মুক্তিযুদ্ধের সময় রাজাকারের ছোঁড়া গুলি এসে লেগেছিল মোমেনা বেগমের গলায়। তাঁর বয়স তখন প্রায় ১৫ বছর। আহত অবস্থায় বাবা মেয়েটিকে উদ্ধার করে নিয়ে যান স্থানীয় এক গ্রাম্য চিকিৎসকের কাছে। এরপর ধীরে ধীরে সে সুস্থ হয়ে উঠলেও গুলিটি থেকে যায় মোমেনার গলায়।
যুদ্ধ থেমে যায়। মোমেনার বিয়ে হয়। হয় সংসার। কিন্তু দরিদ্র এই গৃহবধূ অভাবের কারণে বের করতে পারেননি সেই গুলি। মোমেনার এখন বয়স প্রায় ৫৮ বছর। সময় গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে তাঁর গলার সমস্যা বাড়তে থাকে। মাঝেমধ্যে ব্যথা হলে ব্যথানাশক ওষুধ খেতেনে। কিন্তু সম্প্রতিক সময়ে এতে আর কোনো কাজ হচ্ছিল না। ফলে আত্মীয়স্বজন ও এলাকার লোকজনের সহায়তায় গত মাসের প্রথম সপ্তাহে তাঁকে নিয়ে যাওয়া হয় একজন চিকিৎসকের কাছে। চিকিৎসক পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে মোমোনার গলার বাম দিকে আবিষ্কার করেন একটি গুলি। এরপর তাঁকে ভর্তি করা হয় রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। সেখাসে গত মঙ্গলবার অপারেশনের মাধ্যমে চিকিৎসক মোমেনার গলা থেকে বের করে আনেন সেই গুলিটি।
আজ বুধবার বিকেলে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ওই হাসপাতালে ভর্তি থাকা মোমেনা বর্তমানে সুস্থ আছেন। সকালে খেয়েছেন তরল খাবার।
মোমেনার বাড়ি লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা উপজেলার মধ্য গড্ডিমারী গ্রামে। স্বামী-সন্তান না থাকায় মোমেনা তাঁর ছোট বোন মনোয়ারা বাড়িতে থাকেন। তাঁর দিন চলে অন্যের সহায়তায়।
মোমেনার ছোট বোন মনোয়ারা জানান, ‘হঠাৎ ব্যথা হলে ব্যথার ওষুধ খাওয়ানো হতো। কিন্তু আমরা জানতাম না যে তাঁর গলায় গুলি আটকে আছে।’
মোমেনার অপারেশন করানো রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের সার্জিক্যাল বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডাক্তার বিমল চন্দ্র বলেন, ‘আশা করছি তিনি পুরোপুরি সুস্থ হয়ে উঠবেন।’
– See more at: http://www.kalerkantho.com/online/country-news/2014/05/07/81452#sthash.07ob3PdZ.dpuf