ছাতক (সুনামগঞ্জ) প্রতিনিধিঃ
সুনামগঞ্জের ছাতকে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের অভ্যন্তরে চরম অনিয়ম, অব্যবস্থাপনা, দায়িত্বহীনতা, ঘুষ গ্রহণ, জালিয়াতি, প্রতারণা ও সীমাহীন দূর্নীতির অভিযোগ রয়েছে। গ্রাহকদের হয়রানী বন্ধে সরকার এখানে আবাসিক থেকে নির্বাহী প্রকৌশলী পদ সৃষ্টি করা হয়। আর প্রথম নির্বাহী প্রকৌশলী হচ্ছেন স্বাগত সরকার। কিন্তু তিনি যোগদানের পর থেকে সেবামূলক এ প্রতিষ্টানটি ঘুষ-দূর্নীতির আখড়ায় পরিনত হয়। ফলে চরম হয়রানীর শিকার হচ্ছেন হাজার হাজার গ্রাহক।
জানা যায়, ছাতক বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের অধীনে ছাতক ও দোয়ারাবাজার উপজেলা, দক্ষিণ সুনামগঞ্জ উপজেলার কয়েকটি ইউনিয়নও সিলেটের বিশ্বনাথ উপজেলার লামাকাজি ইউনিয়নসহ প্রায় ২২হাজার গ্রাহক রয়েছে। জানা গেছে, ২০১৫সালে বাবু স্বাগত সরকার নির্বাহী প্রকৌশলী পদে এখানে যোগদানের পর থেকে সেবামূলক এ অফিসটি ঘুষ-দূর্নীতির আখড়ায় পরিনত হয়েছে। তিনি অফিস সহকারি আবু তালেবের মাধ্যমে ঘুষ বানিজ্যে মেতে উঠেছেন। ছাতক শহরে শতাধিক ষ্টোন ক্রাসিং মিল, লাফার্জ-সুরমা সিমেন্ট লিঃ, ছাতক সিমেন্ট ফ্যাক্টরী লিঃ, নিটল পাল্প এন্ড পেপারমিল লিঃ, আকিজ বেভারেজ ফুড লিমিটেডসহ বিভিন্ন শিল্প কারখানা রয়েছে। বিষেশ করে ষ্টোন ক্রাসিং মিলে ট্রান্সফর্মার নষ্ট হলে এটি পরিবর্তনের নামে আদায় করা হয় দেড় থেকে দু’লক্ষ টাকা। জানা গেছে, বৃহৎ এলাকায় আবাসিকও বানিজ্যিক গ্রাহকদের প্রতিবছর প্রায় অর্ধশতাধিক ট্রান্সফর্মার বিকল হলে পরিবর্তনের প্রয়োজন হয়। এক্ষেত্রে প্রতিটি ট্রান্সফর্মার বদলের নামে হাতিয়ে নেয়া হয় বছরে প্রায় আড়াই কোটি টাকা। এ রেওয়াজ শুরু হয় বাবু স্বাগত সরকার এখানে যোগদানের মধ্য দিয়ে। আবাসিক এলাকার ট্রান্সফর্মার বিকল হলে তার প্রধান সহযোগি তালেবের মাধ্যমে গ্রাহকদের অফিসে ডেকে ঢাকা থেকে এটি পরিবর্তনে কয়েকমাস সময়ের কথা বলা হয়। এসময় ভোক্তভূগীদের ফ্রিজে মাছ-মাংশসহ বিভিন্ন মালামাল নষ্ট হবার অজুহাতে আদায় করা হয় মোটা অংকের টাকা। এতে আবাসিক ও বানিজ্যিক গ্রাহকরা চরম হয়রানীর শিকার হচ্ছেন। নোয়ারাই এলাকার একটি ক্রাসিং মেশিনের ট্রান্সফর্মার পরিবর্তনের জন্যে ৩লক্ষ টাকা দাবি করেন নির্বাহী প্রকৌশলী। সম্প্রতি আন্ধারীগাঁও গ্রামের বিভিন্ন ক্রাসার মিলে সংযোগও ট্রান্সফর্মার প্রদানের মাধ্যমে অর্ধকোটি টাকা ঘুষ আদায় করা হয়। এছাড়া নোয়ারাই ইউনিয়নের টিলাগাঁও গ্রামে এসটি ২২খুটা ও এলটি ৩০খুটায় বিদ্যুৎ সংযোগ দিয়ে প্রায় ১০লক্ষ টাকা হাতিয়ে নেন। এভাবে রায়সন্তেুাষপুর ও খাইরগাঁও গ্রামে ট্রান্সফর্মার পরিবর্তন করে প্রায় ৬লক্ষাধিক টাকা এবং দোয়ারাবাজার সদর ইউনিয়নের কান্দাগাঁও গ্রামের ৩কিঃমিটার বিদ্যুতের নতুন সংযোগে ১৫লক্ষ টাকা আদায় করা হয়। ইতোপূর্ব নির্বাহী প্রকোৗশলীর বিরুদ্ধে দোয়ারাবাজার উপজেলার টেংরা এলাকার লোকজন খনিজ ও জা¦ালানী মন্ত্রণালয়ে লিখিত অভিযোগ দেন। কিন্তু খুটির জোর থাকায় তার বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। জানা গেছে, মিটার রিডারদের এলাকায় না দিয়ে গ্রাহকদের নামে তিনি মনগড়া বিল দিয়ে যাচ্ছেন। দেখা গেছে, জনৈক গ্রাহক ৯শ’ইউনিট বিদ্যুৎ ব্যবহার করলেও বিল পরিশোধ করেছেন ১৮শ’ থেকে দু’হাজার ইউনিটের। একপর্যায়ে এসব জালিয়াতি ধাঁমাচাঁপা দিতে সচল মিটারকে অচল দেখিয়ে ওই গ্রাহকের নামে ফিক্সড বিল দেয়া শুরু হয়। কয়েকমাস মোটা অংকের টাকার ফিক্সড বিল দেয়ার পর মিটার পরিবর্তন করে বিভিন্ন গ্রাহকের বিল দেয়া পুরানো হাজার হাজার ইউনিটের টাকা হজম করেন। এভাবেই চলছে তার ব্যাপক ঘুষ বানিজ্য। এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট উর্ধতন কর্তৃপক্ষের আশু হস্তক্ষেপ করছেন গ্রাহকরা। এব্যাপারে নির্বাহী প্রকৌশলীর সাথে কথা বলতে চাইলে সাংবাদিক পরিচয় দেয়ায় রাজি হননি।