এক মাস ৪ দিন মহাসমারোহে চলার পর শেষ হলো ক্রেতা-বিক্রেতার মিলনমেলা, ২২তম ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলা। আজ শেষ দিনেও মেলা প্রাঙ্গণে ক্রেতার ঢল নেমেছিল। সেই সঙ্গে সকাল থেকে রাত অবধি ছিল কেনা-কাটার ধুম। এদিকে মেলার সমাপনি অনুষ্ঠানে রফতানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) ভাইস চেয়ারম্যান মাফরুহা সুলতানা বলেন, এবারের মেলা থেকে ২৪৩ কোটি ৪৪ লাখ টাকার পণ্যের রপ্তানি আদেশ পাওয়া গেছে। এছাড়া এবারের মেলায় ১১৩ কোটি ৫৩ লাখ টাকার পণ্য বিক্রি হয়েছে। ২০১৬ সালের জানুয়ারিতে অনুষ্ঠিত বাণিজ্য মেলায় ২৩৫ কোটি ১৭ লাখ টাকার রপ্তানির আদেশ হয়েছিল। সমাপনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন জনপ্রশাসন মন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম। বিশেষ অতিথি অর্থ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব হেদায়েতুল্লাহ আল মামুন, এফবিসিসিআই সভাপতি মাতলুব আহমেদ, ইপিবির ভাইস চেয়ারম্যান বেগম মাফরুহা সুলতানা।
আগারগাঁওয়ে আয়োজিত ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলা গত ৩১ জানুয়ারি শেষ হওয়ার কথা থাকলেও ব্যবসায়ীদের অনুরোধে শেষ মুহূর্তে মেলার সময় আরও চারদিন বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেয় ইপিবি। প্রধান অতিথির বক্তব্যে সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম বলেন, ব্যবসায়ীরাই দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে, আরো এগিয়ে নিয়ে যাবে। তার সঙ্গে কৃষকরাও তাল মিলিয়ে যাচ্ছে। উদ্ভাবনের দিক দিয়ে বাংলাদেশ অনেক বেশি এগিয়ে গেছে। বাণিজ্য মেলা সেই উদ্ভাবনী শক্তিকে উৎসাহ জোগাবে, ভবিষৎতে এই মেলা আরও বড় পরিসরে হবে।তিনি আরো বলেন, শিল্প-বাণিজ্য সব ক্ষেত্রে বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। এক সময় বাংলাদেশকে তলাবিহীন ঝুড়ি বলা হতো, কিন্তু এখন স্বনির্ভর বাংলাদেশ। বিশ্বের সব দেশ এখন বাংলাদেশকে সমীহ করে। অনেক প্রতিকূলতার মধ্যেও আমরা এগিয়ে যাচ্ছি, অল্প দিনের মধ্যেই মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হবে বাংলাদেশ।হেদায়েতুল্লাহ আল মামুন বলেন, মাসব্যাপী মেলা সফল করার জন্য ব্যবসায়ীরা সবচেয়ে বেশি ভূমিকা রেখেছেন। এক্ষেত্রে ইপিবি প্রতিবছর বেশ পরিশ্রম করে। মেলা আয়োজনে আমরা সফল বলেই মানুষ যানজট উপেক্ষা করে মেলায় আসে। তাই মেলাও প্রাণবন্ত হয়েছে।
মাতলুব আহমেদ বলেন, গণতান্ত্রিক পরিবেশে সবার সহযোগিতায় শেষ হলো মেলা। এক সময় বাণিজ্য মেলায় আমি বাঁশ দিয়ে স্টল বানিয়েছিলাম। সেই গন্ডি ছাড়িয়ে আজ বিশাল প্যাভিলিয়ন ও স্টল হয়েছে।ইপিবির ভাইস চেয়ারম্যান বেগম মাফরুহা সুলতানা বলেন, এবার রপ্তানি অর্ডার পাওয়া গেছে ২৪৩ দশমিক ৪৪ কোটি টাকার। পণ্য বিক্রি হয়েছে ১১৩ দশমিক ৫৩ কোটি টাকার। গতবারের চেয়ে এবার মেলায় ভালো বিক্রি হয়েছে। এবার কোন ধরনের ঝামেলা ছাড়াই সুষ্ঠুভাবে মেলা শেষ হয়েছে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
সামপনী অনুষষ্ঠানে মেলায় অংশ নেওয়া প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে সেরা প্যাভিলিয়ন ও স্টলের পুরস্কার দেওয়া হয়। বরাবরের মতো এবারও ২২তম ঢাকা আর্ন্তজাতিক বাণিজ্যমেলায় সর্বোচ্চ ভ্যাটদাতা এবং প্রিমিয়ার প্যাভিলিয়ন ক্যাটাগরিতে প্রথম পুরষ্কার পেয়েছে ওয়ালটন। সেরা প্যাভিলিয়ন ক্যাটাগরীতেও প্রথম পুরস্কার লাভ করে ওয়ালটন হাই-টেক ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড। দ্বিতীয় পুরস্কার পেয়েছে তিনটি প্রতিষ্ঠান,এগুলো হচ্ছে আকতার ফার্নিচার, হাতিল ফার্নিচার ও আকিজ ফুড এন্ড বেভারেজ। একই ক্যাটাগরীতে নাদিয়া ফার্নিচার,অলিম্পিক ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড ও কোকোলা ফুড প্রডাক্টস পায় তৃতীয় পুরস্কার।
সাধারণ প্যাভিলিয়ন ক্যাটাগরিতে প্রথম পুরস্কার পেয়েছে কারুপণ্য রংপুর। দ্বিতীয় পুরস্কার পেয়েছে আলিবাবা ডোর এন্ড ফার্নিচার এবং তৃতীয় পুরস্কার পেয়েছে মৌসুমী টেক্সটাইল লিমিটেড। সংরক্ষিত প্যাভিলিয়ন ক্যাটাগরিতে সেরা হয়েছে জয়ীতা ফাউন্ডেশন,দ্বিতীয় হয়েছে বন শিল্প উন্নয়ন করপোরেশন এবং তৃতীয় হয়েছে জেডিপিসি। প্রিমিয়ার মিনি প্যাভিলিয়নে সেরা হয়েছে রহিম অফরোজ, দ্বিতীয় আব্দুল মোনেম লিমিটেড এবং তৃতীয় হয়েছে দুটি প্রতিষ্ঠান-গোল্ডেন হার্ভেস্ট লিমিটেড এবং বিআরবি কেবল। সাধারণ মিনি প্যাভিলিয়নে প্রথম হয়েছে রংপুর মেটাল লিমিটেড, দ্বিতীয় আহমেদ ফুড প্রডাক্টস এবং তৃতীয় আফতাব বহুমুখি ফার্ম। এছাড়া সংরক্ষিত মিনি প্যাভিলিয়ন, প্রিমিয়ার স্টল ফুড স্টল, সাধারণ স্টল, মহিলা উদ্যোক্তা, বিদেশী ক্যাটাগরি এবং সেবা প্রতিষ্ঠানগুলো পুরস্কৃত করা হয়।