ভারতে তিন সন্তানের এক মা’র নেশা হলো চুল খাওয়া। মাত্র নয় বছর বয়স থেকে তিনি চুল খাওয়া শুরু করেন। এখন তার বয়স ৩১ বছর। এত বছর ধরে যে চুল খেয়েছেন তা পাকস্থলি ও পরিপাকতন্ত্রের অন্যান্য অংশে জমে বিশাল এক কুন্ডলির সৃষ্টি করেছে। ফলে তিনি আর কিছুই খেতে পারেন না। এমনকি পানিও পান করতে পারেন না। কিছু মুখে দিয়ে গেলার সঙ্গে সঙ্গে শুরু হয় বমি। সঙ্গে পেটে প্রচন্ড ব্যথা। এ অবস্থায় তাকে উত্তর ভারতের একটি হাসপাতালে নেয়া হয়। চিকিৎসকরা তার পরীক্ষা করে তো চোখ আকাশে ওঠার অবস্থা। তার পাকস্থলিতে জমে আছে চুলের বিশাল এক স্তূপ। সঙ্গে সঙ্গে তারা অপারেশন করলেন। পেট থেকে বেরিয়ে এলো আধা স্টোন বা তিন কেজি ১৭ গ্রাম ওজনেরও বেশি চুলের কুন্ডলি। চিকিৎসকরা যখন ওই মাকে চুল খাওয়ার কথা জিজ্ঞাসা করেন তিনি প্রথমে তা অস্বীকার করেন। তার অপারেশন করেন ড. হরদীপ সিং (৩০)। তিনি বলেন, আমরা তার কাছে চুল খাওয়ার অভ্যাসের কথা জিজ্ঞাসা করলাম। তিনি এমন কথা অস্বীকার করেন। আমরা তার আলট্রাসাউন্ড করে দেখতে পেলাম তার পাকস্থলিতে বিশাল একটি তৃতীয় বস্তুর উপস্থিতি।
গত শুক্রবার তার অপারেশন করা হয়েছে। বেরিয়ে এসেছে চুলের ওই কুন্ডলি। এরপরই ওই নারী স্বীকার করেছেন চুল খাওয়ার কথা। বলেছেন, তার বয়স যখন ৯ বছর তখন থেকেই তিনি চুল খাওয়া শুরু করেছেন। ড. হরদীপ বলেন, তার পাকস্থলি ও নাড়িভুড়িতে সয়লাব হয়ে ছিল চুল। ভরে গিয়েছিল পাকস্থলি ও খাবার পরিবহন হওয়ার সব পথ। এ জন্য তিনি কোন খাবার খেতে পারতেন না। এমন কি পানিও না। কারণ, খাবার বা পানি হজম হওয়ার কোন উপায় ছিল না ওই চুলের কারণে। এ জন্যই তিনি বমি করতেন। ড. হরদীপ বলেছেন, এমন ঘটনা তিনি এর আগে কখনও দেখেন নি। তার ভাষায়, ওই চুলের কুন্ডলির দৈর্ঘ্য ৪০ সেন্টিমিটার। এটা বের করার পর ওই নারী এখন স্বাভাবিকভাবে খাবার খাচ্ছেন। তিনি ভাল আছেন। তার পেটের সেলাই খুলে দেয়ার পরই তিনি বাসায় ফিরতে পারবেন। যেহেতু মায়ের মধ্যে চুল খাওয়ার মতো অভ্যাস আছে তাই এখন তার ছেলেমেয়ের মধ্যে সেই অভ্যাস সংক্রমিত হয়েছে কিনা তা যাচাই করে দেখা দরকার। এরই মধ্যে তার এক মেয়ে সিমেন্ট খাওয়ার কথা স্বীকার করেছে। আমরা তারও কিছু পরীক্ষা করবো। এই যে অভ্যাস একে চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় বলা হয় রাপুনজেল সিনড্রোম। ড. হরদীপ বলেন, কিশোর বয়সে মেয়েদের মধ্যে নানা হতাশা থেকে এমনটা দেখা যেতে পারে। এ সময় কেউ চক খায়। কেউ খায় সিমেন্ট। কেউ খায় পাথর। আবার কেউ পাটও খায়। এমন অভ্যাস থাকলে অবিলম্বে তার চিকিৎসা করানো দরকার। যদি তা করা না হয় তাহলে তা প্রাণঘাতী হতে পারে। গত সপ্তাহে বৃটিশ এক মা অন্তঃসত্ত্বা অবস্থায় ইট চেটে খাওয়ার কথা স্বীকার করেছেন।