বৃটিশ পার্লামেন্ট নির্বাচনে চমক দেখালেন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত তিন কন্যা টিউলিপ সিদ্দিক, রুশনারা আলী ও রূপা হক। এবার তারা বিগত নির্বাচনের চেয়ে বিপুল ভোটে জয়ী হয়েছেন। টিউলিপ এবং রূপা হক দ্বিতীয়বার এমপি হলেন। রুশনারা আলী তৃতীয়বারের মতো সংসদে যাচ্ছেন। বিপুল ভোটে বিজয়ী হওয়ায় তিন কন্যাকে অভিনন্দন জানিয়েছেন প্রেসিডেন্ট আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী ও আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভাগ্নি টিউলিপ সিদ্দিক বিরোধী লেবার পার্টি থেকে লন্ডনের হ্যাম্পস্টেড ও কিলবার্ন আসনে নির্বাচনে অংশ নেন। নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর চেয়ে তিনি প্রায় ১৫ হাজার ভোট বেশি পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন। তিনি পেয়েছেন মোট ৩৪ হাজার ৪৬৪ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী কনজারভেটিভ দলের প্রার্থী পেয়েছেন ১৮ হাজার ৯০৪ ভোট। এর আগের নির্বাচনে তিনি বিজয়ী হয়েছিলেন এক হাজারের কিছু বেশি ভোটে। কিন্তু এবার তিনি সেই ব্যবধান অনেকটা বাড়িয়েছেন। ২০১৫ সালের নির্বাচনের তুলনায় টিউলিপ বেশি ভোট পেয়েছেন শতকরা ১৪.৬ ভাগ। বিজয়ী টিউলিপ বলেছেন, ওয়েস্টমিনস্টারে আমি হবো হ্যাম্পস্টেড ও কিলবার্নের কণ্ঠস্বর। নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে টুইটারে টুইট করেছেন টিউলিপ। তিনি বলেছেন, হ্যাম্পস্টেড ও কিলবার্নে পুনঃনির্বাচিত হওয়ায় আমি উদ্বেলিত। আমাকে সমর্থন করার জন্য সবাইকে ধন্যবাদ। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ছোট মেয়ে শেখ রেহানা ও শফিক সিদ্দিকের তনয়া টিউলিপ লন্ডনের মিচামে জন্মগ্রহণ করেন। টিউলিপের শৈশব কেটেছে বাংলাদেশ, ভারত ও সিঙ্গাপুরে। লন্ডনের কিংস কলেজ থেকে পলিটিক্স, পলিসি ও গভর্মেন্ট বিষয়ে তার স্নাতকোত্তর ডিগ্রি রয়েছে। অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল গ্রেটার লন্ডন এবং সেভ দ্য চিলড্রেনের সঙ্গে কাজ করেন টিউলিপ। মাত্র ১৬ বছর বয়সে লেবার পার্টির সদস্য হয়ে রাজনীতিতে জড়ান টিউলিপ।
বিপুল ভোটে তৃতীয়বারের মতো এমপি হয়েছেন বাংলাদেশের সিলেটে জন্মগ্রহণকারী লেবার দলের প্রার্থী রুশনারা আলী। ২০১৫ সালে তিনি যে ভোট পেয়েছিলেন এবার তার চেয়ে শতকরা ১০ শতাংশ ভোট বেশি পেয়েছেন। এবার তিনি পেয়েছেন ৪২ হাজার ৯শ’ ৬৯ ভোট। তার প্রতিদ্বন্দ্বী কনজারভেটিব দলের প্রার্থী ৭ হাজার ৫৭৬ ভোট পেয়েছেন। অন্যদিকে তার আসনে আরেক বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত প্রার্থী আজমল মাসরুর স্বতন্ত্র নির্বাচন করেন। তিনি পেয়েছেন মাত্র ৩ হাজার ৮শ’ ৮০ ভোট। জয়ী হওয়ার পর রুশনারা এক টুইটে ধন্যবাদ জানিয়েছেন সবাইকে। তিনি টুইটে লিখেছেন, আমাকে পার্লামেন্ট সদস্য নির্বাচিত করায় বেথনাল গ্রিন অ্যান্ড বো আসনের সবাইকে জানাই হৃদয় নিংড়ানো ভালোবাসা। এটা আমাকে দেয়া আপনাদের সম্মান। রুশনারা লন্ডনের বেথনাল গ্রিন অ্যান্ড বো আসন থেকে নির্বাচন করেন। রুশনারার জন্ম ১৯৭৫ সালের ১৪ই মার্চ সিলেটের বিশ্বনাথে। এরপর পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে তিনি চলে যান লন্ডনে। তখন তার বয়স মাত্র ৭ বছর। লন্ডনে গিয়ে তারা বসতি স্থাপন করেন পূর্ব লন্ডনে। সেখানে মালবেরি স্কুল ফর গার্লস এবং পরে টাওয়ার হ্যামলেটস কলেজে পড়াশোনা করেন। রুশনারা বেড়ে উঠেছেন টাওয়ার হ্যামলেটে। সেখানে তার পিতা নিতান্তই একজন শ্রমিক হিসেবে কাজ করেন। তার পরিবারের প্রথম সদস্য হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেন রুশনারা। সেন্ট জোনস কলেজ, অক্সফোর্ডে তিনি পড়াশোনা করেছেন দর্শন, রাজনীতি ও অর্থনীতি নিয়ে।
বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত রূপা হকও আগের বারের চেয়ে বেশি ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন। তিনি লন্ডনের ইলিং থেকে লেবার দলের হয়ে নির্বাচনে অংশ নেন। প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর চেয়ে তিনি ১৩ হাজারেরও বেশি ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন। এর আগে ২০১৫ সালে তিনি ২৭৪ ভোটের ব্যবধানে বিজয়ী হয়েছিলেন। এবারের নির্বাচনে তিনি পেয়েছেন ৩৩ হাজার ৩৭ ভোট। তার প্রতিদ্বন্দ্বী কনজারভেটিব দলের প্রার্থী পেয়েছেন ১৯ হাজার ২শ’ ৭২ ভোট। ১৯৭২ সালে ইলিংয়ে জন্ম নেয়া ড. রূপা হক ১৯৯১ সালে লেবার পার্টির সদস্য হন। তিনি কেমব্রিজে পড়েছেন রাজনীতি, সামাজিক বিজ্ঞান ও আইন বিষয়ে। কিংস্টন ইউনিভার্সিটিতে পড়িয়েছেন সমাজ বিজ্ঞান, অপরাধ বিজ্ঞান, গণমাধ্যম ও সংস্কৃতি অধ্যয়নের মতো বিষয়। পার্লামেন্ট সদস্য হওয়ার আগে তিনি ডেপুটি মেয়র হিসেবে স্থানীয় কাউন্সিলেও দায়িত্ব পালন করেন। ২০০৪ সালে ইউরোপীয় পার্লামেন্টের প্রার্থী হয়েছিলেন রূপা। এছাড়া ২০০৫ সালে চেশাম ও এমারশাম আসন থেকে তিনি লেবার পার্টি থেকে মনোনয়ন পেলেও নির্বাচিত হতে পারেননি। রূপা হকের আদি বাড়ি পাবনা জেলায়।
প্রধানমন্ত্রীর অভিনন্দন: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যুক্তরাজ্যের পার্লামেন্ট নির্বাচনে বঙ্গবন্ধুর নাতনি টিউলিপ রেজওয়ানা সিদ্দিক, রুশনারা আলী এবং ড. রূপা হক পুনঃনির্বাচিত হওয়ায় তাদের আন্তরিক অভিনন্দন জানিয়ে বলেছেন, তাদের এই বিজয়ের মাধ্যমে বাংলাদেশের জনগণের মুখ উজ্জ্বল হয়েছে।
বৃটেনের নির্বাচনে বিজয়ী তিন কন্যা ছাড়াও বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত আরও ১১ জন লড়াইয়ে ছিলেন। ওয়েলউইন অ্যান্ড হ্যাটফিল্ড আসন থেকে লড়ে আনোয়ার মিয়া পেয়েছেন ১৯ হাজার ৫ ভোট। এ আসনে বিজয়ী হয়েছেন কনজারভেটিব দলের প্রার্থী।
বেকেনহাম আসনে লেবার পার্টি থেকে লড়ে মেরিনা আহমেদ পেয়েছেন ১৫,৫৪৫ ভোট। এ আসনেও জিতেছেন কনজারভেটিব প্রার্থী।
থানেট সাউথ আসনে লড়েছেন মেরিনা রওশন। তিনি ভোট পেয়েছেন ১৮,৮৭৫। এ আসনে জয়ী হয়েছেন কনজারভেটিব প্রার্থী।
এডনবার্গ সাউথ ওয়েস্ট আসনে লেবার পার্টির ফয়সল চৌধুরী ১৩,২১৩ ভোট পেয়ে স্কটিশ ন্যাশনাল পার্টির প্রার্থীর কাছে হেরেছেন।
পোর্টস মাউথ নর্থ আসনে লেবার পার্টির রুমেল খান পেয়েছেন ১৫,৮৯৫ ভোট। ওয়াইর ফরেস্ট আসনে লিবারেল ডেমক্রেটিক দল থেকে প্রার্থী হয়েছিলেন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত সাজু মিয়া।
লাইম হাউজ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছিলেন অলিউর রহমান। বার্মিংহাম ইয়ার্ডলি আসনে লড়েন আবু নওশাদ। ইস্ট হাম আসনে আরও দুই প্রার্থী চৌধুরী আফজাল ও মির্জা রহমান প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন।