জাহিদুর রহমান তারিকঃ-ঝিনাইদহ প্রতিনিধিঃ-
জমি বিক্রির ৭৬ হাজার টাকা, গর“-ছাগল ও জমির লিজের টাকা শেষ। তবুও সু¯’ হননি। এখন সেই রোগ সাড়ছে বিনামুল্যে। কোনো খরচ না করেই সু¯’ হ”িছ আমি। তাহলে আমার জমি, গর“ আর ছাগল বিক্রির টাকা নিয়ে কি চিকিৎসা দিলো ডাক্তারা। এমন আক্ষেপ করে কথা বলছিলেন ঝিনাইদহ সদর উপজেলার মধুপুর গ্রামের বিশারত। ঝিনাইদহ শহরের একটি চায়ের সাথে কথা হয় তার।তিনি বলেন , গত বছর হঠাৎ করেই ঠান্ডা ও জ্বর দেখা দিল। গ্রামের বাজারে চিকিৎসকের কাছে গেলাম। চিকিৎসক নানা ধরনের ঔষুধ দিলো। খেয়ে কোনো কাজ হয়নি। সে জানালো এখন টাইফয়েড হয়ে গেছে। ভালো ডাক্তারের নিকট যেতে হবে। একে একে ঝিনাইদহের নিউ ইসলামি প্রাইভেট হাসপাতাল এন্ড ডায়াগনোস্টিক, ডেলটাল্যাব ডায়াগনোস্টিক, নোভা এক্সরে এন্ড ডায়াগনোস্টিক, রয়েল ডায়াগনোস্টিক, হাসান ক্লিনিক এন্ড ল্যাব কেয়ার, ক্রিসেন্ট ডায়াগনোস্টিকসহ বিভিন্ন¯’ানে চিকিৎসা নিয়ে কোন লাভ হয়নি।আর এ সকল ¯’ানে কর্মরত ডাক্তার রোগ নির্ণয় করে নামি দামি এন্টিবায়োটিকসহ নানা ওষুধের চিকিৎসা দিয়েছে। আর এজন্য হালের গর“, জমি বন্ধক এমনকি জমি বিক্রি করেও কোনো প্রকার রোগ নির্ণয় বা চিকিৎসা হয়নি।তিনি আরও বলেন, মরতে বসে ছিলাম এক পর্যায়ে সবাই যেন আমার মৃত্যুর জন্য অপেক্ষা করতে লাগল। নিজের জীবনের আশাও ছেড়ে দিয়ে ছিলাম। কিš‘ একদিন আমাকে দেখতে আসলেন পাশেই ভাড়া বাসায় বসবাস করা ব্র্যাকের যক্ষা প্রতিরোধের কর্মকর্তা। তিনি আমার এমন অব¯’ার কথা শুনলেন এবং যক্ষা হয়েছে কিনা তার আলামত পরীক্ষা করতে বললেন। যক্ষা ধরা পড়লো কিš‘ ততো দিনে জমি বিক্রির ৭৬ হাজার টাকাসহ গর“, ছাগল ও জমি লিজের টাকা শেষ। কোনো চিকিৎসা হয়নি। এখন বিনা পয়সায় ব্র্যাকের মাধ্যমে চিকিৎসা নি”িছ। আবার স্বাভাবিক জীবন যাপনের দিকে ফিরে যা”িছ।এমনই অসংখ্য রোগী দিনের পর দিন প্রতারিত হ”েছস ঝিনাইদহের বিভিন্ন প্রাইভেট হাসপাতাল ও ডায়াগনোস্টিক সেন্টারে।সুত্র মতে, ঝিনাইদহ জেলার ৬টি উপজেলার হাট বাজারগুলোতে ১৫৫টি প্রাইভেট হাসপাতাল এবং ডায়াগনোস্টিক সেন্টার গড়ে উঠেছে।এর মধ্যে সদর উপজেলায় ৫৮টি, শৈলকুপা উপজেলায় ১৭টি, কালীগঞ্জ উপজেলায় ২৪টি, মহেশপুর উপজেলায় ২৮টি, কোঁটচাদপুর উপজেলায় ১৬টি, হরিনাকুন্ডু উপজেলায় ১২টি প্রাইভেট হাসপাতাল এবং ডায়াগনোস্টিকসেন্টার রয়েছে।