ঘটনার ৫ বছর পর কুলাউড়ার ৫ মাস বয়সী শিশু ইভা হত্যার রহস্য উদঘাটন করেছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। ইতিমধ্যে মূল হত্যাকারী আবুল মিয়াকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। সে ইভার চাচা। আসামি আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে বলেছে প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করতে মা (ইভার দাদী)-এর নির্দেশে ইভাকে বঁটি দিয়ে গলায় কোপ দিয়ে হত্যা করেছি।
গতকাল পিবিআই মৌলভীবাজার কার্যালয়ে এক প্রেসব্রিফিংয়ে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো: আসলাম উদ্দিন ২০১২ সালের ১৪ই আগস্টে ঘটিত কুলাউড়া উপজেলার ইসলামনগর গ্রামে শিশু ইভা হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদঘাটনের এই দাবি জানান। এই সময় উপস্থিত ছিলেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও পিবিআই মৌলভীবাজার ইউনিটের পুলিশ পরিদর্শক মোহাম্মদ তরিকুল ইসলাম।
পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) মৌলভীবাজার কার্যালয়ে প্রেসব্রিফিং এ অতিরিক্ত পুলিশ সুপার লিখিত বক্তব্যে বলেন, কুলাউড়া ভাটেরা ইউনিয়নের ইসলামনগর গ্রামের মুক্তার মিয়ার ছেলে নিজাম মিয়া (৩৭) ও তার ভাইদের সঙ্গে একই গ্রামের মৃত রহমত আলীর ছেলে মাসুক মিয়া (৪৫)ও তার ভাইদের জমিজমা নিয়ে বিরোধ ছিল। ২০১২ সালের ১৪ই আগস্ট মাসুক মিয়া দলবল নিয়ে বিরোধীয় জমিতে গেলে নিজাম মিয়ার স্ত্রী রুবিনা বেগম তার কন্যা মীমকে কোলে নিয়ে বিরোধীয় জমিতে গিয়ে বাধাদানসহ হল্লা চিৎকার করলে মাসুক মিয়া ও তার লোকজন রুবিনা বেগমকে মারপিট করে। এই সময় নিজামের মা বিরু বেগম শিশু ইভার লাশ হাতে নিয়ে বিরোধীয় জমির দিকে এসে বলেন মাসুক ও তার লোকজন ইভাকে হত্যা করেছে। এই ঘটনায় নিজাম মিয়া বাদী হয়ে কুলাউড়া থানায় মামলা করে। কুলাউড়া থানার দুইজন এসআই মামলা তদন্ত করে উক্ত হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদঘাটন করতে না পেরে ১৭/১/১৩ চূড়ান্ত রিপোর্ট আদালতে দাখিল করেন। বাদী না-রাজির প্রেক্ষিতে আদালতের নির্দেশে কুলাউড়া থানা পুনরায় তদন্ত করে এবং চূড়ান্ত রিপোর্ট দেয়। বাদী আবার না-রাজি দিলে আবেদন মঞ্জুর করে আদালত অধিকতর তদন্তের জন্য জেলা গোয়েন্দা শাখাকে নির্দেশ দেন। জেলা গেয়েন্দা শাখার এইসআই মোবারক হোসেন এক বছর তদন্ত করে উক্ত হত্যাকাণ্ডে কে বা কারা জড়িত তা বের করতে না পেরে ২১শে এপ্রিল ২০১৫ আদালতে চূড়ান্ত রিপোর্ট দাখিল করে। বাদী আবার না রাজি দাখিল করলে আদালতের নির্দেশে ১/২/১৭ ইং পিবিআই মৌলভীবাজার কার্যালয়ের পুলিশ পরিদর্শক মোহাম্মদ তরিকুল ইসলাম মামলার তদন্ত শুরু করেন। গত ১১ই জুলাই সিলেটের গোলাপগঞ্জ উপজেলার আলমপুর গ্রাম থেকে বাদীর আপন ভাই নিহত শিশু ইভার চাচা আবুল মিয়া ওরফে আবদুল্লাহ (৩৩)কে গ্রেপ্তার করে মৌলভীবাজার কার্য়ালয়ে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করলে সে ঘটনার সঙ্গে জড়িত বলে স্বীকার করে এবং পরবর্তীতে ১২ই জুলাই আদালতে সোপর্দ করলে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদান করে।
প্রেসব্রিফিং-এ লিখিত বক্তব্যে পিবিআই এর এই কর্মকর্তা জানান, আসামি আবু মিয়া আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে বলেছে প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করার জন্যই তার মা (শিশু ইভার দাদী) বিরু বেগম তার ভাতিজি ঘুমন্ত শিশু ইভাকে উঠানে রেখে তার হাতে বঁটি দা দিয়ে কোপ দিতে বলে। তখন উঠানে তার ভাই নিজাম ও রাশেদ ছিল। ইভার গলায় কোপ দিলে শিশু ইভা ঘটনাস্থলেই মারা যায়। তার মা বিরু বেগম পানি ঢেলে ঘটনাস্থলের রক্ত পরিষ্কার করেন। পিবিআই-এর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আসলাম উদ্দিন সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে জানিয়েছেন ইতিমধ্যে মামলার একজন অন্যতম সাক্ষী আবদুল আজিজ ও ইভার দাদী বিরু বেগম মৃত্যুবরণ করেছেন। ইভার মা ও পিতা পলাতক রয়েছেন। তাদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা অব্যাহত আছে। এই মামলার রহস্য উদঘাটনে প্রযুক্তির সহায়তা নেয়া হয়েছে।