কৃষিতে বিপ্লব আনতে অর্গানিক মডার্ণ ভার্মিকম্পোষ্ট
(দ্বিমুখী বর্জখেকো লাল কেঁচো থেকে উৎপাদিত সার)
বিশিষ্ট হারবাল গবেষক ও চিকিৎসক ডা. আলমগীর মতি, বিএইচএমএস (ঢা.বি.)
কৃষি অধিদপ্তরের মৃত্তিকা গবেষণায় বার বার উঠে এসেছে যে, আশঙ্কাজনক হারে প্রাকৃতিক লাঙ্গল খ্যাত কেঁচো কমে যাওয়ায় হুমকির মুখে পড়েছে কৃষি উৎপাদন ব্যবস্থা। এতে ফসল উৎপাদনে মারাত্বক নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে।
ঝুরঝুরে আদর্শ মাটি ভাল ফসলের প্রধান শর্ত। আর এই ঝুরঝুরে মাটি তৈরিতে কেঁচোর রয়েছে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা। গবেষণা মতে, প্রতি শতাংশ জমিতে প্রায় ৪৫০০ কেঁচো বাস করে। এসব কেঁচো জমিতে যে বিষ্ঠা ত্যাগ করে তা ঝুরঝুরে জমি গঠনের উত্তম জৈব সার।
অসতর্ক ও অনিয়ন্ত্রিতভাবে জমিতে রাসায়নিক সার ও কীটনাশক ব্যবহারের কারণে কেঁচো বংশ বৃদ্ধির ও বসবাসের পরিবেশ হারাচ্ছে এবং জমিতে কেঁচো কমে গেছে। ফলে জমি উর্বরতা হারিয়েছে ও ফসল উৎপাদনে এর প্রভাব পড়েছে। এ থেকে পরিত্রাণ পেতে কেঁচোই পথ দেখিয়েছে। কেঁচোকে কালচার করে সংখ্যা বৃদ্ধি করা ও কেঁচোকে কাজে লাগিয়ে গুণগত মানসম্পন্ন জৈব সার উৎপাদন করে জমির উর্বরতা ফিরিয়ে আনা সম্ভব। এমন এক সার উৎপাদন করেছে মডার্ণ হারবাল গ্রুপ। যার নামকারণ করা হয়েছে মডার্ণ অর্গানিক ভার্মিকম্পোষ্ট।
মডার্ণ ভার্মিকম্পোষ্ট উৎপাদনে লাল কেঁচো ঃ
কেঁচো নানা প্রজাতির হয়ে থাকে। তম্মধ্যে মডার্ণ ভার্মিকম্পোষ্ট উৎপাদনে ব্যবহৃত কেঁচো লাল দ্বিমুখী।
এই কেঁচোর প্রজনন ক্ষমতা বেশি ও খাদ্য গ্রহণ ও জৈব সার উৎপাদনের পরিমাণও বেশি। রান্নাঘরের বর্জ, হোটেল বর্জ, লতাপাতা, কলা, কমলা ইত্যাদি ফলের খোসা শাকসবজীর উচ্ছিষ্ট ইত্যাদি খেয়ে এসব কেঁচো দ্রুত বংশ বৃদ্ধি ও অধিক পরিমাণে জৈব সার উৎপাদনে পারদর্শী। গ্রাম বাংলায় কলা গাছের শিকড়ের ফাঁকে এই কেঁচো পাওয়া যায়।
ভার্মিকম্পোষ্টে থাকা উপাদান ঃ
নাইট্রোজেন-১.৫-২.৫%
ফসফরাস-০.৯-১.৭%
পাটাশ-১.৫-২.৪%
ক্যালসিয়াম-০.৫-১.০%
ম্যাগনেশিয়াম-০.২-০.৩%
সালফার-০.৪-০.৫%
ভার্মিকম্পোস্টের উপকারিতা :
মাটি :
* মাটিতে বাতাস চলাচল বৃদ্ধি করে, অক্সিজেনের আধিক্য বাড়িয়ে দেয়।
* মাইক্রো অর্গানিজম উপকারী ব্যাকটেরিয়া বা পজেটিভ গুড ব্যাকটেরিয়া বৃদ্ধি করে
* কীট নিক্ষেপণ কার্যক্রম ১০-২০ গুণ বৃদ্ধি পায়
* মাটিতে থাকা গভীর গর্তকারী কেঁচোকে আকৃষ্ট করে
* মাটির পানি ধারণ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে
* হিউমিক এসিড থাকায় চঐ এর ভারসাম্য রক্ষা করে
* পুষ্টির রিসাইক্লিন বা পুনবায় ব্যবহারযোগ্যতা উন্নত করে।
চারার বৃদ্ধি :
* মাটিতে মাইক্রো অর্গানিজম বা উপকারী ব্যাকটেরিয়া সমৃদ্ধ করে। তাই চারার বৃদ্ধি দ্রুত হয়।
