প্রথম বিভাগ থেকে উঠে আসা দল খেলাঘর সমাজ কল্যাণ সমিতি ফের চমক দেখাচ্ছে। গতকাল নিজেদের সপ্তম ম্যাচে ২০ রানে হারিয়ে দিয়েছে লীগের শক্তিশালী দল শেখ জামাল ধানমন্ডি ক্লাবকে। প্রথম ম্যাচে চ্যাম্পিয়ন আবাহনীর বিপক্ষে দারুণ শুরু করেছিল ঢাকা প্রিমিয়ার লীগের এই আসরের নয়া দলটি। সেই ম্যাচে জয় না পেলেও দলটি প্রায় প্রতিটি ম্যাচেই গড়ে তুলছিল প্রতিযোগিতা। ৬ ম্যাচের মধ্যে প্রথম জয় পায় পারটেক্সের বিপক্ষে ও তাদের দ্বিতীয় শিকার ভিক্টোরিয়া স্পোটিং ক্লাব। ৩ জয়ে ৬ পয়েন্ট নিয়ে ধীরে ধীরে যেন সামনে এগিয়ে যাচ্ছে নাফিস ইকবালের দল। গতকাল বিকেএপি-৪ মাঠে খেলাঘরের জয়ের অন্যতম নায়ক রবিউল ইসলাম রবি। এই ওপেনিং ব্যাটসম্যান লীগে তুলে নিয়েছেন তার দ্বিতীয় সেঞ্চুরি। এই আসরে তিনিই এখন দু’টি সেঞ্চুরির মালিক। তার ১০৩ রানের সুবাদে টসে জিতে ব্যাট করতে নেমে হাতে দুই উইকেট রেখে ২৬৬ রান করে তারা।
শেখ জামালের পক্ষে দ্বিতীয়বার পাঁচ উইকেট নিয়ে দলকে জেতাতে পারেনি অধিনায়ক আবদুর রাজ্জাক। ব্যাট করতে নেমে লড়াই জমিয়ে জিয়াউর রহমান ও রাজিন সালেহ জোড়া ফিফটি করেও ম্যাচ বাঁচাতে পারেননি। রাজশাহীর ২৬ বছর বয়সী রবিই হয়েছেন ম্যাচসেরা।
২৬৭ রানের জবাব দিতে নেমে শেখ জামাল ৩ উইকেট হারায় মাত্র ২২ রানে। এরপর প্রশান্ত চোপড়ার সঙ্গে ৫৩ ও জিয়াউর রহমানের সঙ্গে ?১০৮ রানের দু’টি জুটিতে ধাক্কা সামলে দলকে ভালো অবস্থানে নিয়ে যান রাজিন সালেহ। এক সময়ে শেখ জামালের স্কোর ছিল ৪ উইকেট ১৮৩ রান। ৬২ বলে ৬টি চার ও ৪টি ছক্কায় ৭৫ রানের ঝড়ো ইনিংস খেলা জিয়া রান আউট হলে ম্যাচ হেলে পড়ে খেলাঘরের দিকে। এরপর নিয়মিত বিরতিতে উইকেট হারিয়ে আর পেরে ওঠেনি দলটি। লম্বা সময় এক প্রান্ত আগলে রাখা রাজিনের ১১৭ বলে খেলা ৭৬ রানের ইনিংসটি গড়া ৫টি চারে। ৪১ রানে ৪ উইকেট নিয়ে তানভির ইসলাম খেলাঘরের সেরা বোলার। লিস্ট ‘এ’ ক্রিকেটে এটাই তার সেরা বোলিং।
