অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের দাবিতে ২০ দলের ডাকা অনির্দিষ্টকালের অবরোধ এক মাস পেরিয়ে গেছে। এর মধ্যে আবার সপ্তাহের বেশিরভাগ দিন দেশব্যাপী কিংবা দেশের বিভিন্ন জেলা ও বিভাগে হরতালও হচ্ছে।
প্রতিদিনিই দেশের কোথাও না কোথাও ককটেল কিংবা পেট্রলবোমা হামলায় মানুষ মারা যাচ্ছে। চরম উদ্বেগ, উৎকণ্ঠা আর আতঙ্কে দিন কাটছে সাধারণ মানুষের। ককটেল আর পেট্রলবোমা হামলার ভয়ে সাধারণ মানুষ এখন প্রয়োজনীয় কাজেও ঘর হতে বের হতে পারছে না। টানা অবরোধের কারণে ভোগান্তির শিকারও হচ্ছেন তারা।
এদিকে আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে আটকের পর বন্দুকযুদ্ধে বিরোধী জোটের বেশ কয়েকজন নেতাকর্মী নিহত হওয়ার পর বিএনপি-জামায়াত অভিযোগ করছে যে, সরকার চলমান আন্দোলন দমাতে র্যাব-পুলিশ আর বিজিবি দিয়ে বিরোধীদলের নেতাকর্মীদেরকে গুলি করে হত্যা করছে।
এজন্য সরকার পতনের আন্দোলন তীব্র করতে তারা আবার অবরোধের মধ্যেই হরতাল দিয়ে দেশকে অচল করে দেওয়ার চেষ্টা করছে।
সংঘাত, সংঘর্ষ, অগ্নিসংযোগ ও আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর বাধার মধ্য দিয়ে চলা টানা অবরোধের কারণে দেশের রাজনীতিতে এখন চরম সংকট সৃষ্টি হয়েছে।
সরকার ও বিরোধী জোটের অনড় অবস্থানের কারণে সৃষ্ট সংকট নিরসনের পরিবর্তে এখন দিন দিন আরো তীব্র হচ্ছে বলে সচেতন মানুষ মনে করছেন।
সংলাপের মাধ্যমে চলমান সংকট নিরসন করতে সরকার ও বিরোধী জোটের প্রতি দেশের বিশিষ্ট বুদ্ধিজীবী, রাজনীতিক বিশ্লেষক, সাংবাদিক, ব্যবসায়ী, আইনজ্ঞ, সুশীল সমাজসহ বিভিন্ন শ্রেণি পেশার লোকজন আহ্বান জানিয়ে আসছেন।
বিরোধী জোটের পক্ষ থেকে ইতিবাচক সাড়া আসলেও সরকারি মহল থেকে বরাবরই সংলাপের এসব আহ্বানকে উড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে।
বুদ্ধিজীবী ও সুশীল সমাজের লোকদেরকে সরকারের মন্ত্রী ও সরকারদলীয় নেতারা স্টুপিড আর পাগল হিসেবে আখ্যায়িত করছে।
এদিকে সংলাপ-সমঝোতার পরিবর্তে সরকার বিরোধী জোটের চলমান আন্দোলন দমাতে আরো কঠিন পথে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে।
শুক্রবার রাতে গণভবনে আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটির সভায় বিরোধীদলের আন্দোলন কঠোর হাতে দমনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে। সভায় আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতাদের পক্ষ থেকে সংলাপের পরিবর্তে চলমান আন্দোলনকে কঠোর হাতে দমনের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে বলেও একটি সূত্রে জানা গেছে।
শুক্রবার সন্ধ্যায় রাজধানীর গুলশানে একটি অনুষ্ঠানে সংলাপের বিষয়কে নাকচ করে দিয়ে বিরোধী জোটের চলমান আন্দোলন কঠোর হাতে দমনের কথা বলেছেন প্রধানমন্ত্রীর আইটি উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়। যারা সংলাপের কথা বলছেন তাদেরকে জয় পাগল বলেও আখ্যায়িত করেছেন।
অপরদিকে দাবি আদায়ে অনড় অবস্থানে রয়েছেন বিএনপি চেয়ারপারসন ও ২০ দলের শীর্ষ নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া। অংশগ্রহণমূলক মধ্যবর্তী নির্বাচনের দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত চলমান আন্দোলন অব্যাহত থাকবে বলেও তিনি বিবৃতির মাধ্যমে একাধিকবার ঘোষণা দিয়েছেন।
সর্বশেষ গত বৃহস্পতিবার দেওয়া বিবৃতিতে খালেদা জিয়া দুইটি বিষয় খুবই স্পষ্ট করে উল্লেখ করেছেন।
একটি হলো, যৌক্তিক পরিণতিতে না পৌঁছা পর্যন্ত তাদের চলমান আন্দোলন অব্যাহত থাকবে আর দ্বিতীয়টি হলো, দাবি আদায় করতে গিয়ে বেগম খালেদা জিয়া যেকোন পরিণতির জন্য তৈরি আছেন।
এদিকে বিশিষ্টজনরা মনে করছিলেন, দেশের চলমান সংকট নিরসনের লক্ষ্যে সরকার ও বিরোধী জোট সংলাপের দিকে এগিয়ে আসবে। কিন্তু দুই জোটের অনড় অবস্থান দেখে তারা এখন অনেকটাই হতাশ।
সংলাপের মাধ্যমে চলমান সংকট নিরসনের লক্ষ্যে ঢাকায় নিযুক্ত বিদেশি কূটনীতিকরা এখন তৎপর হয়ে উঠছেন। ইতিমধ্যে তারা অনানুষ্ঠানিক কথাবার্তাও শুরু করেছেন।
তবে এই মূহুর্তে সরকার কোন সংলাপ-সমঝোতার দিকে আসবে না বলেও মনে করছেন অনেকে।
তাদের মতে, সংলাপের অর্থই হলো মধ্যবর্তী একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন। আর এই মূহুর্তে মধ্যবর্তী নির্বাচনে যাওয়ার মতো অবস্থা ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের নেই। তাই সর্বশক্তি নিয়োগ করে সরকার ক্ষমতায় টিকে থাকারই চেষ্টা করবে।
দেশের চলমান সংকট কোন পথে সমাধান হবে এটাও এখন কেউ বলতে পারছেন না।
সম্প্রতি আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত এক অনুষ্ঠানে বলেছেন, প্রয়োজনে প্রধানমন্ত্রী তার সাংবিধানিক বিকল্প ক্ষমতা প্রয়োগ করবেন।
প্রধানমন্ত্রীর বিকল্প সাংবিধানিক ক্ষমতার বিষয়টি সকলের কাছেই স্পষ্ট। অনেকেই মনে করছে, পরিস্থিত যেদিকে যাচ্ছে অবশেষে চলমান সংকটের সমাধান ওই পথেই হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
–