গুম-খুন প্রতিরোধে ‘রেড অ্যালার্ট’ খালেদার : যে-ই ধরতে আসবে, তাকে আটকান

image_79632_0গুম-খুন-অপহরণ প্রতিরোধে সারা দেশে চরম  সাংগঠনিক সতর্কতা (রেড অ্যালার্ট) জারি করেছেন  বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। তিনি বলেছেন, গুম-খুন-অপহরণ থেকে বাঁচার জন্য দরকার  প্রতিরোধ। আইনের বাইরে র‌্যাব-পুলিশ যে-ই আসবে, তাকেই আটকাতে হবে।

বৃহস্পতিবার বিকেলে রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জাতীয়তাবাদী শ্রমিক দল আয়োজিত মে দিবসের সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে খালেদা জিয়া এসব কথা বলেন। সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন শ্রমিক দলের সভাপতি আনোয়ার হোসেন।
বিএনপির চেয়ারপারসন বলেন, “সারা দেশে নেতাকর্মীদের একত্রে ও সতর্ক থাকার আহ্বান জানাচ্ছি। প্রস্তুত থাকার আহ্বান জানাচ্ছি। সারা দেশে সাংগঠনিক রেড অ্যালার্ট জারি করছি। গুম-খুন-অপহরণ রুখে দাঁড়াবেন। যারা গুম-অপহরণ করতে আসবে, তাদের ঘেরাও করে আটকে রাখবেন। পুলিশ, র‌্যাব হোক, কাউকেই ছাড় দেয়া হবে না। নিরাপদে লোকদের ছাড়িয়ে আনবেন এবং গুম-খুন-অপহরণকারীদের আটক করে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে তুলে দেবেন।”
খালেদা জিয়া বলেন, “নারায়ণগঞ্জ ঢাকা থেকে বেশি দূরে নয়। প্যানেল মেয়রসহ সাতজন নিখোঁজ হলো। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্বে থাকা অবস্থায়ও শেখ হাসিনা এর কিছুই করতে পারলেন না। এর দায় নিতে হবে হাসিনাকে। কারণ তিনি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।”
তিনি বলেন, “আওয়ামী লীগ যখন থেকে ক্ষমতায় এসেছে, তখন থেকেই রক্তপিপাসু। প্রথম ঘটনায় বিডিআরের ৫৭ জন সেনা অফিসারকে হত্যা করা হয়েছে। এই ষড়যন্ত্র তিনি (প্রধানমন্ত্রী) জানতেন। দ্বিতীয় হেফাজতের ঘটনা। তারা ছিল নিরীহ। কেন তাদের ওপর হামলা করা হয়েছে? আওয়ামী লীগ হলো রক্তপিপাসু সরকার। ড্রাকুলা সরকার।”
সারা দেশে গুম-অপহরণের কথা উল্লেখ করে খালেদা জিয়া বলেন, “এখন প্রতিদিন মানুষ গুম হচ্ছে। শুধু লাশ আর লাশ পাওয়া যাচ্ছে। নদীতে লাশ, জমিতে লাশ, জঙ্গলে লাশ মিলছে। এই সরকারের কাছে কারো জীবনের নিরাপত্তা নেই।” তিনি নারায়ণগঞ্জের সাতজনের অপহরণ ও হত্যার ঘটনায় সরকারকে দায়ী করেন।
সরকারের কাছে প্রশ্ন রেখে বিএনপি চেয়ারপারসন বলেন, “আমি জানতে চাই, চৌধুরী আলম, ইলিয়াস আলীসহ যারা গুম হয়েছেন, তারা কোথায়?” জনতার উদ্দেশে তিনি বলেন, “আপনারা কি মা-বোনের চোখের পানি দেখবেন না? গর্জে উঠবেন না? আপনাদের গর্জে উঠতে হবে। এদের কাছে প্রতিকার চেয়ে লাভ নেই। এদের বিরুদ্ধে গণ-প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। আমি আপনাদের নিরাপত্তার জন্য রাস্তায় নামব। আপনারা আমার সঙ্গে নামবেন তো?”
ইতিহাস তুলে বেগম জিয়া বলেন, “৭৪-৭৫ এ লাল-নীল বাহিনী দিয়ে গুম হত্যা করেছিল আওয়ামী লীগ। এখন শুরু হয়েছে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় সাদা বাহিনী দিয়ে তুলে নিয়ে যাওয়া। এসব কাজের সঙ্গে আওয়ামী লীগের লোকজন জড়িত। তাদের ইশারায় খুন, গুম, অপহরণ সংগঠিত হচ্ছে।”
দাস ও ক্রীতদাসের সংজ্ঞা দিয়ে বিএনপির চেয়ারপারসন বলেন, “দাস অন্তত প্রভুর অন্যায় কাজের প্রতিবাদ করতে পারে, কিন্তু ক্রীতদাস সেটাও পারে না। আওয়ামী লীগের সরকার ভারতের ক্রীতদাস। এরা প্রভুর কাজের প্রতিবাদ করতে পারে না।”

