তাঁকে ঘিরে বিতর্ক যতই হোক, অভিনয়টাই মন দিয়ে করে যেতে চান। আর পাঁচজন মানুষের মতোই ভুল করে আফসোস করতে চান। জীবনটা ভাল করে বাঁচার চেষ্টা করছেন জয়া আহ্সান। সে কথাই তিনি জানালেন সম্প্রতি।
ঈদে বাড়ি গিয়েছিলেন?
গিয়েছিলাম। কিন্তু ঢাকায় এবার সেভাবে কেউই ঈদ পালন করেনি। আমি পরিবারের সঙ্গে ছিলাম। বড়দের আশীর্বাদ নিয়েছি। কিন্তু নতুন পোশাক পরা বা স্পেশ্যাল খাবার খাওয়া সে সব হয়নি।
আপনার জন্মদিনের দিনই তো গুলশান ক্যাফেতে হামলা হয়। ঈদ-জন্মদিন কোনওটাই বোধহয় ভাল কাটল না এবার?
এমন একটা ঘটনা যে ঘটতে পারে, আমাদের সকলের চিন্তার বাইরে। বাংলাদেশে ভগবানের পরেই অতিথিদের খাতির করা হয়। সেখানে এই ধরনের ঘটনা কল্পনাই করা যায় না। ওই ক্যাফেতে কতবার গিয়েছি আমি। এখনও বিশ্বাস হয় না যার কাছে রঙের তুলি ধরতে শিখলাম, সেই ইশরাত আপাকে ওরা মেরে ফেলল!
আপনার বাবা এক সময় মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন…?
জানি না বাবা বেঁচে থাকলে এই ঘটনা দেখে কী বলতেন। স্বাধীন বাংলাদেশের জন্য লড়াই করেছিলেন। নিশ্চয়ই অন্য রকম একটা দেশের স্বপ্ন দেখেছিলেন।
এই হামলার সঙ্গে জড়িত অনেকেই সচ্ছল পরিবারের। কমবয়সি শিক্ষিত যুবকেরা কেন এই পথ বেছে নিচ্ছেন বলে মনে হয়?
অনেক রকম কারণ হতে পারে। তবে এই বিষয় নিয়ে আমার কথা বলাটা বোধহয় ঠিক হবে না।
‘রাজকাহিনী’র বিতর্কের পর কি একটু বেশি সচেতন হয়ে গিয়েছেন?
ঠিক তা নয়। তবে কিছু বিষয়ে বেশি কথা না বলাই ভাল।
সে সময় অনেক হুমকি ভিডিও আপলোড করা হয়েছিল ইউটিউবে। আপনি বা আপনার পরিবার কি খুব ভয় পেয়েছিলেন?
ভয় পাইনি। বিরক্ত হয়েছিলাম। ডিস্টার্বড লাগত খুব। আমি তো অভিনয় করেছি। অভিনয় নিয়ে কারও কোনও বক্তব্য নেই। অন্য বিষয় নিয়ে এত কথা হচ্ছে, সেটা ঠিক নয়। ছবিটার জন্য ক্ষতিকর। যারা কথাগুলো তুলেছিল, তারা তো পুরো ছবিটা না দেখেই বলেছে। পুরোটা দেখলে এই কথাগুলো বলতেই পারত না।
‘বেগমজান’এর বিদ্যা বালান কিন্তু ‘রাজকাহিনী’ দেখে আপনার বেশ প্রশংসা করেছেন।
তাই?
বাহ্! এই কথাটা বাংলাদেশের লোক জানতে পারলে খুব খুশি হতেন। তখন হয়তো আমার কাজকে একটু মূল্য দিতেন। বাংলাদেশে বলিউডের খুব কদর। যে ছবি এখানে মুক্তি পায়, সঙ্গে সঙ্গে ওখানে সব পাইরেটেড ডিভিডি পৌঁছে যায়।
টলিউডের কদর রয়েছে? এই যে ভারত-বাংলাদেশের যৌথ প্রযোজনায় এত ছবি হচ্ছে, সেগুলো ও দেশে চলছে?