এর আগে এর আগে সালাউদ্দিন পাপ্পুর সঙ্গে ৮৩ রানের উদ্বোধনী জুটিতে দলকে ভালো শুরু এনে দেন রবি। অধিনায়ক নাফিস ইকবালের দ্রুত বিদায়ের পর অমিত মজুমদারের সঙ্গে গড়েন ১২৬ রানের আরেকটি দারুণ জুটি। ৭৪ বলে ৫৮ রান করা অমিতকে ফিরিয়ে বিপজ্জনক হয়ে উঠা জুটি ভাঙেন রাজ্জাক। পরের বলে বিদায় করেন রবিকে। আগের ম্যাচে ১০৭ রান করা এই ওপেনিং ব্যাটসম্যানের ১২৬ বলে খেলা ১০৩ রানের ইনিংসটি ১০টি চার ও দু’টি ছক্কায় সাজানো। গতকালের পাঁচটি সহ ২১ উইকেট নিলেন দীর্ঘ দিন ধরে জাতীয় দলের বাইরে থাকা বাঁহাতি স্পিনার রাজ্জাক। লিস্ট ‘এ’ ক্রিকেটে এ নিয়ে নবমবার পেলেন পাচ উইকেট।
৫ উইকেট নিয়ে হাসপাতালে রাজ্জাক
শেখ জামাল ধানমন্ডি ক্লাব ও বসুন্ধরা গ্রুপের কর্ণধার বিকেএসপিতে এসেছিলেন হেলিকপ্টারে চড়ে। একটি নয় নিজ দলের ম্যাচ দেখাতে সঙ্গীদের নিয়ে এসেছিলেন আরও একটি হেলিকপ্টারে। ঢাকার ক্লাব ক্রিকেটে এই দৃশ্য খুব একটা আগে দেখা যায়নি। তাই বিকেএসপিতে থাকা শিক্ষার্থীদেরও আগ্রহ কম ছিল না। কিন্তু এত ঘটা করে এসেও দলের জয়ের সুখবর পাননি তিনি। তবে সুবিধা হয়েছে অধিনায়ক আবদুর রাজ্জাক। তিনি আহত হলে সেই হেলিকপ্টারে করেই নিয়ে যেতে হয়েছে হাসপাতালে। পরের খেলায় খেলতে পারবেন না রাজ্জাক তা নিশ্চিত। জানান কোচ দীপু রায় চৌধুরী। বলেন, এরপর পরীক্ষা নিরীক্ষার পর বোঝা যাবে কতটা গুরুতর তারা চোট।
বল হাতে পাঁচ উইকেট নিলেও, আব্দুর রাজ্জাকের দল শেখ জামাল ধানমন্ডি ক্লাব হেরেছে শেষ পর্যন্ত ২০ রানের ব্যবধানে। এর আগে দলের বিপদে ব্যাট হাতে মাঠে নেমেছিলেন অধিনায়ক। কিন্তু ১০ রানের মাথায় রান আউট থেকে বাঁচতে গিয়ে চোট পান রাজ্জাক। তিনি রিটায়ার হার্ট হয়ে যখন মাঠ ছাড়ছিলেন, তখন ২৩৫ রানে ব্যাট করছিল ধানমন্ডির দলটি।
নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে বাজেভাবে পড়ে যান মাঠে। অবস্থার উন্নতি না হওয়ায় স্ট্রেচারে করে মাঠের বাইরে নেয়া হয় তাকে। পরে হেলিকপ্টারে রাজধানীর ইউনাইটেড হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় তাকে।
সংক্ষিপ্ত স্কোর: (বিকেএসপি-৪)
শেখ জামাল-খেলাঘর সমাজ কলাণ সমিতি
টস: খেলাঘর সমাজ কলাণ সমিতি
খেলাঘর সমাজ কল্যাণ: ৫০ ওভারে ২৬৬/৮ (রবি ১০৩, সালাউদ্দিন ৪৬, অমিত ৫৮, রাজ্জাক ৫/৫২, সানি ২/৪১, সোহাগ ১/৩৮)
শেখ জামাল ধানমন্ডি ক্লাব: ৪৭.২ ওভারে ২৪৬ (চোপড়া ৪৪, আল মামুন ০, রাজিন ৭৬, জিয়া ৭৫, তানভীর ৪/৪১, ডলার ১/৩৪)
ফল: খেলাঘর ২০ রানে জয়ী
ম্যাচসেরা: রবিউল ইসলাম রবি।