ঘটনাটা ২০০৮ সালের। পৃথিবীর বুকে দূর মহাকাশ থেকে একটি বড় উল্কাখণ্ড পৃথিবীর দিকে এগিয়ে আসতে থাকে।
নির্দিষ্ট সময় পরবর্তীতে উল্কাখণ্ডটি সুদানের নুবিয়ান মরুভূমিতে ভূপাতিত হয়। এটাই ছিল প্রথম উল্কাখণ্ড যা পৃথিবীতে আঘাত হানার আগেই বিজ্ঞানীরা একে সনাক্ত করতে পেরেছিলেন এবং এর সম্ভ্যাব্য গতিপথ সম্পর্কেও জানতেন বিজ্ঞানীরা।
উল্কাখণ্ডটি মাটিতে আঘাত হানার সঙ্গে সঙ্গে বিজ্ঞানীরা সেখানে ছুটে যান এবং অবশিষ্টাংশ সংগ্রহ করেন। সেই ঘটনা পর বিজ্ঞানীরা জানিয়ে দিলেন যে, উল্কাখণ্ডের পাথরখণ্ডের হীরে থাকার সম্ভাবনা রয়েছে।
অবশ্য বিজ্ঞানীদের এই বক্তব্য আশ্চর্যজনক কিছু ছিল না। কারণ কিছু উল্কা এধরণের পদার্থ বহন করে। কিন্তু নতুন এক গবেষণা জানাচ্ছে যে, মহাকাশের যে হীরের কথা বলা হচ্ছে তা আদতে উল্কাখণ্ডগুলোর চেয়ে তুলনায় অনেক বড়, যাদের এখন পর্যন্ত দেখা যায়নি। তবে বিজ্ঞানীরা এর উপস্থিতি স্বীকার করেছেন।
বিজ্ঞানীদের মতে এই হীরেগুলো কিছুটা অস্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় তৈরি হয়। বিশাল হীরেগুলোর ভেতরে অবশ্য নিরেট পাথর থাকে, অনেকটা কোনো এক গ্রহের মতো। বিজ্ঞানীদের এই বক্তব্যগুলো যদি সত্যি হয় তাহলে হীরেগুলো এমন একটি গ্রহ থেকেই আসছে যা আমাদের সৌরজগতের মধ্যেই রয়েছে এবং সেই গ্রহ থেকেই ভেতরে পাথর সমৃদ্ধ হীরের টুকরোগুলো ছড়িয়ে ছিটিয়ে যাচ্ছে।
জাপানের হিরোশিমা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানী মাসাকি মিয়াহারা ও তার দল এরকম কিছু উল্কাখণ্ড নিয়ে কাজ করছেন। যদিও ওই উল্কাখণ্ডগুলোতে হীরের টুকরোগুলো খুবই ছোটো। বেশিরভাগ হীরেই প্রায় ৪০ মাইক্রোমিটার, তবে হাতে গোটা কয়েকটি হীরে পাওয়া গেছে যেগুলো ১০০ মাইক্রোমিটার।
তবে এটাও বিজ্ঞানীরা জানিয়ে দিচ্ছেন যে, পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে প্রবেশের সঙ্গে সঙ্গে উল্কাখণ্ডগুলোর শরীরে যখন আগুন ধরে যায় এবং তখন তীব্র চাপের কারণে হীরের খণ্ডটি ভেঙ্গে চুর্ণবিচুর্ণ হয়ে যেতে পারে।
পৃথিবীতে আমরা যে ধরণের হীরে দেখে অভ্যস্ত এবং সেগুলো যে প্রক্রিয়ার ভেতর দিয়ে তৈরি হয়, মহাকাশ থেকে আগত হীরেগুলো কিছুটা ভিন্ন। স্বাভাবিক নিয়ম অনুযায়ী দীর্ঘসময় একটি নির্দিষ্ট তাপমাত্রার ভেতর কার্বনকে চাপ প্রয়োগ করলে কৃত্তিমভাবেই হীরে উৎপাদন করা সম্ভব।
কিন্তু মহাকাশের হীরেগুলো পরীক্ষা করে বিজ্ঞানীরা দেখিয়েছেন যে, এই হীরেগুলো যে গ্রহ থেকে এসেছে সেখানে উপরিতলের কঠিন পাথরের ভেতরে এই হীরে উৎপাদিত হয় এবং পৃথিবীতে স্বাভাবিক নিয়মে উৎপাদিত হীরের তুলনায় অনেক কম সময় লাগে মহাকাশের হীরের ক্ষেত্রে।