মো: আকরাম খাঁন : ঝিনাইদহের মহেশপুর উপজেলা প্রকৌশল অধিদপ্তর এলজিইডির তত্বাবধানে রোপিত কোটি টাকা মূল্যের সহস্রাধিক গাছ একটি দুর্নীতিবাজ চক্র অবৈধ নিলামের মাধ্যমে মাত্র সাড়ে ১৮ লাখ টাকায় হাতিয়ে নিয়ে রাতারাতি কোটিপতি হওয়ার পাঁয়তারা করছে।
অনুসন্ধানে জানা যায়, গত প্রায় ২০ বছর আগে মহেশপুর উপজেলার শ্যামকুড় ইউনিয়নের পদ্মপুকুর বাজারের মোড় থেকে শ্যামকুড় বাজার পর্যন্ত ৪ কিলোমিটার রাস্তার দু’ধারে উপজেলা প্রকৌশল অধিদপ্তর এলজিইডির তত্বাবধানে কড়–ই ও অর্জুন গাছ রোপণ করা হয়। সে সময় উপজেলা নির্বাহী অফিসার, উপজেলা প্রকৌশলী ও সংশ্লিষ্ট ইউপি চেয়ারম্যান একটি চুক্তিনামায় স্বাক্ষর করেন। চুক্তি মোতাবেক গাছ বিক্রির সময় সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন পরিষদ পাবে ৬০ ভাগ, গাছ পাহারারত এলজিইডির কুরু মহিলারা পাবে ২০ ভাগ ও রাস্তার ধারের জমির মালিক পাবে ২০ ভাগ।
সরকারি নীতিমালা অনুযায়ী এলজিইডির আবেদন মোতাবেক স্থানীয় সরকার ও সমবায় মন্ত্রণালয় থেকে গাছ নিলামের অনুমোদন পাওয়ার পর সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসকের নির্দেশনা মোতাবেক সংশ্লিষ্ট উপজেলা নির্বাহী অফিসার বহুল প্রচারিত জাতীয় ও আঞ্চলিক পত্রিকার মাধ্যমে নিলাম বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে কোটেশন আহ্বান পূর্বক সর্বোচ্চ দরদাতাকে গাছ নিলাম দিবেন। কিন্তু ওই রাস্তার ধারের কোটি টাকা মূল্যের সহস্রাধিক মোটা মোটা কড়–ই গাছ নিলাম দিতে কোন নীতিমালার ধার না ধেরে এক কর্মকর্তার মৌখিক নীতিমালা মোতাবেক সংশ্লিষ্ট ইউপি চেয়ারম্যান চুয়াডাঙ্গা থেকে প্রকাশিত ‘দৈনিক নতুন খবর’ পত্রিকায় নিলাম বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে অবৈধভাবে গাছ বিক্রির কোটেশন আহ্বান করেন। ওই পত্রিকার মহেশপুর তথা ঝিনাইদহ জেলায় কোন পাঠক তথা গ্রাহক নেই। কোটেশন মোতাবেক একটি গোপন সিন্ডিকেট দু’টি দরপত্র কোটেশন দাখিল করে।
অবৈধভাবে দরপত্র আহ্বানকারী ইউপি চেয়ারম্যান আমান উল্লাহ্ বলেন ‘দুটি দরপত্রের মধ্যে সর্বোচ্চ দরদাতাকে সাড়ে ১৮ লাখ টাকায় গাছের নিলাম দিয়েছি।’ গাছ নিলামের আগে তারা উপজেলা ফরেস্টারকে নিয়ে গাছগুলো চিহ্নিত করে সে সবের গড় মূল্য ২৬ লাখ টাকা লিখিয়ে নেয়।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে এতো কম টাকায় সহস্রাধিক গাছ নিলাম দেয়ার বিষয়ে সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন পরিষদের ১২ জন মেম্বরের মধ্যে ৮ জন মেম্বর চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে অবস্থান নিলেও কোন এক কালো হাতের ইশারায় বিশেষ এক ব্যক্তিকে বিশেষ কারণে গাছের নিলাম দেয়া হয়েছে। বন বিভাগের একটি সূত্র জানায় ওই রাস্তায় প্রায় ১২শ গাছ রয়েছে। যার মূল্য প্রায় দেড় কোটি টাকা।
গত ১০ জুন সরেজমিন অনুসন্ধানে দেখা যায়, সহস্রাধিক গাছের মোটা মোটা লগ বাদে প্রতিটি গাছে গড়ে জ্বালানী কাঠ পাওয়া যাবে প্রায় ৩০ মণ হারে। সে মোতাবেক ৩০ হাজার মণ জ্বালানী পাওয়া যাবে। ১ শত টাকা মণ দরে ৩০ হাজার মণ জ্বালানীর দাম ৩০ লাখ টাকা। অন্যদিকে প্রতিটি গাছে গড়ে ৩০ সিএফটি হারে মোট ৩০ হাজার সিএফসি লগ পাওয়া যাবে। ৩ শত টাকা হারে ৩০ হাজার সিএফটি লগের দাম ৯০ লক্ষ টাকা। সহস্রাধিক গাছের লগ ও জ্বালানী কাঠ বাবদ ১ কোটি ২০ লক্ষ টাকা আসবে খুব সহজেই। গাছ কেনার নিলামের টাকা বাদ দিলেও ১ কোটি টাকা লাভের ভিতর গাছ কাটার লেবার খরচ বাদ দিলেও লাভ প্রায় কোটি টাকা। শোনা যাচ্ছে নিলামের সাড়ে ১৮ লাখ টাকা বাদে লাভের মধ্যে ৪০ লাখ টাকা ভাগাভাগি করা হচ্ছে।
উল্লেখ্য, গত বছর ওই একই পদ্ধতিতে উপজেলার ৬ নম্বর নেপা ইউনিয়নের সহস্রাধিক গাছ অবৈধভাবে নিলাম দিয়ে কোটি টাকা ভাগাভাগি করে নেয়া হয়েছে।
স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান আমান উল্লার সাথে যোগাযোগ করলে তিনি জানান, ইউনিয়ন পরিষদের সিদ্ধান্ত ও চুক্তিপত্রের সকল নিয়ম অনুসরণ করে টেন্ডার দেয়া হয়েছে।
মহেশপুর উপজেলা প্রকৌশলী সেলিম চৌধুরী বলেন গাছ বিক্রির ব্যাপারে আমাদের কিছু জানা নেই।