রায়হান কবির,স্বদেশ নিউজ ২৪.কমঃ আরও দেড় লাখ টন খাদ্যশস্য আমদানি করা হচ্ছে। এর মধ্যে রয়েছে ১ লাখ টন গম এবং ৫০ হাজার টন নন-বাসমতী সেদ্ধ চাল। এতে সরকারের ৩৭৭ কোটি টাকা ব্যয় হবে।
সচিবালয়ে গতকাল বুধবার সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠকে গম ও চাল আমদানির তিনটি আলাদা প্রস্তাব অনুমোদিত হয়। অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন। বৈঠক শেষে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব মোস্তাফিজুর রহমান সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান।
ক্রয় কমিটির সর্বশেষ বৈঠকগুলোর প্রায় প্রতিটিতেই চাল-গম আমদানির প্রস্তাব থাকছে এবং সেগুলো অনুমোদিতও হচ্ছে।
মোস্তাফিজুর রহমান জানান, ৫০ হাজার টন গম আমদানির একটি প্রস্তাবে প্রতি টনের দর ধরা হয়েছে ২৫১ ডলার, বাংলাদেশি মুদ্রায় এ ৫০ হাজার টন গমের জন্য ব্যয় হবে ১০৪ কোটি টাকা। আরেক প্রস্তাবে ৫০ হাজার টন গম আমদানিতে খরচ পড়বে ১০৩ কোটি ৪৯ লাখ টাকা। এ ছাড়া ৫০ হাজার টন চাল আমদানিতে খরচ পড়বে প্রতি টন ৪১১ দশমিক ১১ ডলার হিসাবে ১৭০ কোটি টাকা।
ক্রয় কমিটির গতকালের বৈঠকে মোট ২১টি ক্রয় প্রস্তাব অনুমোদিত হয়েছে বলে জানান মোস্তাফিজুর রহমান। এগুলোর মধ্যে রয়েছে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়, কৃষি মন্ত্রণালয়, খাদ্য মন্ত্রণালয়, সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ, স্থানীয় সরকার বিভাগ এবং বিদ্যুৎ বিভাগের তিনটি করে মোট ১৮টি প্রস্তাব। এর বাইরে রয়েছে রেলপথ মন্ত্রণালয়ের দুটি এবং জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের একটি প্রস্তাব।
জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের প্রস্তাবটির মধ্যে রয়েছে ৮৩ কোটি ৫০ লাখ টাকা ব্যয়ে ভারতের শিলিগুড়ি থেকে ২২ হাজার টন ডিজেল আমদানি। বাংলাদেশ এর আগেও একবার এই উৎস থেকে ডিজেল আমদানি করেছিল।
জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, ভারতের গুয়াহাটিতে এ বছরের মার্চে ভারতের রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান নুমালীগড় রিফাইনারি লিমিটেড (এনআরএল) ও বাংলাদেশ পর্যটন করপোরেশন (বিপিসি) মধ্যে অনুষ্ঠিত বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়, শিলিগুড়ি-রাধিকাপুর-বিরল-পার্বতীপুর রুটে রেলপথে ট্যাংক ওয়াগনের মাধ্যমে ডিজেল আমদানি হবে।
ভারতে উৎপাদিত ডিজেল বাংলাদেশে আমদানিতে ২০১৫ সালের ২০ এপ্রিল বিপিসি ও এনআরএলের মধ্যে ঢাকায় একটি সমঝোতা চুক্তি সই হয়। প্রাথমিক পর্যায়ে বন্ধুত্বের নিদর্শন হিসেবে আন্তর্জাতিক দরের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে ২০১৬ সালে আমদানি করা হয় ২ হাজার ২৬৮ টন ডিজেল। এবার আমদানি করা হবে ২ হাজার ২০০ টন।
মোস্তাফিজুর রহমান জানান, স্থানীয় সরকার বিভাগের তিন প্রস্তাবই হচ্ছে আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা (আইডিএ) এবং সরকারের যৌথ অর্থায়নে এলজিইডির অধীন আশ্রয়কেন্দ্র ও সংযোগ সড়ক নির্মাণ বিষয়ে। ‘বহুমুখী দুর্যোগ আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্প’ এর আওতায় এগুলো নির্মাণ করা হবে।
বিদ্যুৎ বিভাগের তিনটি প্রস্তাব বিদ্যুতের সাবস্টেশন ও রিভার ক্রসিং টাওয়ার নির্মাণ নিয়ে এবং কৃষি মন্ত্রণালয়ের তিনটি প্রস্তাব হচ্ছে ৩০ হাজার করে মোট ৯০ হাজার টন সার কেনার বিষয়ে।
রেলপথ বিভাগের দুই প্রস্তাবের মধ্যে অন্যতম হচ্ছে ‘দোহাজারী হতে রামু হয়ে কক্সবাজার এবং রামু হতে মিয়ানমারের নিকট গুনদুম পর্যন্ত সিঙ্গেল লাইন ডুয়েলগেজ ট্র্যাক নির্মাণ।’ সরকার ও এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) যৌথভাবে এর অর্থায়ন করবে।
ক্রয় কমিটির বৈঠকের আগে অনুষ্ঠিত অর্থনৈতিক বিষয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠকে দুটি বিষয়ে অনুমোদন দেওয়া হয়। একটি হচ্ছে ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ইউরিয়া সারের আমদানি চাহিদা মেটাতে কাতার থেকে রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে ইউরিয়া সার আমদানির জন্য স্বাক্ষরিত চুক্তির ভূতাপেক্ষ অনুমোদন। অন্যটি, ইন্দো-বাংলা ফ্রেন্ডশিপ পাইপলাইনের মাধ্যমে ভারতের এনআরএলের শিলিগুড়ি মার্কেটিং টার্মিনাল হতে জ্বালানি তেল সরবরাহের চুক্তির নীতিগত অনুমোদন।