আবাসিক ভবন নির্মাণের জন্য বনানী আবাসিক এলাকার ‘কে’ ব্লকের ২৭ নম্বর সড়কের ৪৯ নম্বর প্লটের নকশা অনুমোদন দেয়া হয়। ৫ কাঠা ৮ ছটাক ২২ বর্গফুটের ওই প্লটে এখন চলছে আলোচিত রেইনট্রি হোটেলের কার্যক্রম। অবশ্য কার্যক্রম শুরুর আগেই রেইনট্রি হোটেলকে ‘অবৈধ’ জানিয়ে চিঠি দেয় রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক)। রাজউক বলেছে, আবাসিক ভবনে বাণিজ্যিক কার্যক্রম চালানো ইমারত নির্মাণ বিধিমালার পরিপন্থি। কারণ বাণিজ্যিকভাবে পরিচালনার জন্য হোটেল রেইনট্রির নকশা অনুমোদন দেয়া হয়নি। এজন্য পত্র পাওয়ার পরই হোটেলের কার্যক্রম বন্ধে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে বলা হয়। রাজউকের দুই দফা চিঠিকেও পাত্তা দেয়নি প্রতিষ্ঠানটি। সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্রে জানা গেছে, গত ৯ই এপ্রিল আনুষ্ঠানিকভাবে কার্যক্রম পরিচালনা শুরু করে সিঙ্গাপুরভিত্তিক চেইন হোটেল ‘রেইনট্রি’। কার্যক্রম শুরুর ছয় দিনের মাথায় হোটেলটি বন্ধ করে দিয়ে গ্যাস, পানি ও বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন রাজউকের মোবাইল কোর্ট। কিন্তু এরপর উচ্চ আদালতের স্থগিতাদেশ নিয়ে কার্যক্রম পরিচালনা করছে রেইনট্রি হোটেল। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, গত ২৮শে মার্চ এই হোটেলেই জন্মদিনের অনুষ্ঠানে দাওয়াত দিয়ে দুই তরুণীকে ধর্ষণ করা হয় বলে গত ৬ই মে করা মামলায় অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগীদের একজন। এরপর থেকে হোটেলটির নাম দেশে-বিদেশে ছড়িয়ে পড়েছে। সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশ হয় ঝালকাঠি-১ আসনের সংসদ সদস্য বজলুর রহমান হারুন ওরফে বিএইচ হারুন হোটেলটির মালিক। কিন্তু এমপি হারুন বলেন, আমি নই, আমার ছেলেরা এ হোটেলটি চালান। অনুসন্ধানে জানা গেছে, বনানী ‘কে’ ব্লকের ২৭ নম্বর সড়কের ৪৯ নম্বর প্লটের ক্রয় সূত্রে মালিক বজলুর রহমান হারুনের স্ত্রী মুনিরা আক্তার। তার নামে থাকা প্লটেই আবাসিক ভবনের নকশা অনুমোদন নিয়ে বাণিজ্যিক ‘রেইনট্রি’ হোটেল নির্মাণ করা হয়েছে। এদিকে রেইনট্রি হোটেলের আবাসিক রাস্তাকে বাণিজ্যিক ঘোষণা করাতে যারপরনাই চেষ্টা করছেন ঝালকাঠি-১ আসনের সংসদ সদস্য বজলুর রহমান হারুন। ২০১৬ সালের নভেম্বরে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রীর কাছে এ সংক্রান্ত আধা সরকারি পত্র (ডিও লেটার) পাঠিয়েছেন তিনি। ওই ডিও লেটারে বনানী আবাসিক এলাকার ‘কে’ ব্লকের ২৭ নম্বর সড়কের ৪৯ নম্বর প্লটটি বাণিজ্যিককরণের অনুরোধ করা হয়েছে। ডিও লেটারে তিনি বলেছেন, এ প্লটটি আমার স্ত্রী মনিরা আক্তার ক্রয়সূত্রে মালিক। এই প্লটের সামনে ৬০ ফুট প্রশস্ত রাস্তা রয়েছে। এ ছাড়া এটি কামাল আতাতুর্ক এভিনিউ- এর সঙ্গে সংযুক্ত। ২৮নং রোডের কর্নার প্লট। এ ছাড়া এই রাস্তার সামনে রয়েছে বিশাল মাঠ, যা বনানী মাঠ নামে পরিচিত। এতে বলা হয়, ২৭নং রাস্তাটির সংযোগ সড়ক কামাল আতাতুর্ক এভিনিউ ও বনানী বাজারের সঙ্গে সংযুক্ত