শহর থেকে নগর, তারপর মহানগর। সিলেটের পরিচয় এখন এমনই। শহর পরিচয় ছেড়ে মহানগরের পরিচয় নেয়ার পথে ব্যস্ততা বেড়েছে এই সিলেটের। নিজের বুকেই আছে ৫ লাখ মানুষ। মহানগরী হওয়ায় নানা কাজে বাইরে থেকেও প্রচুর মানুষ আসেন সিলেট নগরীতে। কেউ আসেন কাজের সন্ধানে, কেউ আসেন চিকিৎসার জন্য, নানা প্রয়োজনে অজস্র মানুষের পা পড়ে সিলেট নগরে। দিনের ব্যস্ত সময়ে তাই কম করে হলেও প্রায় ১০ লাখ মানুষের জায়গা দিতে হয় এই নগরীকে। এতো মানুষের চলার সুযোগ করে দিতে অলিগলি মিলিয়ে সিলেটে মোট ৬৭৩ কিলোমিটার পথ।
এতো মানুষের পদভারে সিলেট যেনো ক্লান্ত। প্রতিনিয়ত নগরীর বুক চিরে চলছে অসংখ্য যানবাহন। হিমশিম খাচ্ছে পথগুলো। হিমশিম খাচ্ছেন পথ সামলানোর দায়িত্বে থাকারাও। তাই কোথায় যে তারা পেরিয়ে যাওয়ার জন্য পথ করে দেবেন। প্রায়ই ব্যস্ত সময়ে গাড়িগুলো থমকে থাকে নগরীর পথে পথে। ট্রাফিক বিভাগের অপ্রতুল লোকবল সামলাতে পারে না সে ব্যস্ততা।
গণপরিবহন না থাকায় ছোট ছোট বাহন ও ব্যক্তিগত বাহনই নগরীতে চলার পথে মূল ভরসা। তাই স্বাভাবিকভাবেই পথে যানবাহনের ভিড় লেগে থাকে। সিলেট নগরীতে চলাচলের জন্য সিটি করপোরেশনেরই অনুমোদন দেয়া আছে সাড়ে ১২ হাজার রিকশাকে। এর বাইরেও শহরতলির আরো প্রায় ১০ হাজার রিকশা প্রতিদিন নামে সিলেটের পথে। নগরীতে ব্যাটারিচালিত রিকশা চলাচল নিষিদ্ধ হলেও পুলিশের চোখ এড়িয়ে বা কোনো উপায়ে ‘ম্যানেজ’ করে ১৫ হাজার ব্যাটারিচালিত রিকশা চলছে নগরীর পথে পথে। সিএনজি চালিত অটোরিকশার সংখ্যা ২১ হাজারেরও বেশি। আছে প্রাইভেট কার, ভাড়ায় খাটা মাইক্রোবাসও। আর নগরীর পথ দাপিয়ে বেড়াচ্ছে অসংখ্য মোটরসাইকেল। একটি পরিসংখ্যানে জানা গেছে, প্রবাসীঅধ্যুষিত সিলেটে যত মোটরসাইকেল রয়েছে বাংলাদেশের আর কোথাও এতো মোটরসাইকেল নেই। এছাড়া নগরীর বুকের উপর দিয়ে পাথরবাহী ট্রাকসহ ভারী যানবাহনের আনাগোনা যানজটের ভোগান্তি তৈরিতে বড়সড় ভূমিকাও রাখছে। ভারী এসব যানবাহনের চলাচলে ক্ষতবিক্ষত হয়ে রাস্তাগুলো আরো ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়ছে।
সিলেট নগরীর রাস্তায় প্রতিদিনই নতুন নতুন গাড়ি যুক্ত হচ্ছে। অথচ রাস্তার দৈর্ঘ্য বাড়ছে না। সে হিসাবে বছরে সাড়ে ৬ থেকে ৭ হাজার নতুন গাড়ি যোগ হচ্ছে সিলেটের রাস্তায়। বিআরটিএ’র সিলেট অফিস সূত্রে জানা গেছে, সিলেটে প্রতি মাসে গড়ে প্রায় ৫৫০টি নতুন নিবন্ধিত গাড়ি রাস্তায় নামছে। বিআরটিএ’র সিলেট অফিস সূত্রে জানা গেছে, সিলেটের রাস্তায় বর্তমানে সিএনজিচালিত অটোরিকশা ২১ হাজার ২৩৫টি, প্রাইভেট কার ১ হাজার ৭৮৬টি, মাইক্রোবাস ১ হাজার ৫১টি, অ্যাম্বুলেন্স ৯৫টি, পিকআপ ২ হাজার ২৮৩টি, ট্রাক ৭৫৫টি, বাস ৮৬টি, মিনিবাস ৮৯৭টি, ট্যাংক লরি ৯৩টি, অটোটেম্পো ৮৩৬টি, কাভার্ডভ্যান ৩৯টি, ট্রাক্টর ২৭৮টি, হিউম্যান হলার ২ হাজার ৩৫৭টি, মোটরসাইকেল ৪৭ হাজার ৭৩৮টি। যার ৭০-৮০ ভাগই সিলেট নগরীর বুকে দাপিয়ে বেড়ায়। এর বাইরে অন্যান্য স্থান থেকে আসা গাড়ি তো রয়েছেই। আর রয়েছে পাথর পরিবহনের কাজে ব্যবহৃত ট্রাকের সারি।
কিন্তু এতসব গাড়িকে জায়গা দেয়ার মতো পর্যাপ্ত সড়ক নেই সিলেটে। সব মিলিয়ে সিলেট নগরীতে চলাচলের জন্য ৬৭৩ কিলোমিটার পথ রয়েছে। এর মধ্যে বেশির ভাগ পথই অপ্রশস্ত। এছাড়া ফুটপাথগুলো হকার দখলে চলে যাওয়ায় পথচলতি মানুষকেও রাস্তাতেই নেমে পড়তে হয়। পথের সংকট তার উপরে কে কার আগে যাবে সেই প্রতিযোগিতা, তাই কেবলই থেমে যায় গাড়ির চাকা। অপর্যাপ্ত সড়কের যানবাহনের এ চাপ সামলাতে অপ্রতুল লোকবল নিয়ে হিমশিম খাচ্ছে ট্রাফিক বিভাগ। এতসব গাড়ি সামলানোর জন্য সিলেটে সব মিলিয়ে ট্রাফিক সদস্য রয়েছেন ১৫৫ জন। সিলেট মেট্রোপুলিশের তথ্য মতে একজন উপ-কমিশনারের নেতৃত্বে ট্রাফিক বিভাগে নিয়োজিত রয়েছেন ১ জন করে সহকারী উপ-কমিশনার ও সহকারী কমিশনার। আছেন ৯ জন ট্রাফিক ইন্সপেক্টর, ৪ জন ট্রাফিক সাব-ইন্সপেক্টর, ৩১ জন সার্জেন্ট, ২০ জন অ্যাসিসটেন্ট ট্রাফিক সাব-ইন্সপেক্টর ও ৮৮ জন কনস্টেবল। গাড়ির চাপে তারা রীতিমতো দিশাহারা।