এম শরীফ ভূঞা :
ফেনীতে প্রচন্ড গরমে বেড়ে গেছে গ্রীষ্মকালীন মৌসুমী ফল তরমুজ বিক্রি। ফেনী শহরসহ সবকটি উপজেলা বাজারগুলোতে প্রচন্ড গরমের কারণে মৌসুমী ফল তরমুজ বিক্রি বেড়ে গেছে। এই সুযোগে বিক্রেতারা ক্রেতাদের কাছ থেকে বেশি দাম নিচ্ছে। ফেনী শহরের ট্রাংকরোড়ের সড়কের দুই পাশে ব্যবসায়ীরা দোকানগুলোতে সাজিয়ে রাখে বিভিন্ন সাইজের তরমুজ। আবার কোন কোন হকার বিভিন্ন হাট বাজার, বাস স্টেশন ও স্কুল কলেজের সামনে ব্যান গাড়ি করে বিক্রি করছে। কিছু কিছু জায়গায় তরমুজ কেটে কেটে ছোট পিস করে বিক্রি করা হচ্ছে। ক্রেতারা তৃষ্ণা মেটাতে দাড়িয়ে দাড়িয়ে খাচ্ছেন। পিস করা তরমুজ তৃষ্ণা মেটালেও এর থেকে বিভিন্ন রোগ জীবানুর মাধ্যমে অসুখ হওয়ার সম্ভাবনাও বেশি।
গ্রীষ্মকালীন সময়ে একটি জনপ্রিয় ফল তরমুজ। গরমে তরমুজ দেহ ও মনে শুধু প্রশান্তিই আনে না এর পুষ্টি ও ভেষজগুণ রয়েছে অনেক। প্রচুর পরিমাণে আয়রন, ভিটামিন, কার্বোহাইড্রেট, ক্যালসিয়াম, ফসফরাস ও অন্যান্য খাদ্য উপাদান রয়েছে তরমুজে। মাঘ- ফাল্গুন হচ্ছে তরমুজ চাষের সময়। তবে হাইব্রিড জাতের বীজ গোটা ফাল্গুন মাস ধরে লাগানো যায়।
চৈত্র মাসের শেষের দিকে গরমের তীব্রতাও বেড়ে গেছে। গত ২ সপ্তাহের গরমে মানুষ দিশেহারা হয়ে পড়েছে। শহরের ট্রাংক রোড়সহ ব্যস্ততম এলাকায় প্রায় সব জায়গাতেই তরমুজ বিক্রি হচ্ছে। প্রতিটি তরমুজ বড়-ছোট সাইজ অনুযায়ী বিক্রি হচ্ছে আশি থেকে দুইশত টাকা করে। শহরের ট্রাংকরোড় সহ বিভিন্ন এলাকায় প্রচন্ড তাপদাহে তরমুজ বিক্রি বেড়ে গেছে। ফেনীতে খুচরা বিক্রির পাশাপাশি পাইকারীও বিক্রি করেন কয়েকজন ব্যবসায়ী। প্রতিদিনই তরমুজ ব্যবসায়ীরা হাজার হাজার টাকার তরমুজ বিক্রি করছে। এ দিকে ফেনী রেলওয়ে ষ্টেশনে ভ্রাম্যমান তরমুজ বিক্রেতারা ষ্টেশনে ও ট্রেনে তরমুজ বিক্রি করছেন। গরমে অতিষ্ঠ হয়ে পথচারী ও ট্রেন যাত্রীরা তৃষ্ণা নিবারণের জন্য তরমুজ ক্রয় করে খাচ্ছেন। প্রায় এক সপ্তাহ ধরে হঠাৎ করে গরম বেড়ে যাওয়ায় ফেনীতে তরমুজের বাজার জমমজমাট হয়ে উঠেছে। ক্রেতারা ও ভিড় করছে ওই সব দোকান গুলোতে। বাজার ঘুরে দেখা যায়, সারি সারি করে সাজিয়ে রেখে তরমুজ বিক্রি করছেন ব্যবসায়ীরা। আনোয়ার হোসেন নামে একজন ক্রেতার সাথে আলাপকালে তিনি জানান, অন্যবারের তুলনায় এবার তরমুজের দাম বেশি। একটি মাঝারি সাইজের তরমুজ কিনেছি ১৩০ টাকা দিয়ে। তরমুজ ব্যবসায়ী জামাল মিয়া জানায়, গরমের কারণে তরমুজ বিক্রি বেড়ে গেছে।
ফলের জগতে বৃহৎ আকৃতির ফল তরমুজ। মানবজীবনে এর লাভজনক ভূমিকা রয়েছে প্রচুর। অসহ্য গরমে ঘেমে স্নান হয়ে অফিস থেকে বাডি ফেরার পর এক ফালি রসাল তরমুজ হলে মন্দ হয় না। আর সেটা যদি ফ্রিজ থেকে বের করা ঠান্ডা তরমুজ হয় তাহলে তো কথাই নেই। অবশ্য বাড়িতে যাওয়ার অপেক্ষা না করে অনেকে তো রাস্তায় দাঁডিয়েই তরমুজ খেয়ে নেন। তরমুজকে কেটে কেটে ছোট পিছ করে আলাদা আলাদা বিক্রি করা হয়। ফেনী রাজাজীর দিঘীর পাড়ে এ ধরনের বিক্রেতাদের দেখা যায়। তরমুজের ওজনের প্রায় শতকরা ৯৩ ভাগই পানি। পানির পরিমাণ বেশি হওয়ায় তরমুজ জলশূন্যতা দূর করে, অতিরিক্ত গরমে শরীর থেকে যে জরুরি খনিজ লবণ বের হয়ে যায়, তা পূরণ করে দেয়। এতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণ পটাসিয়াম। পটাসিয়াম উচ্চ রক্তচাপ হতে বাধা দেয়। অন্যদিকে দেহে অম্ল ও ক্ষারের সাম্যবস্থা বজায় থাকে, অতিরিক্ত গরমে শরীরে জ্বালা পোড়ানির সমস্যা দূর করে। ত্বকের প্রতিটি বিন্দুতে জল পৌঁছে দেয় বলে তরমুজ নিয়মিত খেলে ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়ে। প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ‘এ’ থাকে তরমুজে। ভিটামিন ‘এ’ চোখের জন্য যথেষ্ট উপকারী। গর্ভবতী ও স্তন্যদানকারী মায়েরা নিয়মিত তরমুজ খেলে সন্তানদের রাতকানা, চোখ ওঠা ইত্যাদি রোগ থেকে মুক্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। অল্প পরিমাণে চিনি থাকার জন্য ডায়াবেটিস রোগীরাও তরমুজ খেতে পারেন।