ইরাকে ক্রমবর্ধমান রাজনৈতিক উত্তেজনা ও সংঘাতের কারণে সরবরাহ বিঘ্নিত হতে পারে, এমন আশঙ্কায় আন্তর্জাতিক বাজারে অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের দাম বেড়ে গেছে। এক সপ্তাহেই ব্যারেলপ্রতি দাম ৪ শতাংশের বেশি বেড়েছে৷
সপ্তাহের শেষ কেনাবেচার দিন শুক্রবার প্রতি ব্যারেলের দাম বেড়ে ১১৪ মার্কিন ডলারে উঠেছে; যা বাংলাদেশের প্রায় নয় হাজার টাকার সমান (প্রতি ডলার ৭৯ টাকা হিসাবে)। বিগত নয় মাসের মাসের মধ্যে এটিই হলো বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের ব্যারেলপ্রতি সর্বোচ্চ দাম।
এদিকে ইরাক পরিস্থিতি ভয়াবহর দিকে মোড় নেওয়ায় ইরাক সরকারকে সামরিক সহায়তা আশ্বাস দিয়ে যুক্তরাষ্ট্র এরই মধ্যে যুদ্ধবিমানবাহী একটি রণতির পাঠিয়েছে আরব উপসাগরে। অন্যদিকে প্রতিবেশী দেশে হস্তক্ষেপের বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রকে সতর্ক করে দিয়েছে তাদের ‘শত্রুখ্যাত’ ইরান৷
সচরাচর জ্বালানি তেল সরবরাহকারী দেশগুলোতে রাজনৈতিক উত্তেজনা বা অনিশ্চয়তা দেখা দিলেই আন্তর্জাতিক বাজারে পণ্যটির দাম বেড়ে যায়৷ এর মধ্যে শীর্ষস্থানীয় সরবরাহকারী দেশগুলোতে কোনো সংকট তৈরি হলে পণ্যটির দামে প্রভাবের মাত্রা বৃদ্ধি পায়৷ সে অনুযায়ী বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম সরবরাহকারী ইরাকে রাজনৈতিক উত্তেজনা দীর্ঘায়িত হলে তাতে বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দাম আরও বাড়তে পারে৷ এতে বিশেষ করে বৈশ্বিক শিল্প উৎপাদন ও পরিবহন খাতে ব্যয় বৃদ্ধি পেয়ে মূল্যস্ফীতিকে ঊর্ধ্বমুখী করে তোলে৷ সব মিলিয়ে অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়ে।
আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বাড়লে বিভিন্ন দেশের স্থানীয় বাজারেও পণ্যটির দাম বাড়ানো হয়৷ তা না হলে জ্বালানি তেল বিক্রিতে সরকারের ওপর ভর্তুকির চাপ বেড়ে যায়। তাই তো ভারতে নরেন্দ্র মোিদর নেতৃত্বাধীন নতুন সরকারও ক্ষমতায় আসতে না আসতেই ডিজেলের দাম লিটারপ্রতি ৫০ পয়সা করে বাড়িয়েছে৷
এদিকে তেল রপ্তানিকারক দেশগুলোর সংগঠন ওপেক গত বৃহস্পতিবার বলেছে, বৈশ্বিক চাহিদা মেটাতে হলে অতিরিক্ত পরিমাণে জ্বালানি তেল উত্তোলন করতে হবে।
ইসলামিক স্টেট ইন ইরাক অ্যান্ড দ্য লেভান্ট সুন্নি (আইএসআইএস) নামে সুন্নি যোদ্ধাদের একটি সংগঠনের অব্যাহত আক্রমণ ও দখলের কারণে ইরাকে সংকট চলছে৷ সুন্নি যোদ্ধারা ইতিপূর্বে ফালুজা, রামাজি ও তিকরিত থেকে সরকারি বাহিনীকে হটিয়ে দিয়েছে৷ তারা গত বৃহস্পতিবার কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ মসুল, জালুলাহ, সাইয়াদিয়াহ শহর দুটিও অবরোধ করে রেখেছে। তারা এখন শিয়া সম্প্রদায় অধ্যুষিত রাজধানী বাগদাদমুখী৷ এ অবস্থায় সুন্নিদের বিরুদ্ধে পাল্টা আক্রমণ চালানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে সরকারি নিরাপত্তা বাহিনী৷ এ ছাড়া শিয়া নেতা আয়াতুল্লাহ সায়িদ আলী সিস্তানি সুন্নি যোদ্ধাদের রুখতে জনগণকেও অস্ত্র ধরার আহ্বান জানিয়েছেন৷ তাঁর ডাকে সাড়া দিয়ে হাজার হাজার লোক শিয়া মিলিশিয়া বাহিনীতে যোগ দিচ্ছে।
ধারণা করা হচ্ছে, সব মিলিয়ে ইরাকে শিয়া ও সুন্নি সংঘাত মধ্যপ্রাচ্যের অন্যান্য দেশেও ছড়িয়ে পড়তে পারে৷ সেটি হলে তেল সরবরাহ যে মারাত্মকভাবে বিঘ্নিত হবে তা বলার অপেক্ষা রাখে না৷
সূত্র: বিবিসি, এএফপি ও ইকোনমিক টাইমস৷