিফ হোসেনকে৷ সেখানে জিজ্ঞাসাবাদ-কালে ভোর চারটার দিকে তিনি ঘটনায় জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেন। ২৮ এপ্রিল সকালে সদর দপ্তরে ডেকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয় র্যাব-১১-এর অধিনায়ক লে. কর্নেল তারেক সাঈদ মোহাম্মাদকে৷ শুরুতে অস্বীকার করলেও জিজ্ঞাসাবাদের একপর্যায়ে তিনিও ঘটনায় জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেন৷
রাষ্ট্রীয় শৃঙ্খলা বাহিনীর বিরুদ্ধে এত বড় অভিযোগ পাওয়ার পর তাৎক্ষণিক কেন ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি, জানতে চাইলে র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক উইং কমান্ডার এ টি এম হাবিবুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ওই ঘটনার পর ২৯ এপ্রিল বিকেলে সরকারি নির্দেশে তিন কর্মকর্তাকে নিজ নিজ বাহিনীতে ফেরত পাঠানো হয়। এরপর সরকার তাঁদের অবসর দেয়। তিনি দাবি করেন, ঘটনা সম্পর্কে র্যাব তখন কিছুই জানতে পারেনি।
তবে তদন্তের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা প্রথম আলোকে বলেন, জিজ্ঞাসাবাদে অভিযুক্ত কর্মকর্তারা স্বীকার করেন যে ঘটনার পরপরই তিন কর্মকর্তাকে র্যাব সদর দপ্তরে ডেকে পাঠানো হয়। জিজ্ঞাসাবাদের শুরুতেই মেজর আরিফ জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেন। তিনি জানান, অধিনায়ক তারেক সাঈদের নির্দেশে তিনি এ ঘটনায় যুক্ত হয়েছেন৷ অধিনায়ক এ ঘটনা সদর দপ্তরে জানাতে নিষেধ করেছিলেন।
তদন্তসংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, মেজর আরিফ স্বীকার করেন, এর আগে ১৮ এপ্রিল ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও প্যানেল মেয়র নজরুলকে অপহরণের একটি চেষ্টা ব্যর্থ হয়ে যায়৷ তাঁরা ওই দিন নজরুলের বাড়ির কাছে গোপনে অবস্থান নিয়েছিলেন। পরিকল্পনা ছিল, নজরুল ঢাকায় যাওয়ার জন্য বাসা থেকে বের হলেই অপহরণ করা হবে। কিন্তু ওই দিন তিনি বাসা থেকে বেরই হননি৷ পরদিনও তাঁরা নজরুলের বাড়ির কাছে অবস্থান নেন। কিন্তু পরে জানতে পারেন, নজরুল তাঁদের চোখ ফাঁকি দিয়ে ঢাকায় চলে গেছেন। এই পরিকল্পনা হয় ১১ এপ্রিল। নূর হোসেন এ কাজটি দ্রুত শেষ করার জন্য আরিফকে চাপ দেন।
অপহরণের পরিকল্পনা সম্পর্কে কর্মকর্তারা জানান, ২৭ এপ্রিল নজরুল আদালতে আসবেন, এ খবর র্যাবের আরেক কর্মকর্তা এম এম রানাকে জানিয়েছিলেন আরিফ। এ জন্য র্যাবের গাড়ির নম্বরপ্লেট খুলে ফেলতে বলেন তিনি। আরিফ বলেছিলেন, আদালত থেকে বের হওয়ার পরই তাঁকে তুলে নেওয়া হবে। আরিফের সঙ্গে কথা বলার পর রানা টহল দলকে জানান, আট-নয়জনের একটি দল নিয়ে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিংক রোডের শিবু মার্কেটের কাছে অবস্থান নিতে হবে। তাঁরা নির্দেশ দিলে স্টেডিয়ামের কাছে চেকপোস্ট বসাবেন। এরপর তিনি নিজে আটজনের আরেকটি দল নিয়ে শিবু মার্কেটের কাছে আসার কথা জানান।
ওই সূত্র জানায়, নজরুলের গাড়ি আদালত থেকে বের হওয়ার পর রানা ফোন করে টহল দলকে জানান, দুিট কার ঢাকার দিকে যাচ্ছে। একটি কালো, অন্যটি সাদা। ৩১ সিরিয়ালের গাড়ি দুটিকে থামাতে হবে। সাতজনকে অপহরণের পর এঁদের সবার মোবাইল ফোন বন্ধ করে পেছনে হাত বেঁধে ফেলা হয়। দুটি গাড়ি টঙ্গীর দিকে রাস্তায় ফেলে আসার জন্য একজন সদস্যকে নির্দেশ দেন আরিফ হোসেন। পরে গাজীপুরের চন্দ্রা থেকে নজরুলের ও পরদিন নিকেতন থেকে আইনজীবী চন্দন সরকারের গাড়ি উদ্ধার করে পুলিশ।
তদন্ত কমিটির একজন সদস্য প্রথম আলোকে বলেন, তাঁরা জানতে পারেন, নজরুলকে অপহরণের ঘটনাটি দেখে ফেলেন আইনজীবী চন্দন সরকার ও তাঁর গাড়িচালক। এরপর তাঁদেরও অপহরণ করা হয়। সাতজনকে নিয়ে মেজর আরিফ দুটি মাইক্রোবাসে করে নরসিংদীর দিকে চলে যান। তিনি নূর হোসেনকে ফোনে জানান, সবাইকে