আসলে বাংলাদেশের হলগুলোর খুব খারাপ অবস্থা। কেউ হল এ যেতে চায় না। এটা একটা খারাপ অভ্যেস। আমাদের কোনও ডেডিকেটেড দর্শক নেই। এ দেশে তা-ও দর্শক রয়েছেন। ওখানে সকলে অপেক্ষা করে থাকেন, কখন ডিভিডি পাওয়া যাবে বা টেলিভিশনে দেখাবে। তাই যৌথ প্রযোজনার ছবিগুলো কতটা চলে জানি না। বেশিরভাগই চলে না। তবে এখানেও কি সেভাবে চলে? আমার তো মনে হয় না।
আপনার টলিউডের সফর শুরু হয়েছিল অরিন্দম শীলের ‘আবর্ত’ দিয়ে। ফের ওঁরই পরিচালনায় ‘ঈগলের চোখ’ করছেন।
(হাসি…) আমার কিছু বাংলাদেশের ছবির ক্লিপ অরিন্দমদা দেখেছিলেন ইন্টারনেটে। ভাল লেগেছিল বলেই ‘আবর্ত’র জন্য ডাক পেয়েছিলাম। অভিনয় করতে বরাবরই ভালবাসতাম। কিন্তু অন্য দেশে গিয়ে অভিনয় করার কথা কোনওদিন ভাবিনি। টলিউডে পা রাখাটা আমার জীবনের একটা বড় সিদ্ধান্ত ছিল। যেহেতু টলিউডে আমার প্রথম কাজ ‘আবর্ত’, তাই ওটা আমার কাছে খুব স্পেশ্যাল। তারপর থেকে অরিন্দমদা’কে অনেকবার বলেছিলাম, আবার কাজ করতে চাই। উনি বার বার বলতেন, হবে, হবে, ঠিক সময়ে হবে! তারপর ‘ঈগলের চোখ’এর সুযোগটা আসে। গল্পটা আমার পড়া।
স্ক্রিপ্টটাও ইন্টারেস্টিং।
আপনার চরিত্রটা বেশ জোরাল। সচেতনভাবেই কি জোরাল চরিত্র বাছেন?
(অবাক হয়ে…) কই, না তো! বাংলাদেশের অনেক ইন্ডিপেনডেন্ট ছবিতে কাজ করেছি আমি, যেখানে আমার চরিত্র প্রান্তিক মানুষদের গল্প তুলে ধরে। বরং বলতে পারেন, আমি ওই চরিত্রগুলো সচেতনভাবে বাছি। আসলে ওদের গল্প তো আমরা তেমন শুনতে পাই না। আর সব সময় আমার কমফর্ট জোন থেকে বেরিয়ে অভিনয়
করতে চাই।
এই ছবিতে আপনার বেশ কিছু ঘনিষ্ঠ দৃশ্য রয়েছে। আবার বিতর্ক হতে পারে বলে ভয় হয় না?
নাহ্! অভিনেতা হিসেবে যা যা করা উচিত, সেগুলো করতে আমার কোনওদিন ভয় করবে না। যদি গল্পের খাতিরে ঘনিষ্ঠ দৃশ্য করতে হয়, তাহলে কেন করব না! আমি যখন যে কাজটা করি, মন দিয়ে করি। যতদিন অভিনয় করতে ভাল লাগবে, নিজের পুরোটা দিয়েই করব। যেদিন আর ভাল লাগবে না, সেদিন সব ছেড়ে হয়তো সম্পূর্ণ অন্য কিছু করা শুরু করব। কিছুই বলা যায় না।
অভিনয় নিয়ে সব সময় চিন্তাভাবনা করেন। স্টার-ভ্যালু নিয়ে চিন্তা হয় না?
একদম নয়। আমি ও সব জানতেও চাই না, মানতেও চাই না। আমি আর পাঁচজনের মতোই বাঁচতে চাই। মাটিতে পা ফেলে চলতে চাই। তাতে যদি কাদায় পা পিছলে পড়ে যাই, তা-ও ভাল। ভুল করে জিভ কাটতে চাই। যত বেশি মাটির কাছাকাছি থাকব, তত ভাল শিল্পী হতে পারব। কিন্তু এতদিন ধরে কাজ করার পর খুব সাজানো হয়ে গিয়েছে আমার জীবনটা। কোনটার পর কোন কাজটা করা উচিত, সেটা যেন জেনে ফেলেছি। যেটা অভিনেতাদের জন্যে একদম ঠিক নয়।
একঘেয়েমি চলে এলে ব্রেক নেন?
আমি আর মা খুব বেড়াতে যাই। এবারও ঢাকা ফিরেই একটা গ্রামে চলে যাচ্ছি একটা ছবির শ্যুটিংয়ের জন্য। সেখানে আমার চরিত্রটা একদম গ্রাম্য। ওটা শেষ করে যেদিন ঢাকা ফিরব, তার পরদিনই সিডনি যাচ্ছি মায়ের সঙ্গে। লম্বা ছুটিতে। গত ছ’মাসে আমি বোধহয় ছ’টা ছবি করে ফেলেছি। যেটা পুরো আমার নীতির বাইরে। কিন্তু কী করব বলুন! সব সময় সবকিছু তো আমাদের হাতে থাকে না। একটা ছবি সই করার পর কবে শ্যুটিং শুরু হবে সেটা আগে থেকে জানার উপায় নেই। তারপর সরকারের হয়ে দু’টো ছবি। যেগুলো আমায় শেষ করতেই হতো। তবে এত কাজ করে আমি প্রায় নিঃশেষ হয়ে গিয়েছি। এবার একটু শ্বাস নিতে চাই। একটু পালিয়ে যেতে চাই।
অনেকদিন হল টলিউডে কাজ করছেন। সবচেয়ে বড় পাওনা কী?
নতুন নতুন মানুষের সঙ্গে দেখা হওয়া আর কাজ করার আনন্দটাই সবচেয়ে বড় পাওনা। কত নতুন লোক, নতুন আদবকায়দা এগুলো জানতে, বুঝতে আমার খুব ভাল লাগে। তবে এখানকার পরিচালকেরা আরেকটু ডায়নামিক কাজ করতে পারেন। আরেকটু ঝুঁকি নিতে পারেন। সে ধরনের দর্শক কিন্তু রয়েছে। তা সত্ত্বেও কেন করেন না কে জানে!
এখানে যে ধরনের চরিত্রগুলো পাচ্ছেন, তাতে আপনি খুশি?
একটা কষ্টের জায়গা, এখানে সকলে খুব টাইপকাস্ট করেন। একই রকমের রোল পাই। কেন বলুন তো! এঁরা কি শিল্পীদের বিশ্বাস করেন না? তা-ও আমি যে ধরনের ছবি করি, তাতে মেয়েদের চরিত্রগুলোর একটু গুরুত্ব রয়েছে। বাণিজ্যিক ছবিতে তো সেই জায়গায় এখনও নারী-চরিত্রগুলো পৌঁছতে পারেনি। একটা চরিত্র এক ছবি থেকে কেটে অন্য ছবিতে বসালেও কেউ তফাত খুঁজে পাবে না।
কোনওদিন বাণিজ্যিক ছবি করবেন না?
(খুব হালকাভাবে…) অত মেকআপ, অত কস্টিউম, ও সব আমার দ্বারা হবে না। এক কাপড়ে গোটা ছবি করে ফেলতে পারলে আমি সবচেয়ে খুশি হই। সাজগোজ অন্য লোকে করে, দেখতে ভালই লাগে। আমার আর অত কিছু করার উৎসাহ নেই!
আপনি যা-ই বলুন, আপনার সেক্স অ্যাপিল নিয়ে কিন্তু ছেলেদের মধ্যে খুব চর্চা হয়!
(খুব জোর হাসি…) সে কী! আমি এ সব কিছু জানিই না। অবশ্য জানতে চাইও না। আমি মাটির কাছাকাছি থাকতেই পছন্দ করি।
আপনার আর সৃজিতের (মুখোপাধ্যায়) প্রেম নিয়েও কিন্তু লোকে আলোচনা করে।
আমায় কেউ জিগ্যেস করলে কোনও কমেন্টই করি না। আসলে আমি খুব বোরিং ধরনের মানুষ। না নিজের ব্যাপারে গসিপে কান দিই, না অন্য লোকের ব্যাপারে। অনেকে আমায় ‘এই শোন কী হয়েছে’ বলে অনেক গল্প বলতে আসে। কিন্তু আমি খুব ভ্যাবলার মতো তাকিয়ে থাকি।
টলিউডের পর বলিউডে চেষ্টা করবেন নাকি?
নিজে থেকে কোনওদিন করব না। তবে সুযোগ এলে অবশ্যই কাজ করব।