কয়েক মাস ধরে সময়টা ভালো যাচ্ছে না সাঁতারু মাহফুজা খাতুন শিলার। গত জুনে হঠাৎই শিলার মায়ের ব্রেস্ট ক্যানসার ধরা পড়ে। মায়ের চিকিৎসার জন্য তাই হাসপাতালে ছোটাছুটি করতে হয়েছে তাকে। মাকে ভারতের একটি হাসপাতালে রেখে বিশ্ব সাঁতার চ্যাম্পিয়নশিপের ক্যাম্পে যোগ দিয়েছিলেন এসএ গেমসে ডাবল সোনা জয়ী এই সাঁতারু। মাথায় মায়ের চিকিৎসার টেনশন নিয়ে দিন দশেকের ট্রেনিংয়ে শিলা অংশ নিয়েছেন হাঙ্গেরিতে অনুষ্ঠিত এই চ্যাম্পিয়নশিপে। এতসব প্রতিবন্ধকতার মধ্যেও খুব একটা খারাপ করেননি এই জলকন্যা। সদ্য ফিনা বিশ্ব সাঁতার চ্যাম্পিয়নশিপ শেষে দেশে ফিরে শিলা নয়া যুদ্ধে নেমেছেন। এবার তার যুদ্ধ পুলে ঝড় তোলা নয়, তার যুদ্ধ মাকে সুস্থ করার। মায়ের অসুস্থতা নিয়ে শিলা বলেন, আমার মায়ের চিকিৎসা করাতে অনেক টাকার প্রয়োজন। আমি সেই টানা সংগ্রহের চেষ্টা করছি। গতকাল যোগাযোগ করেছি কনফিডেন্স গ্রুপের সঙ্গে। এসএ গেমসে সোনা জয়ের পর তারা আমাকে সংবর্ধনা দিয়েছিল। সেখানে তারা আমার বাবা মায়ের চিকিৎসার সব খরচ দেবার আশ্বাস দিয়েছিলেন। তাদের আশ্বাসের ভিত্তিতেই আমি তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছি।
বিশ্ব সাঁতার চ্যাম্পিয়নশিপে নিজের পারফরমেন্সে নিয়ে এ সাঁতারু বলেন, মায়ের চিকিৎসার কারণে আমি ঠিকমতো অনুশিলন করতে পারেনি। তারপরেও আমার টাইমিং খারাপ হয়নি। তবে আমরা যদি দেশে ইলেক্ট্রনিক্স টাইমিংয়ে অনুশীলন করতে পারতাম তবে আমাদের আরো ভালো করার সুযোগ ছিল। অনুশীলনে এসবের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করে শিলা বলেন, আসলে আমাদের এখানে ইলেক্ট্রন্িকস টাইম নেই। ইলেক্ট্রনিক্স বোর্ডও নেই। তাছাড়া স্টার্টিং টাইমও আন্তর্জাতিক মানের নয়। ১৯৯৩ সালের সাফ গেমসে তৈরি করা হয়েছিল এটি। যা এখন পুরনো। এই জিনিসগুলো আমাদের খুবই দরকার। এগুলো থাকলে আমরা আমাদের অবস্থান বুঝতে পারবো। গত মাসে হাঙ্গেরির বুদাপেস্টে অনুষ্ঠিত ৫০ মিটার ব্রেস্ট স্ট্রোকে ৩৬.৫৩ সেকেন্ড সময় নিয়ে ৫২ সাঁতারুর মধ্যে ৪১তম হয়েছেন শিলা। যদিও এই ইভেন্টে সাউথ এশিয়ান (এসএ) গেমসে স্বর্ণজয়ী এই সাঁতারুর সেরা টাইমিং ছিল ৩৪.৮৫। তবে প্রথম বারের মতো ৫০ মিটার ফ্রি স্টাইলে অংশ নিয়ে খারাপ করেননি যশোরের এই সাঁতারু। এই ইভেন্টে ৩০.৭৩ সেকেন্ড নিয়ে শিলা ৮৩ সাঁতারুর মধ্যে হয়েছেন ৭৪তম। যদিও অনুশীলন কম থাকায় ১০০ মিটার ব্রেস্ট স্ট্রোকে পুলেই নামেননি তিনি। ‘বিশ্ব সাঁতারে যে খুব ভালো হয়েছে তা নয়। আবার খারাপও বলব না। আসলে অনেকগুলো বিশ্ব রেকর্ড এবং গেম রেকর্ড হয়েছে। ওরা অনেক এগিয়ে গেছে। সেই তুলনায় আমরা পিছিয়ে রয়েছি’ বলেন তিনি। শিলার সঙ্গেই দেশে ফিরেছেন জুয়েল আহমেদও। ৫০ মিটার ব্যাকস্ট্রোকে হিটেই সাঁতার শেষ করেছেন সেনাবাহিনীর সাঁতারু জুয়েল আহমেদ। ২৮.৫০ সেকেন্ড সময় নিয়ে মোট ৫৩ জন সাঁতারুর মধ্যে ৪৬তম হয়েছেন জুয়েল। তিনি সময় নিয়েছিলেন এক মিনিট ৩.৫৫ সেকেন্ড। অপর সাঁতারু মাহফিজুর রহমান সাগর টুর্নামেন্ট শেষে সরাসরি চলে গেছেন থাইল্যান্ডে। সেখানে তিন বছরের স্কলারশিপে আছেন সাগর।