দাবি, অবিলম্বে রোহিঙ্গা গণহত্যা বন্ধ কর। হাতে প্ল্যাকার্ড। মুখে স্লোগান। হেফাজতে ইসলামের হাজার হাজার কর্মীর বিক্ষোভে গতকাল উত্তাল ছিল রাজধানীর বায়তুল মোকাররম এলাকা। পূর্বঘোষণা অনুযায়ী, মিয়ানমার দূতাবাস ঘেরাও কর্মসূচি থাকলেও বায়তুল মোকাররম থেকে শান্তিনগর পর্যন্ত মিছিল ও সমাবেশ করেছে হেফাজত। পুলিশের বাধা পেয়ে শান্তিনগরে সমাবেশ করে প্রতিনিধির মাধ্যমে মিয়ানমার ও জাতিসংঘ দূতাবাসে স্মারকলিপি জমা দিয়েছে সংগঠনটি। বায়তুল মোকাররমের উত্তর গেটে আয়োজিত সমাবেশে হেফাজত নেতারা রাখাইনে গণহত্যা বন্ধের আহ্বান জানিয়ে বলেন, এই গণহত্যা বন্ধের একমাত্র উপায় স্বাধীন আরাকান রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা। হেফাজতের ঢাকা মহানগরীর সভাপতি ও কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি নূর হোসাইন কাসেমী বলেন, রোহিঙ্গা মুসলিমরা প্রাণ বাঁচাতে এদেশে প্রবেশ করেছে। তাদের খাদ্য, বস্ত্র, চিকিৎসা ও আবাসনের ব্যবস্থা প্রধানমন্ত্রীকে দ্রুত করতে হবে। রোহিঙ্গা মুসলিমদের ওপর থেকে নির্যাতন বন্ধের সকল কার্যক্রমে হেফাজতে ইসলাম সরকারের পাশে থাকবে। আরাকান স্বাধীন না হওয়া পর্যন্ত আমাদের সংগ্রাম চলবে। প্রয়োজনে মিয়ানমার অভিমুখে লংমার্চ কর্মসূচি গ্রহণ করা হবে। মিয়ানমার শান্তিপূর্ণ উপায়ে সমাধান না করলে আমাদের সরকারকে সামরিক অভিযান চালিয়ে আরাকান স্বাধীন করতে হবে।
মাওলানা শাহ আতাউল্লাহ বলেন, মিয়ানমারে রোহিঙ্গা মুসলিমদের ওপর নির্যাতন হেফাজতে ইসলাম কখনো মেনে নেবে না। তিনি বলেন, অবিলম্বে বাংলাদেশ থেকে মিয়ানমার দূতাবাস সরিয়ে নিতে হবে।
কেন্দ্রীয় নেতা আজিজুল হক ইসলামাবাদী বলেন, রোহিঙ্গাদের খাদ্য, বস্ত্র ও বাসস্থানের ব্যবস্থা খুব দ্রুত করা প্রয়োজন। প্রধানমন্ত্রীকে অসহায় রোহিঙ্গাদের পাশে দাঁড়ানোর আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, সেনাবাহিনী দিয়ে এই রোহিঙ্গাদের নিরাপত্তার ব্যবস্থা করতে হবে। মিয়ানমার সামরিক বাহিনী এ যাবৎ ৩৫ বারেরও অধিক বাংলাদেশের আকাশসীমা লঙ্ঘন করেছে। সরকার এ বিষয়ে তেমন কোনো পদক্ষেপ না নিয়ে নতজানু পররাষ্ট্রনীতি প্রদর্শন করেছে। মুসলিম জাতি হিসেবে আরেক মুসলিমের ওপর নির্যাতন কখনোই মেনে নেয়া যায় না। রোহিঙ্গা মুসলিমদের রক্ষার্থে বাংলাদেশের তৌহিদী জনতা তাদের পাশে থাকবে। মাওলানা মুজিবুর রহমান পেশোয়ারী সরকার প্রধানকে উদ্দেশ্য করে বলেন- আপনি রাশিয়া, চীন ও ভারতকে ভয় করবেন না। রোহিঙ্গা ইস্যুতে এদেশের জনগণ আপনার সঙ্গে আছেন।
