সাদিয়া আফরোজ ,স্বদেশনিউজ২৪ঃ
পাকিস্তানে হিজড়াদের বিয়ে বৈধ ঘোষণা-সংক্রান্ত এক ফতোয়া দিয়েছে দেশটির লাহোরভিত্তিক আলেমদের একটি সংগঠন। তবে হিজড়াদের অধিকার নিয়ে আন্দোলনকারীরা বলছেন, এ বিষয়ে এখন মানুষের মনোভাবের পরিবর্তন দরকার।
লাহোরভিত্তিক সংগঠন তানজিম ইত্তেহাদ-ই-উম্মাতের আলেমদের একটি অংশ গত রোববার ফতোয়া প্রদান করে। বলা হয়েছে, যেসব হিজড়ার মধ্যে নারী বা পুরুষের ‘বাহ্যিক বৈশিষ্ট্য’ আছে, তাঁরা বিপরীত লিঙ্গের কাউকে বিয়ে করতে পারবেন। কিন্তু যাঁদের মধ্যে ‘দুই লিঙ্গেরই বৈশিষ্ট্য’ আছে, তাঁদের বিয়ের অনুমোদন দেওয়া হয়নি।
তানজিম ইত্তেহাদ-ই-উম্মাতের ৫০ জন আলেমের দলটি আরও বলেছেন, হিজড়াদের ‘হেয়, অপমান বা উত্ত্যক্ত’ করা ইসলাম অনুযায়ী অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে। ফতোয়াটির এখনো কোনো আইনি ভিত্তি তৈরি হয়নি।
হিজড়াদের নিয়ে কাজ করা অধিকারকর্মী আলমাস ববি বিবিসিকে বলেন, ‘আমরা আনন্দিত যে আমাদের নিয়ে কেউ অন্তত কথা বলেছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘শরিয়া আমাদের বিয়ের অধিকার দিয়েছে। কিন্তু সমাজে বিদ্যমান ভুল ধারণাগুলো দূর করতে যতক্ষণ পর্যন্ত না কোনো উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে, ততক্ষণ পর্যন্ত আমাদের অবস্থার পরিবর্তন হবে না।’
আরেকজন সমাজকর্মী কামার নসিম বলেন, এটি একটি ‘ভালো পদক্ষেপ’, তবে হিজড়াদের বিয়ের আইন না হওয়া পর্যন্ত এ নিয়ে সমস্যা থেকেই যাবে।
পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে হিজড়াদের বিয়ের ক্ষেত্রে হয়রানির অভিযোগ করে নাসিম বলেন, ‘এ বিষয়ে ভালো ধারণা না থাকায় তাঁরা হিজড়াদের বিয়েকে সমলিঙ্গের বিয়ে বলে ভাবেন। সরকার যখন হিজড়াদের অধিকার নিয়ে সচেতনতা তৈরিতে কাজ করবে, তখনই কেবল এসব চর্চা বন্ধ হবে।’
পাকিস্তানে হিজড়ারা একটি বঞ্চিত গোষ্ঠী হিসেবে পরিচিত। কাজ পেতে তাদের অনেক সংগ্রাম করতে হয়।
হিজড়াদের অধিকারবিষয়ক স্থানীয় সংগঠন ট্রান্স অ্যাকশন সূত্রে জানা যায়, গত দুই বছরে ৪৫ জনের বেশি হিজড়া দেশটির খাইবার পাখতুনখাওয়া প্রদেশে খুন হয়েছেন।
গত মাসে প্রদেশটিতে আলিশা নামের একজন হিজড়া আন্দোলনকারী চিকিৎসাসেবা পেতে দেরি হওয়ায় মারা যান। আলিশার বন্ধুরা জানান, তাঁকে আটবার গুলি করা হয়েছিল। হাসপাতালে ভর্তির সময় তাঁর অবস্থা ছিল গুরুতর। কিন্তু হাসপাতালের কর্মচারীরা সিদ্ধান্ত নিতে পারছিলেন না আলিশাকে পুরুষদের ওয়ার্ডে নেওয়া হবে, না নারী ওয়ার্ডে।
ট্রান্স অ্যাকশন বলে, খাইবার পাখতুনখাওয়া প্রদেশটিতে অন্তত ৪৫ হাজার হিজড়া রয়েছে। আর সারা দেশে তাদের সংখ্যা অন্তত পাঁচ লাখ।
২০১২ সালে পাকিস্তানের সুপ্রিম কোর্ট হিজড়া নাগরিকদের জন্য উত্তরাধিকার ও সম্পত্তিতে মালিকানার অধিকারসহ সম-অধিকারের ঘোষণা দেয়। এর এক বছর আগে তারা ভোটাধিকার পান। তবে কোর্ট সমকামী দম্পতিদের বিয়ের অনুমতি দিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন। অতীতে সেখানে পুরুষ সমকামীদের বিয়ের ক্ষেত্রে তাদের বিরুদ্ধে সোডোমি-বিরোধী আইনে অভিযোগ আনা হয়।