* বীজের অঙ্কুরোদগম, চারার বৃদ্ধি এবং ফসলের উৎপাদন বৃদ্ধি করে
* শেকড়ের বৃদ্ধি ও গঠন উন্নত করে
* ভার্মিকম্পোষ্ট মাটির সাথে সরাসরি মিশিয়ে উদ্ভিদ মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করা যায়।
* ভার্মিকম্পোষ্ট গাছের চারা/কলম করতে ব্যবহৃত হয়
পরিবেশগত :
* রিসাইক্লিন বা পুনরায় ব্যবহারের মাধ্যমে মেটাবলিক ফাঁক কমাতে সাহায্য করে।
* তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে
* অন্যান্য সরঞ্জাম তুলনামূলক সহজে ব্যবহার করা যায়
* গ্রীন হাউস গ্যাস উৎপাদন হ্রাস করে যেমন- মিথেন ও নাইট্রিক অক্সাইড।
অর্থনৈতিক উপকারিতা :
* ল্যান্ডফিলের বর্জ প্রবাহ হ্রাস করে
* প্রতি কেজির মূল্য ৭০-১০০ টাকা পর্যন্ত হয়। এটা অর্থনৈতিকভাবে সাশ্রয়ী
* বর্জ প্রবাহ দূর করে দুষণ হ্রাস করে
* ভাঙন প্রতিরোধ করে
* স্থানীয় পর্যায়ে কম দক্ষ ব্যক্তিদের কর্মসংস্থান সৃষ্টি করে
* স্বল্পোন্নত কৃষি এলাকাতে অপেক্ষাকৃত অল্প বিনিয়োগে সহজ প্রযুক্তির ব্যবহার
পুষ্টি উপাদান : ভার্মিকম্পোষ্ট উদ্ভিদ বৃদ্ধির জন্য সাধারণ মাটির তুলনায় পাঁচ গুণ বেশি নাইট্রোজেন, সাত গুণ বেশি ফসফরাস এবং এগার গুণ বেশি পটাশিয়াম থাকে তাই গাছপালা বৃদ্ধির জন্য পুষ্টি ও রোগ প্রতিরোধ উপাদান সরবরাহ করে।চিকিৎসায় লাল কেঁচোর ব্যবহার ঃ
বহু বছর আগে থেকে পূর্ব এশিয়ার চিকিৎসকদের কাছে শরীরের অভ্যন্তরে জমাটবদ্ধতা নিবারনকারী ঔষধ হিসেবে এটি পরিচিত। প্রচলিত চাইনিজ চিকিৎসা বিজ্ঞানে কেঁচো ফুসফুস, যকৃৎ, প্লীহা প্রভৃতির শক্তি বর্ধক হিসেবে ব্যবহৃত হয়। বিভিন্ন ভেষজ উদ্ভিদের সাথে কেঁচোর ব্যবহার খিঁচুনীসহ নানা প্রকার ব্যথা উপশমে কার্যকর। তাছাড়া হার্ট এটাক, ব্রেইন স্ট্র্রোক, রক্তনালীর বিভিন্ন সমস্যা সমাধানে কেঁচো ব্যবহৃত হয়। উল্লেখ্য কম্বোডিয়াতে হার্টের চিকিৎসায় কেঁচোর বহুল ব্যবহার রয়েছে।আমাদের কথা ঃ
“প্রকৃতিই শক্তি প্রকৃতিই মুক্তি” এরই ধারাবাহিকতায় প্রকৃতির সৃষ্টি কেঁচো থেকে উৎপাদিত ঔষধ যেমন মানব জাতির চিকিৎসার ক্ষেত্রে উপকার করে, তেমনি কেঁচো থেকে উৎপাদিত ভার্মিকম্পোষ্ট জৈব ও প্রাকৃতিক, পরিবেশ বান্ধব, মাটি ও উদ্ভিদ স্বাস্থ্য পুনঃস্থাপন করে মাটির উর্বরতা বৃদ্ধি করে, কীট আক্রমণ প্রতিরোধ করে, ফুল ও ফল ধারন বৃদ্ধি করে যে কোন উদ্ভিদে ব্যবহার করা যায় এবং আরো বহুবিধ উপকারী দিক আছে। তাই এর ব্যবহার সম্পর্কে মডার্ণ হারবাল গ্রুপ সচেতন এবং প্রায় ২৫ বছর যাবৎ গ্রুপের নিজম্ব ১২টি বাগানে এই ভার্মিকম্পোষ্ট ব্যবহার করে আশাতীত ফল পাওয়া যাচ্ছে। তাই মডার্ণ হারবাল গ্রুপ বাংলাদেশের কৃষক সমাজে এই সারের ব্যবহার ব্যাপকভাবে বৃদ্ধির জন্য শীঘ্রই বাজারে এনেছে।