দেশের ফুটবলের দুই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী আবাহনী-মোহামেডান ম্যাচের উত্তাপ হারিয়েছে অনেক আগেই। পরিণত হয়েছে ক্ষয়ে যাওয়া অতীতের নস্টালজিয়ায়। এই খেলা নিয়ে টান টান আগ্রহ নেই সাধারণ দর্শকদের। কিন্তু ঐতিহ্য মেনেই কিছু দর্শক মাঠে আসেন, উৎসাহ দেন নিজের প্রিয় দলকে। কারও খেলায় মুগ্ধ হয়ে না, প্রিয় দলকে ভালোবেসেই তাদের এই মাঠে আসা। তাদের একজন পুরান ঢাকার তালেব মিয়া। সত্তর দশক থেকে নিয়মিত স্টেডিয়ামে আসেন। সত্তরোর্ধ এই ব্যক্তি মিরপুরেও আবাহনী-মোহামেডানের লড়াই দেখেছেন নিয়মিত। এক নিশ্বাসে প্রিয় দল মোহামেডানের সেরা একাদশের নাম বলে দিতে পারতেন। এখন দু’চারজন ছাড়া কাউকে চেনেন না। কারোর খেলাও হৃদয়ে দাগ কাটতে পারেন না। এরপরেও আসেন এসব পাগল সমর্থক। গতকালও যেমন আবাহনী-মোহামেডানের নির্জীব ফুটবল দেখতে মাঠে হাজির হয়েছেন হাজার চারেক দর্শক।
দর্শকপ্রিয় এমন ম্যাচ নিয়ে তেমন আগ্রহ নেই খোদ মোহামেডানের কর্মকর্তাদের। নইলে আবাহনীর বিপক্ষে কি কোচ বিহীন মোহামেডান মাঠে নামতে পারে? এনিয়ে আক্ষেপ করে মোহামেডানের সাবেক ফুটবলার জুয়েল রানা বলেন, ভাবা যায় মোহামেডানের কোচ নেই, তাও আবার আবাহনীর বিপক্ষে। এ নিয়ে ক্ষুব্ধ মোহামেডানের সমর্থকরা। আবাহনী-মোহামেডান ম্যাচের এই উত্তাপ হারানোর জন্য মোহামেডানের কর্মকর্তাদের দায়ী করেন তারা। মোহামেডানের মহাপাগল এক সমর্থক বলেন, আবাহনী তবুও চেষ্টা করে ভালো দল গড়ার, বিদেশি কোচ আনে। কিন্তু মোহামেডানের এদিকে নজর নেই। মোহামেডান যদি আবাহনীর মতো শক্তিশালী দল গড়তো তাহলে এমন নিষ্প্রাণ হতো না এই ম্যাচ।
এ নিয়ে আবাহনীর বর্ষীয়ান কোচ অমলেশ সেন বলেন, মাঠে দর্শক আসে না এর দায় কিন্তু আমাদের। আমরা যখন খেলেছি, তখন যে মানের ফুটবলার ছিলো এখন তার বড্ড অভাব। আগে আমরা টাকার চেয়ে আবাহনী মোহামেডানের জার্সিকে প্রাধান্য দিয়েছি। কিন্তু এখনকার ফুটবলারদের কাছে জার্সির চেয়ে টাকা আগে। আবাহনী মোহামেডানের ম্যাচের স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে আবাহনীর এই কোচ বলেন, মোহামেডানের ম্যাচের আগের রাতে আমরা ঘুমাতে পারতাম না। এমনি অনেকের খাওয়া-দাওয়াও বন্ধ হয়ে যেত। অথচ এখনকার ফুটবলারদের কাছে এই ম্যাচের কোনো আবেদনই লক্ষ্য করি না।
সত্যিই তাই, মোহামেডানের অধিনায়ক জাহিদ হাসান এমিলির কাছে এ ম্যাচের কোনো আবেদনই নাই। ‘আসলে ফুটবল যে পর্যায়ে পৌঁছেছে সেখানে আমার কাছে এই ম্যাচের কোনো আবেদন নাই। আট দশটা ম্যাচের মতোই সাধারণ ম্যাচ মনে হয় আমার কাছে।