বেল আমাদের দেশের একটি পরিচিত ফল। বেল মুখের ব্রণ সারাতে সাহায্য করে। গরমের এই দিনে এক গ্লাস বেলের শরবত শরীর ও মনে প্রশান্তি জোগায়। বেল পেটের নানা রকম রোগ সারাতে জাদুর মতো কাজ করে। কাঁচা বেল ডায়রিয়া ও আমাশয় রোগে ধন্বন্তরী ওষুধ হিসেবে বিবেচিত। বেলে আছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি, ভিটামিন এ, ক্যালসিয়াম, ফসফরাস ও পটাসিয়াম। হিন্দুধর্মে শিবপূজায় বেলের পাতা ব্যবহার করা হয়, তাই তাদের কাছে বেল শ্রীফল নামে পরিচিত। তারা বেলকাঠও পবিত্রজ্ঞান করে বলে কখনো বেলকাঠ পুড়িয়ে রান্না করে না।
বেলের জন্ম ভারতবর্ষে। বেল লেবু পরিবারের সদস্য। একে ইংরেজিতে বলা হয় Wood Apple । এর ওপরের খোসা কাঠের মতো শক্ত বলে এই নাম। সংস্কৃত নাম বিল্ব। এর বৈজ্ঞানিক নাম Aegle marmelos Correa (syn. Feronia pellucida Roth, Crataeva marmelos L)।
বড় বেলগাছ লম্বায় ১০ থেকে ১৬ মিটার পর্যন্ত হয়। বেলগাছ ছোট থাকাকালীন এর গায়ে প্রচুর কাঁটা থাকে, গাছ বড় হলে কাঁটা কমে যায়। বেলের ফুল হালকা সবুজ থেকে সাদা রঙের হয়ে থাকে। ফলের ভেতরের শাঁস ৮-১৫ কোয়া বা খণ্ডে বিভক্ত, প্রতিটি ভাগে চটচটে আঠার সঙ্গে অনেক বীজ লেগে থাকে। বেল কাঁচা অবস্থায় সবুজ বর্ণের থাকে, আর পেকে গেলে হলদে রঙ ধারণ করে। কচি বেল খাওয়াই উত্তম। তবে পাকা বেলও বেশ উপকারী।
প্রতি ১০০ গ্রাম বেলের শাঁসে পাওয়া যায় –
পানি ৫৪.৯৬-৬১.৫ গ্রাম
প্রোটিন ১.৮-২.৬২ গ্রাম
স্নেহ পদার্থ ০.২-০.৩৯ গ্রাম
শর্করা ২৮.১১- ৩১.৮ গ্রাম
ক্যারোটিন ৫৫ মিলি গ্রাম
থায়ামিন ০.১৩ মিলিগ্রাম
রিবোফ্লেবীন ১.১৯ মিলিগ্রাম
এসকরবিক এসিড ৮-৬০ মিলিগ্রাম
নিয়াসিন ১.১ মিলিগ্রাম
টারটারিক এসিড ২.১১ মিলিগ্রাম
বেলের বহুমুখী উপকারিতা
বেলের হাজার গুণ। কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ উপকারিতার কথা তুলে ধরা হলো:
• বেল পেটের নানা অসুখ সারাতে দারুণ কার্যাকর। দীর্ঘমেয়াদি আমাশয়-ডায়রিয়া রোগে কাঁচা বেল নিয়মিত খেলে দ্রুত আরোগ্য লাভ করা সম্ভব।
• বেল পেট ঠান্ডা রাখে। গরমের সময় পরিশ্রমের পর বেলের শরবত খেলে ক্লান্তিভাব দূর হয় ।
• বেলের ভিটামিন ‘এ’ চোখের বাহ্যিক ও অভ্যন্তরীণ অঙ্গগুলোর পুষ্টি জোগায়। ফলে চোখের বিভিন্ন রোগ থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।
• বেলের শাঁস পিচ্ছিল বলে এই ফল পাকস্থলীতে উপকারী পরিবেশ সৃষ্টি করে, খাবার সঠিকভাবে হজম করতে সাহায্য করে। ফলে কোষ্ঠকাঠিন্য দূর হয় ।
• বেলে থাকে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার বা আঁশ, যা মুখের ব্রণ সারাতে সাহায্য করে। যাদের পাইলস আছে, তাদের জন্য নিয়মিত বেল খাওয়া উপকারী।
• বেলে আছে ভিটামিন সি। ভিটামিন সি গ্রীষ্মকালীন বহু রোগবালাই দূরে রাখে।
• জন্ডিসের সময় পাকা বেল গোলমরিচের সঙ্গে শরবত করে খেলে উপকার পাওয়া যায়।
• শিশুদের কানের ব্যথা ও ইনফেকশন সারাতে বেলপাতার জুড়ি নেই। বেলপাতা ও তিলের তেল জ্বাল দিয়ে ওই তেল ড্রপার দিয়ে কানে দিলে ব্যথা সেরে যায় ।
• নিয়মিত বেল খেলে কোলন ক্যানসার হওয়ার আশঙ্কা কমে।
• সর্দি হলে বেলপাতার রস এক চামচ খেলে সর্দি ও জ্বরভাব কেটে যায় ।
• কচি বেল টুকরা করে কেটে রোদে শুকিয়ে নিলে তাকে বেলশুট বলে। যাদের আলসার আছে, তারা বেলশুটের সঙ্গে পরিমাণমতো বার্লি মিশিয়ে রান্না করে নিয়মিত খেলে আলসার দ্রুত সেরে যায়।