আরিফ উদ্দিন, গাইবান্ধা প্রতিনিধিঃ বালাসীঘাট-বাহাদুরাবাদ নৌরুটটি পুনরায় চালুর উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এজন্য পলাশবাড়ি-গাইবান্ধা-বালাসীঘাট সড়কটি সম্প্রসারণের কাজ শুরু করা হয়েছে। কিন্তু বালাসীঘাট-ত্রিমোহিনী জংশন রেল পথ সংস্কারে কোন উদ্যোগ নেয়া হয়নি। ফলে বালাসীঘাট-বাহাদুরাবাদ নৌরুট চালু হলে সড়ক পথে বাস-ট্রাকসহ অন্যান্য যানবাহন চলাচল করলেও ট্রেন চলাচল অনিশ্চিত হয়ে পড়বে।
১৪ বছর ধরে অযতœ আর অবহেলায় পড়ে থেকে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বালাসীঘাট-ত্রিমোহিনী রেলপথটি। এই রেলপথে অসংখ্য কাঠের স্লিপার হয় চুরি গেছে নয় তো অযতেœ অবহেলায় নষ্ট হয়ে গেছে। ফলে এ রেলপথটি চালু করতে হলে রেল লাইনের স্লিপার বদলানো জরুরী হয়ে পড়েছে। ২০২০ সালের দিকে বালাসীঘাট-বাহাদুরাবাদ নৌরুটটি ড্রেজিংয়ের মাধ্যমে সক্রিয় করে তোলা হবে নৌ মন্ত্রণালয় সুত্রে জানা গেছে। এরফলে যমুনা নদীতে ফেরি ও লঞ্চ সার্ভিস চালু করা যাবে। এ সময় রেলওয়ে ফেরীর মাধ্যমে এ রুটে ট্রেন চলাচল পুনরায় চালু করার উদ্যোগ নেয়া হবে বলে রেল কর্তৃপক্ষ ও নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয় সুত্রে জানা গেছে।
রেলওয়ে বিভাগ সুত্রে জানা গেছে, ১৯৩৮ সাল থেকে ২০০৪ সাল পর্যন্ত অল্প খরচে ও স্বল্প সময়ে ময়মনসিংহ, ঢাকা ও সিলেট বিভাগের ৮টিরও বেশি জেলায় যাতায়াতের জন্য গাইবান্ধা, রংপুর, দিনাজপুর, ঠাকুরগাঁও, কুড়িগ্রাম, নীলফামারী, পঞ্চগড় ও লালমনিরহাট জেলার জনগণ প্রথমে গাইবান্ধার ফুলছড়ি উপজেলার তিস্তামুখঘাট-বাহাদুরাবাদ ও পরে বালাসীঘাট-বাহাদুরাবাদ নৌরুট ব্যবহার করে যাতায়াত করতো। এতে দূরত্ব যেমন কম হতো তেমনি সময় সাশ্রয় এবং অল্প খরচে যাতায়াতের সুযোগ ছিল।
১৯৮৬ সাল থেকে দিনাজপুর-তিস্তামুখ ঘাট এবং পরবর্তীতে দিনাজপুর-বালাসীঘাট রুটে আন্তঃনগর তিস্তা এক্সপ্রেস ও একতা এক্সপ্রেসসহ অন্যান্য মেইল ট্রেন চালু ছিল। নদীতে নাব্যতা সংকটের কারণে ২০০৪ সালে বালাসীঘাট-বাহাদুরাবাদ নৌরুটে ফেরী সার্ভিস বন্ধ করে দিতে হয়।
বালাসীঘাট-ত্রিমোহিনী রেলপথ সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, এ রেলপথের অসংখ্য স্থানে কাঠের স্লিপার পঁচে নষ্ট হয়েছে বা চুরি গেছে। রেললাইনের নিচের মাটি বৃষ্টির পানিতে সরে গেছে। ট্রেন চলাচল না থাকায় মরিচা পড়ে গেছে রেললাইনে। এছাড়া বালাসীঘাট থেকে ত্রিমোহিনী জংশন রুটে অবস্থিত আনন্দবাজার ও বালাসীঘাট রেল স্টেশন ঘরসহ অন্যান্য অবকাঠামো অবসারণ করা হয়েছে। বর্তমানে বালাসীঘাট-ত্রিমোহিনী রেলপথের বিভিন্ন স্থানে রেললাইন থেকে স্লিপার এবং মাটি সরে যাওয়ায় সেগুলো ঝুলন্ত অবস্থায় রয়েছে।
এদিকে বালাসীঘাট এলাকায় বতমানে মালবাহী ওয়াগান পড়ে রয়েছে ১২টি এবং পড়ে রয়েছে কিছু লোহার যন্ত্রপাতি। রোদে-বৃষ্টিতে সেগুলো নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। এই রেলপথে রয়েছে ৯টি সেতু। সেগুলোর এখন নড়বড়ে অবস্থা। বালাসীঘাট এলাকার জয়নাল হক বলেন, রেলপথটি পুনঃরায় চালু করতে রেললাইনের অসংখ্য স্লিপার পাল্টাতে হবে। রেল ব্রিজগুলো মোরামত করতে হবে। এসব সংস্কার কাজ না করা হলে ওই পথে ওই রেল চলাচল শুরু করা যাবে না।
এব্যাপারে পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের লালমনিরহাট বিভাগের ব্যবস্থাপক মো. মোস্তাফিজার রহমান বলেন, বালাসীঘাট-বাহাদুরাবাদ নৌরুট চালু হলে আবারও দিনাজপুর-বালাসীঘাট রুটে পুনরায় ট্রেন চলাচল শুরু করা যাবে। তবে তার জন্য রেলপথ সংস্কার করতে হবে। ছবি সংযুক্ত