বিশিষ্ট হারবাল গবেষক ও চিকিৎসক
ডা. আলমগীর মতি, বিএইচএমএস (ঢা.বি.)
নাম : কালো হলুদ
আয়ুর্বেদিক নাম : কালি হলদী/রজনি নিশা/নিশি/রাতি
ইউনানী নাম : নাদওয়ার আসওয়াদ
ইংরেজী নাম : Black Turmeric/Black Redoary
বৈজ্ঞানিক নাম : Curcuma Casia
পরিবার :Zingiberaceae
কালো হলুদ বা ব্ল্যাক টারমারিক জিনজিবারেসি গোত্রের এক ধরনের কন্দ জাতীয় গাছ। এই গাছটি হলুদের পাতার রঙ অনেকটা কালচে গভীর নীল রং হবার কারণে পাতার রং অনেকটা কালচে বর্ণের হয়। কন্দের রংও অতি বেগুনি রঙের কারণে কালো হয়। পশ্চিম বঙ্গের হিন্দু ধর্মের লোকেরা কালী পুজা সম্পাদন করার জন্য এই কালো হলুদের কন্দ ব্যবহৃত হয়। উত্তর-পূর্ব ভারত, বাংলাদেশ, বার্মাসহ দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার পাহাড়ী অঞ্চলসমূহ এই কালো হলুদের চাষ করা হয়ে থাকে।
রাসায়নিক উপাদান
কালো হলুদের প্রধান রাসায়নিক উপাদান হলো উদ্বায়ী তেল। কালো হলুদের উদ্বায়ী তেলের মধ্যে প্রায় ৩০টি রাসায়নিক উপাদান চিহ্নিত করা হয়েছে। কালো হলুদের উদ্বায়ী তেলে রয়েছে ক্যাম্ফর ২৮.৩%, আর টারমেরন ১২.৩%, জেড অসিমেন ৮.২%, আর-কারকিউমিন ৬.৮%, ১.৮%-সিনিওল ৫.৩%, ইলেমেন ৪.৮%, বোরনেওল ৪.৪%, বর্ণাইল এসিটেট ৩.৩%, কারকিউমিন ২.৮২% ইত্যাদি প্রধান। এছাড়া কালো হলুদে আছে, টারপিনয়েড, এলকালয়েড, স্টেরয়েড, প্যানিন, পলিফেনল, লিনালোন, অসেমিন, জিনজিবারল, আলফা-বরনেল ইত্যাদি।
কার্যকারিতাব্যথানাশক হিসেবে
গবেষক কর্মকার ও তার গবেষক দল গবেষণা করে প্রমাণ করেন কালো হলুদের নির্যাস ১০০ মি. গ্রা./কেজি হারে সেবন করলে তা ব্যথা নাশক হিসেবে কাজ করে।
এন্টিঅক্সিডেন্ট হিসেবে
সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা গেছে কালো হলুদের নির্যাসে প্রচুর পরিমাণ কারকিউমিন ও পলিফেনল থাকার কারণে এটি অত্যন্ত কার্যকর এন্টিঅক্সিডেন্ট হিসেবে কাজ করে।
জীবাণুনাশক হিসেবে
সাম্প্রতিক এক গবেষণায় দেখা গেছে কালো হলুদে বিদ্যমান উদ্বায়ী তেল বি-সাবটাইলিস নামক ব্যাক্টেরিয়ার বিরুদ্ধে অত্যন্ত কার্যকর ভূমিকা পালন করে।
মাংসপেশির সংকোচন প্রতিরোধে
গবেষক অরুলমুঝি ও তার গবেষক দল গবেষণা করে দেখেন যে, কালো হলুদের মিথানলিক নির্যাস সেবন করলে মাংসপেশির সংকোচন প্রতিরোধ হয়।
স্নায়ু উদ্দীপক ও অনিদ্রা দূরকারক হিসেবে গবেষক কর্মকার ও তার গবেষক দল গবেষণা করে প্রমাণ করেন যে, কালো হলুদের নির্যাস স্নায়ু উদ্দীপক ও স্ট্রেস দূর করতে সহায়তা করে। গবেষণায় দেখা যায় কালো হলুদের নির্যাস ৫০ মি. গ্রা. বা ১০০ মি. গ্রাম / কেজি হারে সেবন করলে অনিদ্রা দূর হয় এবং নিদ্রাহীনতা জনিত স্ট্রেস দূর হয়।
আলসার প্রতিরোধে
গবেষক স্বর্ণা মনি ও তার গবেষক দল গবেষণা করে দেখেন যে, কারকিউমিন সমৃদ্ধ কালো হলুদের নির্যাস গ্যাস্ট্রিক আলসার প্রতিরোধে অত্যন্ত কার্যকর ভূমিকা পালন করে।
প্রদাহ দূর করতে
গবেষণায় দেখা গেছে কালো হলুদের নির্যাস ১০০ মি. গ্রা./কেজি হারে সেবন করলে প্রদাহ দূর হয়।ক্যান্সার দূর করতে কালো হলুদের তেলে বিদ্যমান কারকিউমিন কোলন ক্যান্সার, ত্বকের ক্যান্সার, ব্লাড ক্যান্সার প্রতিরোধে সহায়তা করে।
এছাড়া কালো আদার নির্যাস শ্বাসকষ্ট, পাইলস, কুষ্ঠ, ঘা, দাঁতব্যথা, সাপের কামড়ে, জ্বর, আমাশয়, কৃমি ও খিচুনি প্রতিরোধে ব্যবহৃত হয়।
DOS : কালো হলুদের সাথে অন্ত্রের সাদৃশ্য থাকায় আন্ত্রিক সমস্যা দূর করতে কালো হলুদ অত্যন্ত
কার্যকর।