সিলেটে হামলায় নিহত হয়েছে ছাত্রলীগ কর্মী ওমর আহমদ মিয়াদ। জেলা ছাত্রলীগ সেক্রেটারি রায়হান গ্রুপের কর্মী তোফায়েল আহমদ তোফার নেতৃত্বে এই খুনের ঘটনা ঘটে। ঘটনার সময় তোফায়েল আহমদও গুরুতর আহত হয়। তার শরীরের একাধিক স্থানেও ছুরিকাঘাত করা হয়েছে। এ কারণে ঘটনার পর গ্রেপ্তার এড়াতে তোফা সিলেটের হাসপাতালে গোপনে চিকিৎসা নেয়। পরে তাকে ঢাকার হৃদরোগ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।পুলিশ ঘটনার তিন দিন পর গতকাল ভোরে অভিযান চালিয়ে তোফায়েলকে ঢাকার ওই হাসপাতাল থেকে গ্রেপ্তার করে। শাহপরান থানা পুলিশ গতকাল এসব তথ্য জানিয়েছে। পুলিশ জানায়, তোফায়েলের সঙ্গে মোবাইলে তর্কাতর্কির পর মিয়াদ দুই সহযোগীকে নিয়ে টিলাগড়ে যায়। সেখানে গিয়ে প্রথমে মিয়াদ তার দুই সহযোগীকে নিয়ে তোফায়েলের ওপর হামলা চালায়। এ সময় ছুরিকাঘাতে তোফায়েল আহতও হয়। হামলার সময় তোফায়েল স্থানীয় কাউন্সিলর আজাদুর রহমান আজাদের কার্যালয়ের সামনে দৌড়ে চলে আসে। ওখানে থাকা তার সহযোগীদের নিয়ে পাল্টা হামলা চালায়। ওই সময় ছুরিকাঘাতে খুন হয়েছে মিয়াদ। সিলেটের জালালাবাদ থানার ওসি আক্তার হোসেন জানিয়েছেন, প্রাথমিক তদন্তে তারা ঘটনা সম্পর্কে ধারণা পেয়েছেন। স্থানীয় ব্যবসায়ীরা পুলিশকে অবগত করেছেন পাল্টা হামলায় নিহত হয়েছে ওমর আহমদ মিয়াদ। প্রথমে তোফায়েলের ওপর হামলা করা হয়েছিল। এ কারণে তোফায়েল আহতও হয়েছে। এদিকে গ্রেপ্তারের পর ঢাকার হাসপাতালেই তোফায়েলকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ করেছে পুলিশ। খুনের ঘটনার সঙ্গে আর কারা কারা জড়িত তাদের নামও পেয়েছে। পুলিশ তোফায়েলের কাছে তথ্যের সূত্র ধরে অন্যদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চালাচ্ছে। ওসি জানান, বুধবার বিকাল পর্যন্ত মিয়াদের পরিবারের পক্ষ থেকে থানায় কোনো এজাহার নিয়ে কেউ আসেনি। তবে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা হয়েছে। তারা এজাহার দাখিলের প্রস্তুতি চালাচ্ছেন। আর গ্রেপ্তারকৃত তোফায়েলকে সিলেটে আনা হচ্ছে। সোমবার বিকালে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে সিলেট নগরীর টিলাগড়ে ছাত্রলীগের রায়হান গ্রুপের কর্মীদের হাতে খুন হন হিরণ মাহমুদ গ্রুপের কর্মী ও সিলেটের একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের এলএলবি দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র ওমর আহমদ মিয়াদ। এ খুনের ঘটনায় সিলেট নগরীতে ছাত্রলীগের অভ্যন্তরে উত্তেজনা বিরাজ করছে। ওদিকে তোফায়েলের সন্ধান পেতে পুলিশ তার বড় ভাই ফখরুল ইসলামকে ঘটনার দিনই গ্রেপ্তার করেছিল। ফখরুলকে থানায় রেখে পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদ চালায়। এর মধ্যে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় পুলিশ তোফায়েলের খবর পায়। এই খবরের প্রেক্ষিতে শাহপরান থানা পুলিশ রাতে ঢাকার জাতীয় হৃদরোগ হাসপাতাল থেকে তোফায়েলকে গ্রেপ্তার করে। গ্রেপ্তারের পর দেখা গেছে তোফায়েলের হাত সহ শরীরের বিভিন্ন অংশে জখমের আঘাত রয়েছে। গ্রেপ্তার এড়াতে তোফায়েল সিলেট থেকে ঢাকা চলে গিয়েছিল। এদিকে ছাত্রলীগ কর্মী ওমর আহমদ মিয়াদ খুনের ঘটনায় আন্দোলনে রয়েছে ছাত্রলীগের হিরণ মাহমুদ গ্রুপের কর্মীরা। গতকাল মিয়াদের খুনিদের গ্রেপ্তার দাবিতে তারা বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করেছে। আজ বৃহস্পতিবার সিলেটের কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র ধর্মঘট পালন করবে তারা। এরপর শুক্রবার মিয়াদের আত্মার মাগফেরাত কামনা করে দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হবে। ছাত্রলীগের টিলাগড় গ্রুপের কর্মীরা জানিয়েছেন, মিয়াদ ও তোফায়েলের মধ্যে কয়েক দিন ধরে দ্বন্দ্ব চলছিল। এই দ্বন্দ্বের সুরাহা করতে আওয়ামী লীগ নেতা ও স্থানীয় কাউন্সিলর আজাদুর রহমান আজাদ লন্ডন যাওয়ার আগে উভয়পক্ষকে নিয়ে সমঝোতা বৈঠক করেন। ওই বৈঠকে ছাত্রলীগের সাবেক সিনিয়র নেতারাও উপস্থিত ছিলেন। পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে ছাত্রলীগের সব উপ-গ্রুপের কর্মীদের এমসি কলেজ ক্যাম্পাসে যেতে বারণ করা হয়েছিল। খুনের ঘটনার পর সিলেট জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক রায়হান আহমদও জানিয়েছেন, রাজনৈতিক কারণে নয়, ব্যক্তিগত দ্বন্দ্বের জের ধরে এ ঘটনা ঘটেছে।