খালেদা জিয়া বলেন, “সীমান্তে যখন ফেলানীর লাশ ঝুলে থাকে তখন তারা (আওয়ামী লীগ) প্রতিবাদ করতে পারে না। সীমান্তের ভেতরে ঢুকে যখন বিএসএফ বাংলাদেশীদের গুলি করে মেরে ফেলে, তখন এরা প্রতিবাদ করতে না। আমাদের সীমান্তের ভেতরে এসে ধান কেটে নিয়ে যায়, তখনো প্রতিবাদ করতে পারে না।”

সরকার কথায় কথায় মিথ্যা বলে উল্লেখ করে  খালেদা জিয়া বলেন, “এই সরকার রানা প্লাজায় ক্ষতিগ্রস্ত শ্রমিকদের যে পরিমাণ ক্ষতিপূরণ দিতে চেয়েছিল, তা দেয়নি। এরা কথায় কথায় মিথ্যা বলে। তাই দেশের মানুষ এদের কথা এখন আর বিশ্বাস করে না।”

সাবেক প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, “আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে মধ্যপ্রাচ্যে মানবসম্পদ রফতানি বন্ধ হয়ে গেছে। মধ্যপ্রাচ্যে এখন আর বাংলাদেশ থেকে লোক নেয় না।”  এ অবস্থায় আওয়ামী লীগের হেদায়েত দরকার বলে উল্লেখ করে তিনি জনতার উদ্দেশে জানতে চান, “তাদের (আওয়ামী লীগ) হেদায়েত দরকার কি না বলেন? তাদের হেদায়েতের জন্য রাস্তায় নামতে হবে।”

ভূত আর জিনের ভোটে সরকার ক্ষমতায় রয়েছে মন্তব্য করে বিএনপির চেয়ারপারসন বলেন, “৫ জানুয়ারি কোনো নির্বাচন হয়নি। সেদিন ভূত আর জিন ভোট দিয়েছে।”

খালেদা জিয়া বলেন, “সাগর-রুনির খুনের পর এরা (আওয়ামী লীগ সরকার) বলেছিল, এরা কারো বেডরুমের নিরাপত্তা দিতে পারবে না। এখন তো এরা রাস্তায়ও মানুষের নিরাপত্তা দিতে পারে না। কাজেই এদের কাছে নিরাপত্তা চেয়ে লাভ নেই। এখন দরকার গণ-প্রতিরোধ।” তিনি গণ-প্রতিরোধ করতে সবাইকে রাস্তায় নামার আহ্বান জানান।
সমাবেশে খালেদা জিয়া তার সরকারের আমলে শ্রমিকদের কল্যাণে নেয়া কর্মকাণ্ডের কথা তুলে ধরেন।
জনসভায় উপস্থিত ছিলেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমেদ, মির্জা আব্বাস, নজরুল ইসলাম খান, ভাইস চেয়ারম্যান সাদেক হোসেন খোকা, সেলিমা রহমান, আবদুল্লাহ আল নোমান, যুগ্ম মহাসচিব আমানুল্লাহ আমান, যুবদলের সভাপতি সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল প্রমুখ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *