যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে চলমান জাতিসংঘের ৭১তম সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে বুধবার রাতে বিতর্ক পর্বে বক্তব্য দিয়েছেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফ। তার বক্তব্যের পুরো বিষয় ছিল ‘কাশ্মীর সংকট’। ভাষণে পাক প্রধানমন্ত্রী কাশ্মীর ইস্যুতে ভারতের ভূমিকার তীব্র সমালোচনা করেন। অন্যদিকে জাতিসংঘে দেয়া নওয়াজের বক্তব্যের কড়া সমালোচনা করেছে ভারত।
কাশ্মীরে যাকে কেন্দ্র করে সংঘাত, ভারতীয় বাহিনীর গুলিতে নিহত সেই হিজবুল মুজাহিদীন কমান্ডার বুরহান ওয়ানিকে স্বাধীনতাযোদ্ধা এবং কাশ্মীরের চলমান আন্দোলনকে ‘ইন্তিফাদার’ (দখলদারির বিরুদ্ধে গণজাগরণ) বলে আখ্যা দেন নওয়াজ শরিফ। জুলাইয়ে ভারতীয় নিরাপত্তা বাহিনীর হাতে নিহত বিচ্ছিন্নতাবাদী কাশ্মীরী যুবক বুরহানকে তিনি সেই ইন্তিফাদার নেতা হিসেবে বর্ণনা করেন। বিপুল অস্ত্রভাণ্ডার গড়ে তুলে অস্ত্র প্রতিযোগিতা তৈরির জন্য ভারতকে অভিযুক্ত করেন পাক প্রধানমন্ত্রী। এমনকি ৫ লাখেরও অধিক সেনা দিয়ে ভারত জোর করে কাশ্মীর দখল করে রেখেছে বলেও অভিযোগ তোলেন নওয়াজ।
তার এ ভাষণ শেষ না হতেই ভারত তীব্র ভাষায় শরিফ এবং পাকিস্তানের পাল্টা সমালোচনা শুরু করে। জাতিসংঘে নওয়াজের ভাষণের প্রতিক্রিয়ায় ভারত এক বিবৃতিতে বলেছে, প্রাচীন ইতিহাসের শিক্ষার পীঠস্থানকে সন্ত্রাসের আখড়া বানিয়েছে পাকিস্তান। জাতিসংঘে ভারতীয় মিশন ওই বিবৃতিতে বলেছে, যে জনপদ একসময় শিক্ষার মহান ক্ষেত্র হয়ে উঠেছিল, তা এখন সন্ত্রাসের আখড়া হয়ে উঠেছে। পাকিস্তানে ‘আইভি লীগ অব টেরোরিজম’-এর সূত্রপাত ঘটেছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে ওই বিবৃতিতে।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার বিদেশী সাহায্য ব্যয় করে সন্ত্রাসীদের প্রশিক্ষণ ও অস্ত্র দিয়ে প্রতিবেশীদের বিরুদ্ধে লেলিয়ে দিচ্ছে পাকিস্তান। কাশ্মীরে মানবাধিকার লংঘনের যে অভিযোগ পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী করেছেন, তার জবাবে ভারতের বিবৃতিতে বলা হয়, সন্ত্রাস সবচেয়ে বড় মানবাধিকার লংঘন।”এদিকে ভাষণে নওয়াজ বলেন, আন্তর্জাতিক জঙ্গিবাদের প্রধান শিকার হয়েছে পাকিস্তান। জঙ্গিবাদ এখন একটি আন্তর্জাতিক সমস্যা। একে বিস্তৃত পরিসরে বিবেচনায় নিতে হবে। রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসকেও এর আওতায় বিচার করতে হবে। এ ছাড়া পাকিস্তানে ‘জারব-ই-আজাব’ অপারেশনের প্রসঙ্গ উল্লেখ করে নওয়াজ দাবি করেন, জঙ্গিবাদ মোকাবেলায় অব্যাহত ভূমিকা রেখে যাচ্ছে পাকিস্তান।
এদিকে বুরহানকে ‘ইন্তিফাদার নেতা’ উল্লেখ করে জাতিসংঘে ভাষণ দেয়ায় নওয়াজের সমালোচনায় ভারতের পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী এম জে আকবর বলেন, এটি খুবই দুঃখজনক যে একটি স্বাধীন জাতির নেতা (নওয়াজ) একজন আÍস্বীকৃত জঙ্গিকে (বোরহান) মহিমান্বিত করেছেন। এর মাধ্যমে পাকিস্তান নিজেকেই দোষারোপ করল। আলোচনার মাধ্যমে কাশ্মীর সংকট সমাধানের প্রস্তাব নিয়ে পাকিস্তান বাড়তি বহু পথ হেঁটেছে বলে নওয়াজ যে দাবি করেছেন তার ব্যাপারে এক প্রশ্নের জবাবে আকবর বলেন, ‘আমরা তো আলোচনার প্রথম পদক্ষেপটি দেখিনি। তাদের বাড়তি পথে হাঁটার প্রশ্নই আসবে কোত্থেকে।’ প্রতিমন্ত্রী আরও বলেন, পাকিস্তান হাতে বন্দুক নিয়ে সংলাপ করতে চাইছে। কিন্তু সন্ত্রাস ও আলোচনা একসঙ্গে চলতে পারে না।
এ ছাড়া নওয়াজের বক্তব্যের কয়েক মিনিটের মধ্যেই টুইটারে তার কঠোর সমালোচনা করে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র বিকাশ স্বরূপ লেখেন, ‘বুরহানকে মহিমান্বিত করে নওয়াজ সন্ত্রাসের সঙ্গে পাকিস্তানের সম্পর্কটা বুঝিয়ে দিলেন।’ তবে কাশ্মীরের বর্তমান পরিস্থিতির জন্য ভারতই সম্পূর্ণ দায়ী বলে দাবি করেন নওয়াজ। তিনি বলেন, ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে দেশটির নিরাপত্তা বাহিনী যে বর্বরতা চালাচ্ছে, সে কারণেই প্রবল গণআন্দোলন গড়ে উঠেছে