ডনাল্ড ট্রাম্পবিরোধী বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন শহরে। বোস্টন থেকে লস অ্যানজেলেস পর্যন্ত নানা শহরে এ বিক্ষোভে যোগ দিয়েছে হাজার হাজার মানুষ। তারা ডনাল্ড ট্রাম্পবিরোধী স্লোগান দিচ্ছেন। ট্রাম্পকে উদ্দেশ্য করে তারা স্লোগান দিচ্ছেন, ‘নট মাই প্রেসিডেন্ট, নট টুডে’। নির্বাচনের ফল প্রকাশের পর বুধবার রাতটা এভাবেই কাটিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন শহর। পুলিশের হিসাবে নিউ ইয়র্ক শহরে বিক্ষোভ করেছে প্রায় ৫ হাজার মানুষ। সেখানে ট্রাম্প টাওয়ারের বাইরে সমবেত মানুষ অভিবাসন ও ট্রাম্পের বিভিন্ন প্রচারণাবিষয়ক ইস্যুতে ক্ষোভ প্রকাশ করেছে। এসব দৃশ্য সরাসরি সম্প্রচার করা হয় সিএনএনে। এমন বিক্ষোভে অংশগ্রহণকারী একজন নিক পাওয়ারস। তিনি বলেছেন, আমি এখানে বেরিয়ে এসেছি ভয়াবহ আতঙ্ক থেকে। নির্বাচনের ফল দেখার সঙ্গে সঙ্গে এ আতঙ্ক আমাকে গ্রাস করেছে। তিনি আশঙ্কা করছেন, ডনাল্ড ট্রাম্পের গৃহীত নীতির ফলে অনেককে যেতে হবে কারাগারে। তার দৃষ্টিতে ট্রাম্পের বিজয়ে যৌনতাবিষয়ক ভাবধারা বৃদ্ধি পাবে। ডেমোক্রেটদের শক্ত ঘাঁটি আটলান্টা, অস্টিন, টেক্সাস, বোস্টন, শিকাগো, ডেনভার, ফিলাডেলফিয়া, পোর্টল্যান্ড, অরিগন, সান ফ্রান্সিসকো, সিয়াটল ও ওয়াশিংটনে এ বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে। শিকাগোতে বিক্ষোভকারীরা ছিলেন শান্ত। তারা লেকশোর ড্রাইভে বিভিন্ন স্লোগানসংবলিত ব্যানার হাতে বিক্ষোভ করেন। অনেকে ছুটে যান আপার ওয়াকার ড্রাইভের দিকে। সেখানে ট্রাম্প টাওয়ারের কাছে সমবেত হয়েছিলেন বিপুলসংখ্যক মানুষ। সিএনএনের সাংবাদিক রায়ান ইয়াং বলেছেন, আধা মাইলের মধ্যে তখন ছড়িয়ে পড়ে কয়েক হাজার মানুষ। অনেকে নির্বাচিত প্রেসিডেন্টকে উদ্দেশ্য করে আপত্তিকর স্লোগান দিতে থাকে। সিএনএনকে একজন কলেজছাত্র একটি ব্যানার দেখান। তাতে লেখা, এখনো আমি বিশ্বাস করতে পারছি না যে, আমার নাগরিক অধিকার সুরক্ষিত। এটা আসলেই হতাশাজনক। কারণ, একটি জাতি হিসেবে মনে হচ্ছে আমরা অনেকটা পেছনে চলে গিয়েছি। আরেকজন নারী বললেন, তাই আমরা বাইরে বেরিয়ে এসেছি পরিবর্তনের জন্য। আমরা সেই পরিবর্তন চাই যা আমাদেরকে সামনে এগিয়ে নিতে সহায়তা করবে। পোর্টল্যান্ডে বিক্ষোভকারীরা স্লোগানে বলতে থাকে ‘নো ট্রাম্প, নো কেকেকে, নো ফ্যাসিস্ট ইউএসএ’। ওয়াশিংটন ডিসিতে বিক্ষোভকারীরা অবস্থান নেন ট্রাম্প ইন্টারন্যাশনাল হোটেলের সামনে। সেখানেও তারা একই রকম স্লোগান দিতে থাকেন। হোয়াইট হাউসের সামনে বিক্ষোভ করেন কিছু তরুণ-তরুণী। বুধবার রাতে লস অ্যানজেলেস সিটি হলে বিক্ষোভ করেন লাতিনো কয়েক শ’ বিক্ষোভকারী। তারা এ সময় স্লোগান দিতে থাকেন ‘আমরা আর আতঙ্কের মধ্যে বসবাস করতে চাই না। লড়াই করতে চাই। ঘুরে দাঁড়াও। অনেক বিক্ষোভকারী তাদের আশঙ্কার কথা বলেছেন। তাদের আশঙ্কা প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব নেয়ার পরই তাদেরকে, পরিবার পরিজন সহ যুক্তরাষ্ট্র থেকে বের করে দেয়া হবে। অস্টিনে বুধবার বিকালেই বিক্ষোভকারীরা একটি মহাসড়ক অবরোধ করে। আমেরিকান ইউনিভার্সিটি ইন ওয়াশিংটন ক্যাম্পাসে একটি পতাকা পোড়ায় ছাত্ররা। তারা ক্লাস থেকে বেরিয়ে আসে। লস অ্যানজেলেসের উপকণ্ঠে হাই স্কুলের শিক্ষার্থীরা বুধবার বিকালে সমবেত হন সিটি হলে। ব্রুকলিন হোয়াইট নামের একজন বিক্ষোভকারীর হাতে একটি ব্যানার দেখা যায়। তাতে লেখা ‘ঘৃণা বিজয়ী হতে পারে না’। ১৮ বছর বয়সী এই বিক্ষোভকারী ভোট দিয়েছেন হিলারিকে। কিন্তু ফল পাওয়ার পর তিনি হতাশ। ক্যালিফোর্নিয়াতে বার্কলি হাই স্কুলে দেড় হাজার শিক্ষার্থী বুধবার সকালে বিক্ষোভে যোগ দেয়। আইওয়াতে ডেস মোইনসে শতাধিক স্কুলছাত্র বিক্ষোভে যোগ দেয়। ফিলিক্সে কার্ল হেডেন হাই স্কুলের প্রায় ২০০ ছাত্র বিক্ষোভে যোগ দেয়। তারা রাজ্যের রাজধানীর দিকে অগ্রসর হতে থাকে। ক্যালিফোর্নিয়া, ওকলাহোমায় বিভিন্ন রকম জিনিসপত্র জড়ো করে তাতে আগুন জ্বালানো হয়। অন্যদিকে হোয়াইট হাউসের সামনে হিলারি ক্লিনটনের বেশকিছু সমর্থক বুধবার সন্ধ্যায় মোমবাতি প্রজ্বালন করে তাদের পরাজয়ের শোক প্রকাশ করেন। ফেসবুকে এ ইভেন্টটি পর্যবেক্ষণ করেন আড়াই হাজারের বেশি মানুষ। এতে যোগ দিয়েছিলেন পানামার অভিবাসী মেবিলিনে ম্যাককয়। তার সঙ্গে ছিল তিন সন্তান। তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, তাদেরকে সীমাবদ্ধ করে দেয়া হতে পারে। জনগণের কণ্ঠকে নিস্তব্ধ করে দেয়া হতে পারে। অবৈধ করে দেয়া হতে পারে। অন্যদিকে ডনাল্ড ট্রাম্পের সমর্থনে হোয়াইট হাউসের সামনে সমবেত হন বেশকিছু মানুষ।