মুক্তিযুদ্ধের সময় চট্টগ্রামে হত্যা, গণহত্যা, অত্যাচার-নির্যাতন, লুটপাটের অন্যতম হোতা ছিলেন আলবদর বাহিনীর কমান্ডার মীর কাসেম আলী।
নগরীর বিভিন্ন জায়গায় নির্যাতন কেন্দ্র খুলে মুক্তিযোদ্ধা, বুদ্ধিজীবী ও সাধারণ মানুষকে ধরে এনে নির্মম নির্যাতন চালিয়ে হত্যা করা হয় তারই নেতৃত্বে।
এসব নির্যাতন কেন্দ্র থেকে ভাগ্যক্রমে বেঁচে যাওয়া নির্যাতিতরা সেই দুঃসহ স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে এখনো শিউরে ওঠেন— জানান মুক্তিযোদ্ধা ও রাষ্ট্রপক্ষের সাক্ষী সাংবাদিক নাসিরুদ্দিন চৌধুরী।
১৯৭১-এ যুদ্ধকালীন সময়ে এদেশীয় দোসররা গঠন করে আলবদর বাহিনী। আর এ আলবদর বাহিনী চট্টগ্রামে ৪টি নির্যাতন কেন্দ্র তৈরি করেছিল। এগুলো হলো নগরীর টেলিগ্রাফ রোডের মহামায়া ডালিম হোটেল, দেওয়ান হাটের দেওয়ান হোটেল, পাঁচলাইশ এবং চাক্তাই এলাকার দুটি আরো কক্ষ।
এসব নির্যাতন কেন্দ্রের মধ্যে অন্যতম প্রধান ছিল মহামায়া ডালিম হোটেল। একাত্তরের জুলাই মাসের শেষের দিকে নগরীর টেলিগ্রাফ রোড সিনেমা প্যালেস এলাকার জনৈক বিজন মোহন নাথের তিন তলার মহামায়া ডালিম ভবনটি দখল করে নেয় আলবদর বাহিনী।
এরপর থেকে মুক্তিযোদ্ধা ও স্বাধীনতার পক্ষের লোকজনকে ধনে নিয়ে ওই্ হোটেলে চালাতো নির্যাতন। ওই সময় আলবদরের কমান্ডার ছিলেন ছাত্র সংঘের নেতা মীর কাসেম আলী। মূলত তার তত্ত্বাবধানেই চলত ডালিম হোটেলর নির্যাতন। এই ডালিম হোটেলে নির্যাতনের শিকার হয়েছিলেন মুক্তিযোদ্ধা সাংবাদিক নাসিরুদ্দিন চৌধুরী।
জুলাইয়ের শেষের দিকে মীর কাসেমের নেতৃত্বে মুক্তিযোদ্ধা—প্রগতিশীল রাজনীতিবিদ—পেশাজীবীদের একটি তালিকাও তৈরি করা হয়। পরে তাদেরকে ধরে এনে ডালিম হোটেলে নির্যাতন এবং অনেককে হত্যাও করা হয়।
বিজয়ের পরে শুধুমাত্র ডালিম হোটেল থেকে আহত অবস্থায় প্রায় সাড়ে ৩০০ মানুষকে উদ্ধার করা হয়।
মুক্তিযোদ্ধা ও রাষ্ট্রপক্ষের সাক্ষী সৈয়দ মো. ইমরান ছিলেন চট্টগ্রাম কলেজে মীর কাসেম আলীর সঙ্গে পড়তেন। রেহাই পাননি তিনি ও তার পরিবার।
তিনি বলেন, যুদ্ধের শেষের দিকে আমাকে ও তার ভাইদের ধরে নিয়ে যাওয়া হয় ডালিম হোটেলে। চলে তাদের ওপর নির্যাতন।
আজো সেই দুঃসহ স্মৃতির সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে এ ডালিম হোটেল তাদের কাছে।
এছাড়া মুক্তিযুদ্ধের কমান্ডার জাহাঙ্গীর ডালিম হোটেলে তাকে নির্যাতনের কথা জানান।
রায়ের পর তিনি সাংবাদিকদের কাছে নিজেদের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত করার আহবান জানান সরকারের প্রতি।
একাত্তরের প্রথম দিকে চট্টগ্রাম জেলার ইসলামী ছাত্র সংঘের সভাপতি এ পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীকে সহায়তার পুরষ্কার হিসেবে পূর্ব পাকিস্তান ইসলামী ছাত্র সংঘের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পান কাসেম।
পরে আলবদর বাহিনী গঠিত হলে ওই বাহিনীটির তৃতীয় প্রধানের দায়িত্বও পান মীর কাসেম।
মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে তার নেতৃত্বে চট্টগ্রাম শহরে কয়েকটি জায়গায় টর্চার সেল খোলা হয়। যার মধ্যে নগরীর টেলিগ্রাফ রোডের মহামায়া ডালিম হোটেল ছিল অন্যতম। বাড়ির হিন্দু মালিককে তাড়িয়ে দিয়ে নির্যাতন শিবির তৈরি করে রাজাকার আলবদর বাহিনী।
মানুষের আত্মচিৎকার, কান্না আর গুলির শব্দ—মুক্তিযুদ্ধের সময় ডালিম হোটেলে এসব ছিল নিত্যদিনের ব্যাপার। এখানে সঠিক কতজনকে হত্যা করা হয় সেই হিসেব নেই কারও কাছে।