গত ৫ জানুয়ারির জাতীয় নির্বাচন প্রতিহত করতে বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কাছে নালিশ করেছিলেন বলে মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, “জাতীয় নির্বাচন সম্পর্কে তিনি (খালেদা জিয়া) বিদেশীদের কাছে নালিশ করে বালিশ পেয়েছেন। আর দেশবাসীর কাছে খেয়েছেন ভাঙা জুতার বাড়ি।” ৫ জানুয়ারির নির্বাচন প্রতিহত করতে না পেরে বিএনপি-জামায়াত মানুষ পুড়িয়ে মেরেছে, মসজিদে আগুন দিয়ে পবিত্র কোরআন পুড়িয়েছে বলেও অভিযোগ করেন প্রধানমন্ত্রী।
বৃহস্পতিবার বিকেলে গাজীপুরের ভাওয়াল বদরে আলম সরকারি কলেজ মাঠে মে দিবস উপলক্ষে জাতীয় শ্রমিক লীগ আয়োজিত এক জনসভায় প্রধান অতিথির ভাষণে এসব কথা বলেন তিনি।
খালেদা জিয়াকে উদ্দেশ করে শেখ হাসিনা বলেন, “উনি যা বলেন, করেন তার উল্টো। তিনি নির্বাচন নিয়ে আমেরিকার কাছে নালিশ করেছিলেন। জিএসপি বন্ধে মার্কিন পত্রিকায় আর্টিকেল লেখেন। বাংলাদেশের অগ্রগতি আগুন দিয়ে যখন থামাতে পারেন নাই, তখন বিদেশের কাছে নালিশ করেছেন।”
বিএনপির সমালোচনা করে শেখ হাসিনা বলেন, “বিএনপির কাজ মানুষের ভাগ্য নিয়ে ছিনিমিনি খেলা। তারা রাজাকারদেরও মানুষের ভাগ্য নিয়ে ছিনিমিনি খেলার সুযোগ করে দিয়েছিল। তাদের আমলে জঙ্গিবাদের দেশ হিসেবে বাংলাদেশ বিশ্বের দরবারে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। আওয়ামী লীগের আমলে বাংলাদেশ এখন উন্নয়নের রোল মডেল।”
দেশে নানা চোরাগোপ্তা হামলার জন্য বিএনপিকে দায়ী করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, “বিএনপির এক নেতা বলেছে, তারা এমন চোরাগোপ্তা আন্দোলন করবে, যাতে নাকি সরকারের পতন ঘটাবে। যাদের চুরি করার অভ্যাস, চোর চোর মন, হত্যা ও চোরাগোপ্তার হামলার রাজনীতিতে বিশ্বাস তারাই করে। এখন দেশে যে চোরাগোপ্তা হত্যাকাণ্ড হচ্ছে এর জন্য তারাই যে দায়ী এর মধ্যে আর কোনো সন্দেহ নাই।”
প্রধানমন্ত্রী তার সরকারের আমলে শ্রমিকদের কল্যাণে নেয়া বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের কথা তুলে ধরে বলেন, তার সরকার শ্রমিকদের ন্যায্য মজুরি নিশ্চিত করেছে। পোশাকশিল্পের শ্রমিকদের বাসস্থানের জন্য ভবন নির্মাণ হচ্ছে। তাদের জন্য আরো কল্যাণমূলক পদক্ষেপ নেয়া হবে বলে জানান তিনি।
তার দলের রাজনীতি খেটে খাওয়া মানুষের জন্য উল্লেখ করে আওয়ামী লীগের সভাপতি বলেন, “আমরা বাংলাদেশের মেহনতি মানুষের ভাগ্যোন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছি। আমরা ক্ষমতায় এসে বিএনপির বন্ধ করা কারখানাগুলো খুলে দিয়েছি। অথচ ন্যায্য মজুরি দাবি করায় বিএনপির সরকার শ্রমিকদের রমজান মাসে গুলি করে হত্যা করেছে।” শ্রমিকদের শিল্পের মালিকানা দেয়ার দৃষ্টান্ত আওয়ামী লীগ চালু করেছিল বলে দাবি করেন তিনি।
বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা ও সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের সমালোচনা শেখ হাসিনা বলেন, “হত্যা, খুন, ষড়যন্ত্রের রাজনীতির ফাঁকে জিয়াউর রহমান ক্ষমতা দখল করে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ধ্বংস করে। জিয়াউর রহমানই প্রথম দেশের মানুষের ভাগ্য নিয়ে ছিনিমিনি খেলা শুরু করে।”
জাতীয় শ্রমিক লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি মো. শুকুর মাহমুদের সভাপতিত্বে জনসভায় অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য দেন বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ, নৌপরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খান, কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী, মুক্তিযোদ্ধাবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক, আ.লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ, মহিলা ও শিশুবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী মেহের আফরোজ, গাজীপুর-২ আসনের সাংসদ জাহিদ আহসান, গাজীপুর-৩ আসনের সাংসদ সিমিন হোসেন ও গাজীপুর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আজমত উল্লাহ খান।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিকাল সাড়ে চারটার দিকে জনসভাস্থলে পৌঁছালে বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহম্মেদ, মুক্তিযোদ্ধাবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হকসহ গাজীপুরের সাংসদ ও আওয়ামী লীগ নেতারা তাঁকে স্বাগত জানান।