এসকল প্রাইভেট হাসপাতাল এবং ডায়াগনোস্টিক সেন্টারে সেবার নামে রোগীর নিকট থেকে হাতিয়ে নেয়া টাকা অধিকাংশই তিন ভাগে ভাগ হ”েছ। যার সিংহভাগ টাকাই যা”েছ প্রাইভেট হাসপাতালের মালিক এবং ডাক্তারের নিকট আর একটি অংশ যা”েছ গ্রামের পল্লী চিকিৎসক নামক প্রাইভেট হাসপাতাল এবং ডায়াগনোস্টিকের দালালের হাতে।
গ্রামের কথিত পল্লী চিকিৎসক নামক প্রাইভেট হাসপাতাল এবং ডায়াগনোস্টিক সেন্টারের দালালদের সাথে কথা বলে এ তথ্য পাওয়া গেছে। তবে তারা প্রাইভেট হাসপাতাল এবং ডায়াগনোস্টিকের দালাল বলে স্বীকার করতে নারাজ।সদর উপজেলার আনোয়ার হোসেন নামের এক দালাল তার গ্রামের নাম প্রকাশ না করা শর্তে জাগো নিউজকে বলেন, গ্রামের স্কুলে ২য়/৩য় শ্রেণি পর্যন্ত লেখাপড়া করেছি। মাঠেও ভালো কাজ করতে পারিনা। সংসার হয়েছে, ছেলেমেয়ে আছে, দার“ণ অভাব কিš‘ একদিন কোটচাঁদপুরের এক প্রাইভেট হাসপাতাল এবং ডায়াগনোস্টিকের ম্যানেজারের সাথে কথা হয়। তিনি গ্রাম থেকে তার প্রাইভেট হাসপাতালে রোগী পাঠানোর কথা জানালেন। রোগী পাঠালে একটা কমিশনের ব্যব¯’া করে দেবেন বলে জানান। এক পর্যায়ে চলাচল করার জন্য একটা মোটসাইকেলও কিস্তিতে তুলে দিলেন। সেই থেকে ঝিনাইদহের বিভিন্ন¯’ান থেকে রোগী পাঠানো শুর“।তিনি বলেন, একবার ভেবেছিলাম এ কাজ আর করবো না, কিš‘ এখন মাস শেষ হলেই মোটসাইকেলের কিস্তির জ্বালা। না দিলে শোর“ম মালিক গাড়ি নিয়ে যাবে। কোনো উপাই নেই, এখনো বাধ্য হয়েই রোগী পাঠানোর কাজ করতে হ”েছ। এখন আর লোকজনে আগের মতো চিকিৎসার কথা বিশ্বাস করতে চাইনা। কিš‘ ছাড় নেই, গ্রামে যে সকল রোগী দীর্ঘদিন ধরে জটিল রোগে ভুগছেন তারা চিকিৎসার জন্য যেকোনো ¯’ানে যেতে বাধ্য। তবে আমি যে শুধু কমিশনই খা”িছ তাতো নয়। কমবেশি মানুষ উপকার তো পা”েছই।এ বিষয়ে ঝিনাইদহের সিভিল সার্জন ডা. আব্দুস সালাম বলেন, অনিয়মের বির“দ্ধে ব্যব¯’া নেয়াটা একটা চলমান প্রক্রিয়া। যেখানে সারা বছরই দেখভাল করা হয়। যে সকল মালিক নিয়ম মানতে চাইনা তদন্ত করে তাদের প্রয়োজনীয় ব্যব¯’া গ্রহণ করা হয়। এছাড়া ভ্রাম্যমাণ টিমের মাধ্যমে ব্যব¯’া গ্রহণ করা হয়। অনেক সময় প্রতিষ্ঠানকে সিলগালা করেও দেয়া হয়।