মাওলানা আব্দুর রব ইউসূফী বলেন, মিয়ানমারের রোহিঙ্গা গণহত্যা বন্ধ করতে না পারলে সরকার আমাদের অনুমতি দিক। আমরা এদেশের গণমানুষ দেশীয় অস্ত্র হাতে নিয়ে আরাকান স্বাধীন করতে জিহাদে যেতে প্রস্তুত আছি। মাওলানা নুরুল ইসলাম জিহাদী বলেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে রোহিঙ্গাদের পাশে দাঁড়ানো আমাদের সবার ঈমানী দায়িত্ব। এ দায়িত্ব পালনে আমরা যেকোনো ত্যাগ স্বীকারে প্রস্তুত আছি। মাওলানা মঞ্জুরুল ইসলাম আফেন্দী বলেন, সন্ত্রাসী পিতার সন্ত্রাসী মেয়ে হচ্ছে অং সান সুচি, তার পিতাও রোহিঙ্গা মুসলমানদের রক্ত নিয়ে হোলি খেলা খেলে গেছে। এই হোলি খেলা বন্ধ না হলে আরাকান স্বাধীন করতে এদেশে মুসলমানরা মিয়ানমার যেতে প্রস্তুত রয়েছে। সমাবেশে আরো বক্তব্য রাখেন প্রিন্সিপাল মাওলানা আবুল কালাম, মাওলানা মাহফুজুল হক, মাওলানা আব্দুর রব ইউসূফী, মাওলানা আজীজুল হক ইসলামাবাদী, মাওলানা মুজীবুর রহমান পেশোয়ারী, মাওলানা নুরুল ইসলাম জিহাদী, মাওলানা মঞ্জুরুল ইসলাম আফেন্দী, মাওলানা হাকীম আব্দুল করীম, মাওলানা নাজমুল হাসান, মাওলানা মামুনুল হক, মাওলানা হাবীবুল্লাহ মিয়াজী, মাওলানা আহমদ আলী কাসেমী, মাওলানা মুজিবুর রহমান হামিদী ও মাওলানা আজিজুর রহমান হেলাল প্রমুখ। সমাবেশ পরিচালনা করেন জুনায়েদ আল হাবীব ও ফজলুল করিম কাসেমী।
ঘেরাও কর্মসূচিতে বাধা: এদিকে হেফাজতে ইসলামের পূর্বঘোষিত ‘মিয়ানমার দূতাবাস ঘেরাও’ কর্মসূচি বায়তুল মোকাররম থেকে শুরু হয়ে শান্তিনগরে গেলে বাধা দেয় পুলিশ। জনদুর্ভোগের কথা বলে মিছিল আটকে দিলে সেখানে বিক্ষোভ করেন হেফাজতের কর্মীরা। পরে একটি প্রতিনিধি দল সেখান থেকে স্মারকলিপি নিয়ে মিয়ানমার দূতাবাস ও জাতিসংঘের ঢাকা অফিসে যায়। নূর হোসেন কাসেমীর নেতৃত্বে প্রতিনিধি দলে ১২ জন ছিলেন। তারা হলেন- মাওলানা শাহ আতাউল্লাহ, মাওলানা জুনায়েদ আল-হাবীব, মাওলানা মাহফুজুল হক, মাওলানা আব্দুর রব ইউসূফী, মাওলানা মুজিবুর রহমান পেশোয়ারী, মাওলানা হাকীম আব্দুল করীম, মাওলানা আজীজুল হক ইসলামাবাদী, মাওলানা ফজলুল করীম কাসেমী, মাওলানা নাজমুল হাসান, মাওলানা মুনীর হোসাইন কাসেমী ও মুফতী জাকির হোসাইন কাসেমী।
গত ১৫ই সেপ্টেম্বর জুম্মার নামাজ শেষে অনুষ্ঠিত সমাবেশ থেকে ‘মিয়ানমার দূতাবাস ঘেরাও’ করার ঘোষণা দেয় হেফাজতে ইসলাম। পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী সকাল থেকেই হেফাজতের নেতাকর্মীরা বায়তুল মোকাররমের সামনে জমায়েত হন। তারা বিভিন্ন ধরনের প্ল্যাকার্ড বহন করে। রোহিঙ্গা নির্যাতনের বিরুদ্ধে স্লোগানে মুখর ছিল পুরো এলাকা। রাস্তায় অস্থায়ী মঞ্চ করে সেখানে সমাবেশ করা হয়। সমাবেশে হেফাজত নেতারা বক্তব্য রাখেন। হেফাজতের কর্মসূচি ঘিরে আশেপাশের এলাকায় পুুলিশ নিরাপত্তা জোরদার করে।