অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে ফরিদপুরের পুলিশ সুপার (এসপি) সুভাষ চন্দ্র সাহা ও তার স্ত্রী রীনা চৌধুরীর বিরুদ্ধে মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। দুর্নীতির মাধ্যমে সাড়ে আট কোটি টাকা অর্জনের জন্য রাজধানীর বংশাল থানায় দুদকের ঢাকা সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক আব্দুল ওয়াদুদ বাদী হয়ে মামলাটি করেন। এর আগে গত মাসের ১৩ তারিখ এসপি সুভাষ চন্দ্র সাহা ও তার স্ত্রী রীনা চৌধুরীর বিরুদ্ধে অবৈধভাবে সম্পদ অর্জনের জন্য মামলা করার প্রস্তুতি নেয় দুদক। দুর্নীতি দমন কমিশন থেকে এসপির বিরুদ্ধে মামলা করার অনুমতি দেয়ার পর জেলা কার্যালয়ের কর্মকর্তারা সকল প্রস্তুতিও সম্পন্ন করেন। কিন্তু অজ্ঞাত কারণে সেই মামলা তখন হয়নি। অভিযোগ উঠেছিল বংশাল থানা ফরিদপুরের এসপির বিরুদ্ধে মামলা নেয়নি।তখন বংশাল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সাহিদুর রহমান জানিয়েছিলেন, দুদকের কর্মকর্তারা মামলা করতে থানায় এসেছিলেন। তখন তিনি থানার বাইরে ছিলেন। কিন্তু কেন তারা মামলা না করে চলে গেছেন তিনি তা বলতে পারেন না। প্রায় দেড় মাস পর গতকাল সেই মামলাটি রুজু করা হয়। দুদক কর্মকর্তারা জানান, পুলিশ সুপার ও তার স্ত্রীর যৌথ নামে ওয়ান ব্যাংকের তিনটি শাখায় ১৯টি এফডিআরের মাধ্যমে ৮ কোটি ৩৬ লাখ ১৩ হাজার ৩৬৭ টাকার সন্ধান পাওয়া গেছে। কিন্তু তাদের সর্বশেষ আয়কর নথিতে এসব টাকার কোনো উল্লেখ নেই। দুদক তাদের আয়কর নথি সংগ্রহ করে বিস্তারিত অনুসন্ধানের মাধ্যমে অর্থ গোপনের বিষয়টি নিশ্চিত হয়েই মামলাটি করেছে।
মামলার এজাহার সূত্রে জানা গেছে, এই দম্পতির নামে ওয়ান ব্যাংকের রাজধানীর বংশাল শাখার ৩৩৪১২০০০২২৩৭ নম্বর হিসাবে ২০১৫ সালের ডিসেম্বরের ২৩ তারিখে ২৫ লাখ টাকা ও একই তারিখে ৩৩৪১২০০০২২৫৯ হিসাবে আরো ২৬ লাখ টাকা জমা করেন। ২০১৫ সালের ১৭ই জুলাই একই শাখায় ৩৩৪১২০০০২৪৪১ হিসাবে ৪১ লাখ, ২০১৭ সালের ২২শে জানুয়ারি ৩৩৪১২০০০২৬১২ হিসাবে ৩৭ লাখ, একই বছরের ২২শে ফেব্রুয়ারি ৩৩৪১২০০০২৬৫৬ হিসাবে ৬১ লাখ ও ২২শে মে ৩৩৪১২০০০২৭৬৯ হিসাবে ৮৫ লাখ টাকা জমা হয়। ৬টি এফডিআরে জমাকৃত ২ কোটি ৭৫ লাখ টাকার সুদসহ মোট দুই কোটি ৮১ লাখ ১৪ হাজার ৪৬৭ টাকা রয়েছে। একইভাবে ২০১৩ সালের ২৭শে জুন এলিফ্যান্ট রোড শাখায় ২৭৪৪৪০০০০৩৪৪ হিসাবে জমাকৃত ১৮ লাখ টাকার সুদসহ ২১ লাখ ৪৪ হাজার ৪২ টাকা এবং ওয়ান ব্যাংকের যশোর শাখার ১৪৪১২০০০৪৭১৪ হিসাবে ২০১৫ সালের ১৬ই জুন ১৩ লাখ, ১৪৪১২০০০৪৯৫১ হিসাবে একই বছরের ৩০শে আগস্ট ১১ লাখ, ১৪৪১২০০০৫০৯১ হিসাবে ২৭শে সেপ্টেম্বর ২১ লাখ, ১৪৪১২০০০৫৪২২ হিসাবে ১৫ই নভেম্বর ২০ লাখ, ১৪৪১২০০০৫৫৬৮ হিসাবে ২০১৬ সালের ৩রা জানুয়ারি ৫৫ লাখ, ১৪৪১২০০০৬৮১১ হিসাবে ৬ই সেপ্টেম্বর ২০ লাখ, ১৪৪১২০০০৬৯৯৯ হিসাবে ১৬ই অক্টোবর ৭৫ লাখ, ১৪৪১২০০০৭০০৯ হিসাবে একই দিনে আরো ৭১ লাখ, ১৪৪১২০০০৭৫১৯ হিসাবে ২০১৭ সালের ১৯শে এপ্রিল ৭৫ লাখ, একই দিনে ১৪৪১২০০০৭৫৩৯ হিসাবে আরো ৭৫ লাখ, ১৪৪৪৪০০০০৫৫৯ হিসাবে ২০১৩ সালের ২৬শে মে ৩২ লাখ ও ১৪৪৪৪০০০০৮৫৬ হিসাবে ২০১৩ সালের ১০ই জুন ৩৬ লাখ টাকা জমা হয়। ১২টি এফডিআরের হিসাবে জমাকৃত ৫ কোটি ৪ লাখ টাকার সুদসহ বর্তমানে ৫ কোটি ৩৩ লাখ ৫০ হাজার ৮৫৮ টাকা রয়েছে। দুদকের অনুসন্ধানে তাদের ১৯টি হিসাবে ৭ কোটি ৯৭ লাখ টাকার সুদসহ ৮ কোটি ৩৬ লাখ ১৩ হাজার ৩৬৭ টাকার সন্ধান পাওয়া যায়। এসব টাকা এসপি সুভাষ চন্দ্র সাহা পুলিশ বিভাগে চাকরি করা অবস্থায় বিভিন্ন দুর্নীতিমূলক কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে উপার্জন করেছেন বলে এজাহারে উল্লেখ করা হয়। এসপি এসব টাকার উৎস, অবস্থান, মালিকানা ও নিয়ন্ত্রণ গোপন করেছেন। এজাহার সূত্রে আরো জানা যায়, ওই অর্থ অপরাধ কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে অর্জিত জানা সত্ত্বেও এসপি নিজ ও স্ত্রী রীনা চৌধুরীর নামে ওয়ান ব্যাংকের ওই তিন শাখায় এফডিআর হিসাবে জমা রেখে ভোগ দখলে রেখেছেন। আসামি রীনা চৌধুরী স্বামীর অপরাধ কর্মকাণ্ড থেকে অর্জিত আয় জেনেও যৌথনামে এফডিআর হিসাবে জমা রেখে এবং তা গোপন করে অপরাধ সংঘটনে সহায়তা করেছেন। এজন্য তাদের বিরুদ্ধে মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন-২০১২ এর ৪(২) ও ৪(৩) ধারায় মামলা করা হয়েছে। এজাহারে বলা হয়, গত ১৫ই জুন দুদকের এক আবেদনের প্রেক্ষিতে ঢাকা মহানগর দায়রা জজ ওয়ান ব্যাংকের ঢাকা ওই দুই শাখার এফডিআরগুলো জব্দ রাখার আদেশ দেন। একই দিন ওয়ান ব্যাংকের যশোর শাখার এফডিআর হিসাবগুলো যশোর সিনিয়র দায়রা জজ আদালত জব্দ রাখার আদেশ দিয়েছেন। সূত্রে আরো জানা গেছে, আসামি ও তার স্ত্রীর বিরুদ্ধে অবৈধ আরো সম্পদ অর্জনের তদন্ত চলমান রয়েছে। ইতোমধ্যে তাদের বিরুদ্ধে সম্পদ বিবরণী দাখিলের নোটিশ দেয়া হয়েছে এবং তারা তাদের সম্পদের বিবরণী দুদকে দাখিল করেছেন। যা যাচাই বাছাই প্রক্রিয়াধীন আছে। এদিকে ফরিদপুরের ভারপ্রাপ্ত পুলিশ সুপার জামাল পাশা জানিয়েছেন, চলতি মাসের ১৫ তারিখ সুভাষ চন্দ্র সাহাকে পুলিশ হেডকোয়ার্টার্স থেকে বদলির নির্দেশ দেয়া হয়েছে। পরে তিনি ২২ তারিখ হেডকোয়ার্টার্সে যোগদান করেছেন।