ইরানে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ভোট অনুষ্ঠিত হয়েছে গতকাল। ক্ষমতাসীন প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানি দ্বিতীয় মেয়াদে লড়ছেন। ৬৮ বছর বয়সী মধ্যপন্থি রুহানির বিরুদ্ধে লড়ছেন আরো তিন প্রার্থী। এদের মধ্যে এবরাহিম রাইসি (৫৬) আবির্ভূত হয়েছেন তার মূল চ্যালেঞ্জার হিসেবে। প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানি ২০১৫ সালে নিরাপত্তা পরিষদের ৫ সদস্যরাষ্ট্র ও জার্মানির (পি৫+১) সঙ্গে পারমাণবিক চুক্তি করেন। এ চুক্তির আওতায় ইরানের বিরুদ্ধে অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার ছাড়াও দেশটির বাজেয়াপ্ত শ’ শ’ কোটি ডলার ছেড়ে দেয়ার বিনিময়ে দেশটি নিজের পারমাণবিক কর্মসূচি সীমিত করতে সক্ষম হয়। অপরদিকে তার মূল প্রতিদ্বন্দ্বী এবরাহিম রাইসিকে দেখা হয় একজন কট্টরপন্থি হিসেবে। সাবেক শীর্ষ সরকারি কৌঁসুলি এবরাহিম রাইসি দেশটির সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনির ঘনিষ্ঠ। এমনকি তাকে পরবর্তী ‘আয়াতুল্লাহ’ হিসেবেও অনেকে মনে করেন। বিবিসির খবরে এসব বলা হয়।
খবরে আরো বলা হয়, ইরানের নিয়মানুযায়ী এই নির্বাচনে কোনো প্রার্থী ৫০ শতাংশের বেশি ভোট না পেলে পরের সপ্তাহে সবচেয়ে বেশি ভোট পাওয়া দুই প্রার্থীর মধ্যে চূড়ান্ত লড়াই হবে। উল্লেখ্য, ১৯৮৫ সালের পর ইরানে প্রত্যেক প্রেসিডেন্ট দ্বিতীয়বার পুনর্নির্বাচিত হয়েছেন। ১৯৮৫ সালে বর্তমান আয়াতুল্লাহ খামেনি ছিলেন ক্ষমতাসীন প্রেসিডেন্ট। সেবার তিনি দ্বিতীয় মেয়াদে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন। এই নির্বাচনে সকাল ৮টায় ভোটগ্রহণ শুরুর কয়েক মিনিট পরই ভোট দেন আয়াতুল্লাহ খামেনি। তিনি নাগরিকদের দিনের শুরুতে ভোটপ্রদানের আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘এই গুরুত্বপূর্ণ নির্বাচনে সকলের ভোট দেওয়া উচিত।’ প্রেসিডেন্ট রুহানি ঘণ্টাখানেক পরে ভোট দেন। এই নির্বাচনে ৫ কোটি ৪০ লাখেরও বেশি ভোটার রয়েছেন।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, দেশজুড়ে ৬৩৫০০ ভোটকেন্দ্র রয়েছে। স্থানীয় সময় সন্ধ্যা ৬টায় ভোটগ্রহণ বন্ধ হওয়ার কথা। তবে পূর্বের নির্বাচনে দেখা গেছে ভোটার উপস্থিতি বেশি থাকায় ভোটদানের সময় কয়েক ঘণ্টা বাড়ানো হয়েছে। আজ ভোটের ফলাফল আসতে পারে।
রক্ষণশীলদের নিয়ন্ত্রণে থাকা প্রভাবশালী ধর্মীয় সংস্থা অভিভাবক পরিষদ এ নির্বাচনে ৬ জনকে লড়ার অনুমতি দেয়। তবে এ সপ্তাহের শুরুতে দুই প্রার্থী সরে দাঁড়ান। প্রথমে সরে দাঁড়ান তেহরানের কট্টরপন্থি মেয়র মোহাম্মেদ বাকের কালিবাফ। তিনি এবরাহিম রাইসিকে সোমবার সমর্থন দিয়েছেন। মঙ্গলবার নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ান বর্তমান ভাইস প্রেসিডেন্ট ইশহাক জাহাঙ্গিরি। সংস্কারপন্থি এই প্রার্থী প্রেসিডেন্ট রুহানির পক্ষে নির্বাচন থেকে নিজেকে প্রত্যাহার করে নেন। তবে সংস্কারপন্থি মোস্তফা হাশেমিতাবা ও উগ্র-রক্ষণশীল প্রার্থী মোস্তফা মিরসালিম এখনও আছেন নির্বাচনে।
বুধবার নির্বাচনী প্রচারাভিযানের শেষ দিনে আয়াতুল্লাহ খামেনি দেশবাসীকে ভোট দেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘আমেরিকান, ইউরোপিয়ান কর্মকর্তারা ও যায়নবাদী গোষ্ঠীর লোকজন আমাদের নির্বাচন ঘনিষ্ঠভাবে দেখছে। তারা দেখছে মানুষ কীভাবে অংশ নিচ্ছে নির্বাচনে।’ তিনি যোগ করেন, ‘ইরানি জাতির শত্রু আছে। আর শত্রুর সম্মুখে দাঁড়িয়ে জনগণের উচিত দৃঢ়তা ও অবিচল থাকা।’ তবে সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা সতর্ক করে বলেন, দেশের নিরাপত্তাকে খর্ব করার যেকোনো প্রচেষ্টা তৎক্ষণাৎ প্রতিক্রিয়ার মাধ্যমে রুখে দেয়া হবে। উল্লেখ্য, ইরানে প্রেসিডেন্ট জনগণের ভোটে নির্বাচিত হলেও, সব সিদ্ধান্তে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়ার এখতিয়ার রয়েছে আয়াতুল্লাহর। আয়াতুল্লাহ জনগণের ভোটে নির্বাচিত নন।
২০০৯ সালে এক বিতর্কিত নির্বাচনে দ্বিতীয় মেয়াদে জয়লাভ করেন তৎকালীন প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আহমাদিনেজাদ। এ নিয়ে দেশটিতে ব্যপক প্রতিবাদ দেখা দেয়। ১৯৭৯ সালের ইসলামী বিপ্লবের পর দেশটিতে এত বড় প্রতিবাদ আরও কখনও দেখা দেয়নি। লাখ লাখ মানুষ দাবি করেন, তাদের ভোট চুরি করা হয়েছে। তারা পুনর্নির্বাচন দাবি করেন। তবে আয়াতুল্লাহ খামেনি বলেন, নির্বাচনের ফলাফল বৈধ। তিনি ভিন্নমতাবলম্বীদের আটকের নির্দেশ দেন। পরবর্তীতে কয়েক ডজন বিরোধী দলীয় সমর্থক নিহত হন। আটক হন কয়েক হাজার।