বীরশ্রেষ্ঠ আমিনুল ইসলাম সড়ক রোড নং-১৭ কে ইতিমধ্যেই রাজউক বাণিজ্যিকভাবে ব্যবহারের অনুমতি দিয়েছে। এ ছাড়া ২৭নং রাস্তাটি গুলশান থেকে আসা কামাল আতাতুর্ক এভিনিউ ব্যবহারকারী পথচারীরা বেশি ব্যবহার করে এই কারণে যে এই রাস্তা দিয়ে বনানী গোরস্তানের সামনে দিয়ে খুব সহজেই বিমানবন্দর সড়কে ঢুকতে পারে। এ দিকগুলো মূল্যায়ন সাপেক্ষে সরজমিনে তদন্তে এলে কর্তৃপক্ষের কাছে এটা প্রতীয়মান হবে যে, এই ২৭ নং রাস্তাটি বাণিজ্যিককরণের জন্য যথোপযুক্ত। ডিও লেটারে বলা হয়েছে, বনানী ‘কে’ ব্লকের ২৭ নং রাস্তার ৪৯ নং প্লটের মালিক মনিরা আক্তার তার প্লটে রাজউকের নকশা অনুযায়ী বহুতল ভবন নির্মাণ করেছেন। এর পাশাপাশি বাণিজ্যিক ভিত্তিতে বিদ্যুৎ ও গ্যাস সংযোগ এবং সোলার প্যানেল স্থাপন করা হয়েছে। একটি বাণিজ্যিক ভবনে যে ধরনের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা ও সুযোগ সুবিধা থাকা প্রয়োজন তার সব কিছুই রয়েছে এই ভবনটিতে। আবাসিক থেকে বাণিজ্যিক করার ক্ষেত্রে রাজউকের নীতিমালা অনুসরণ ও রাজউক কর্তৃক নির্ধারিত ফি দিতে অঙ্গীকারবদ্ধ এই প্লটের মালিক মনিরা আক্তার। তাই বনানী আবাসিক এলাকার ‘কে’ ব্লকের ২৭নং রাস্তার ৪৯নং প্লটের আবাসিক ভবনটিকে বাণিজ্যিক ভবনে রূপান্তর করার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার জন্য বিশেষভাবে অনুরোধ করছি। রাজউকে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রাজউক নিয়ম অনুযায়ী রাস্তা বাণিজ্যিক করছে। আলোচ্য প্লটের রাস্তাটি ছোট হওয়ায় আপাতত এটি বাণিজ্যিক করার পরিকল্পনা নেই। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ১৯৮৯ সালের সেপ্টেম্বরে পাঁচ কাঠা ৮ ছটাক ২২ বর্গফুটের প্লটটি কেনেন বিএইচ হারুন। এরপর ১৯৯৮ সালে ঢাকা ব্যাংক থেকে ঋণ নেন। যদিও ওই ঋণ পরিশোধের কাগজপত্র তিনি জমা দিয়েছেন। রাজউক সূত্রে জানা গেছে, ২০০৫ সালে আবাসিক প্লটকে অ-আবাসিক কাজে ব্যবহারের অভিযোগ উঠে প্লটের মালিক মুনিরা আক্তারের বিরুদ্ধে। ওই বছরের ৩০শে জুলাই রাজউক থেকে চিঠি দিয়ে অ-আবাসিক ব্যবহার বন্ধের জন্য বলা হয়। নানা দেনদরবার শেষে ২০০৬ সালের ৫ই এপ্রিল অ-আবাসিক ব্যবহারের অভিযোগ থেকে মুনিরা আক্তারকে অব্যাহতি দেয়া হয়। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ২০১১ সাল থেকেই ‘রেইনট্রি’ হোটেল নির্মাণের কার্যক্রম শুরু করা হয়। কারণ ওই বছরের ৩১শে জুন বিএইচ হারুনের স্ত্রী মুনিরা আক্তারকে সংশোধিত নকশা অনুমোদনের ছাড়পত্র দেয়া হয়। একই বছরের ২০শে ডিসেম্বর আবাসিক ভবন নির্মাণের জন্য সংশোধিত নকশা অনুমোদন দেয় রাজউক। এরপর আবাসিক ভবনের নামে বাণিজ্যিক ‘রেইনট্রি’ হোটেল নির্মাণ করা হয়েছে। রাজউকের নীতিমালা অনুযায়ী আবাসিক ও বাণিজ্যিক এলাকা আলাদা করা আছে। আবাসিক এলাকায় বাণিজ্যিক স্থাপনার বিরুদ্ধে অভিযান চলবে বলে ঘোষণা রয়েছে। রাজউকের অঞ্চল-৪ অথরাইজড অফিসার আদিলুজ্জামান বলেন, বনানী আবাসিক এলাকা। এখানে বাণিজ্যিক ভবনের অনুমোদন দেয়ার কোনো সুযোগ নেই। সেই অনুমোদন নেয়াই হয়নি।