রায়েরবাজার এলাকায় সুলতানগঞ্জ গদিঘর ও কালিমন্দির এলাকায় ৬ মাস ধরে পানি সংকট
** দীননাথ লেনে ৩ দিন ধরে পানি সংকট প্রকট। বোতলজাত পানি কিনতে হচ্ছে
** সদরঘাট, পাটুয়াটুলী, পানিটোলা, রাজার দেউড়ি, তাঁতীবাজারের পানিতে ময়লা ও দুর্গন্ধ
** সতীশ সরকার লেনে পানির অভাব ৩ দিন ধরে
** শাঁখারীবাজারে শনির মন্দিরে টিউবওয়েল-এ পানি সংগ্রহে মানুষের ভিড়
রায়ের বাজার এলাকার সুলতানগঞ্জ, গদিঘর ও কালিমন্দির এলাকায় গত ৬ মাস ধরে পানি সংকট চলছে। স্থানীয়রা ওয়াসা অফিসে গত ৬ মাস ধরে অভিযোগ করছেন, কিন্তু কোনো কাজ হচ্ছে না। সেখানকার মানুষ মিছিল করে স্থানীয় ওয়ার্ড কমিশনারের কাছে গেলে আশ্বাস পেলেও পানি মিলছে না। এ ব্যাপারে ওয়াসার লালবাগ জোনের নির্বাহী প্রকৌশলী আবদুল ওহাবের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি এ ব্যাপারে কিছুই জানেন না বলে জানান।এদিকে পুরান ঢাকার দীননাথ সেন রোড, সতীশ সরকার লেনসহ গেন্ডারিয়া এবং পার্শ্ববর্তী ধূপখোলা এলাকায় পানি সংকট চলছে। অন্যদিকে সদরঘাট, শাঁখারীবাজার, তাঁতীবাজার ও আশপাশের এলাকায় পানির সরবরাহ থাকলেও ময়লা ও দুর্গন্ধ থাকায় তা ব্যবহারের প্রায় অনুপযোগী হয়ে পড়েছে।
গত শুক্রবার এলাকা ঘুরে পানির এই দুরবস্থার কথা জানা যায়। দীননাথ সেন রোডে ওয়াসার গভীর নলকূপের পানির পাম্প বন্ধ হয়ে যাওয়ায় তিন দিন ধরে আশপাশের এলাকার মানুষ দুর্ভোগ পোহাচ্ছে।দীননাথ সেন লেনের বাসিন্দা শাহাবুদ্দীন বলেন, আগে থেকেই পানি কম পাওয়া যেত। কিন্তু তিন দিন ধরে পানি সংকট প্রকট আকার ধারণ করেছে। ব্যবহারের জন্য বোতলজাত পানি কিনতে হচ্ছে। সতীশ সরকার লেনের বাসিন্দা অখিল রায় বলেন, পানির অভাবে গত তিন দিন ধরে গোসল করা সম্ভব হয়নি। একই বক্তব্য ধূপখোলার আসলামুল ইসলামের।
গেন্ডারিয়ার বাগিচায় মাঝে মাঝে পানি এলেও তা খুব কম সময় থাকে বলে জানান কাঠ বিক্রেতা ফরিদুর রহমান। এ ছাড়া সদরঘাট, পাটুয়াটুলী, শাঁখারীবাজার, পানিটোলা, রাজার দেউড়ি, তাঁতীবাজার এবং আশপাশের এলাকায় ঢাকা ওয়াসার সরবরাহ করা পানি ময়লা ও দুর্গন্ধে ভরা। জানা যায়, অতীতে পানিতে যে ময়লা ও দুর্গন্ধ ছিল, তা আরো বেড়েছে। বিশুদ্ধ পানির জন্য শাঁখারীবাজার, পানিটোলা ও রাজার দেউড়িতে ওয়াসার কল থেকে পানি সংগ্রহ করছেন এলাকাবাসী।শাঁখারীবাজারে শনি মন্দিরের কাছে চাপকল আছে। রাস্তার পাশে খোঁড়াখুঁড়ি ও নর্দমার ঢাকনা উঠিয়ে রাখায় সেই কল থেকে পানি সংগ্রহ করা যাচ্ছে না। রাজার দেউড়ি পানির পাম্পে ভিড় করেছেন মানুষ। সেখানে পানিটোলার বাসিন্দা অপূর্ব সাহা দুটি জার নিয়ে এসেছেন। বললেন, ওয়াসা পানি দেয় না বললে মিথ্যা বলা হবে। কিন্তু যে পানি পাওয়া যায়, তার রং বুড়িগঙ্গার পানির মতো। সঙ্গে ড্রেনের ময়লার দুর্গন্ধ।
রাজার দেউড়ি থেকে তাঁতীবাজারে পানি সংগ্রহে এসেছেন এমন চারজনকে পাওয়া গেল। তারা বলেন, এলাকায় ওয়াসার সরবরাহ করা পানি খাওয়া দূরে থাক, ব্যবহারেরও অনুপযোগী। তারা নিয়মিত পাম্পের কল থেকে সরাসরি খাওয়ার পানি নিয়ে যান। তবে পানিটোলা ১৪ নম্বর বাড়ির কাছে রাস্তায় এবং বিপরীত দিকে দুটি কল রয়েছে, যে দুটোর মুখে ছাঁকনি বাঁধা। অর্থাত্ কলেও ভালো পানি আসছে না। তার মধ্যেই কলপাড়ে কলসির সারি। দখল রেখেছেন অনেকেই। পানিটোলা, রাখাল চন্দ্র বসাক লেন, রাধিকা মোহন বসাক লেন, ঝুলন বাড়ির বাসিন্দারা সেখান থেকে পানি সংগ্রহ করছেন।
সদরঘাট গ্রেটওয়াল বিপণিবিতানের কাপড় ব্যবসায়ী জমির উদ্দিন বলেন, পানির লাইন পুরনো বলেও সমস্যা হয়। গভীর নলকূপ থেকে উত্তোলিত পানিও দূষিত হয়ে যায়। এ ছাড়া অবৈধ সংযোগ নিতে গিয়ে ফুটো হওয়া পাইপ দিয়েও ময়লা ঢোকে। পুরান ঢাকার জয়কালী মন্দির এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, সেখানে কয়েক ফুট মাটি খুঁড়ে ওয়াসার একটি লাইন বের করে আনা হয়েছে। সেই লাইন ছিদ্র করে একটি পাইপের মাধ্যমে পানি সংগ্রহ করা হচ্ছে। এই অবৈধ লাইনের পানি বন্ধ করার কোনো উপায় না থাকায় সেখানে অনবরত পানি পড়ছে। সেই পানি পাশের ড্রেনে গিয়ে মিশছে। আশপাশের মানুষ বিভিন্ন জার, জগ, বালতিসহ নানা পাত্রে তা ধারণ করছেন। পানির পাইপ লাইনের চারপাশে ময়লা-আবর্জনায় ভরা। অত্যন্ত নোংরা ও অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ। এই পরিবেশেই পানি সংগ্রহ করছেন স্থানীয়রা। এ ব্যাপারে ওয়াসার মর্ডস জোন-১-এর নির্বাহী প্রকৌশলী সিরাজউদ্দিনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, সাময়িকভাবে পানি সংকট দেখা দিয়েছে। তা শিগগিরই সমাধান হবে। গেন্ডারিয়া ও ধূপখোলায় পানির সমস্যা সমাধানের জন্য পাম্প বসানো হয়েছে। আশা করি, সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে।