গত সপ্তাহে বাংলাদেশ সরকার উখিয়ার আঞ্জুমান পাড়া বর্ডার ক্রসিং নিকটবর্তী নো-ম্যানস ল্যান্ডে আটকে থাকা ৭ হাজার রোহিঙ্গা শরণার্থীকে আশ্রয়কেন্দ্রে স্থানান্তর করেছে। এর আগে চরম ভোগান্তি আর অনিশ্চয়তার মধ্যে দিনাতিপাত করেছে এসব শরণার্থী। টানা বর্ষণে দুর্ভোগ পৌঁছায় চরমে। জাতিসংঘের আন্তর্জাতিক অভিবাসন বিষয়ক সংস্থা আইওএম’র এক রিপোর্টে বিস্তারিত উঠে এসেছে। রিপোর্টে বলা হয়, ৭২ ঘণ্টা ধরে বাংলাদেশ ভূখণ্ডের মধ্যে অবস্থিত আঞ্জুমানপাড়ার ধানক্ষেত-গুলোর কিনার বরাবর লাইন ধরে অবস্থান করে আটকে পড়া রোহিঙ্গারা। যতদূর দৃষ্টি যায় ততদূর দেখা গেছে তাদের লাইন।দুই দিন ধরে কোনোমতে সেখানে বেঁচে ছিলেন তারা। খোলা আকাশের নিচে ঘুমিয়েছেন। কর্দমাক্ত টিলার পাশে আর ক্ষেতের আইল হয়েছে তাদের বাসস্থান। টানা কয়েক দিন হেঁটে বাংলাদেশে পৌঁছেছে এসব শরণার্থী। হাজার হাজার মানুষ- এদের মধ্যে কেউ অসুস্থ, কেউ অন্তঃসত্ত্বা, কেউ বয়স্ক। কাছে থাকা যৎসামান্য জিনিসপত্র দিয়ে নিজেদের রক্ষা করার চেষ্টা করেছেন সূর্যের তাপদাহ থেকে। ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসে পার করেছেন। অপেক্ষা করেছেন বাংলাদেশের মূল ভূখণ্ডের ভেতর প্রবেশ করার জন্য। এ সময় জীবন ধারণের জন্য তাদের কাছে খাবার আর পানীয় ছিল সামান্যই। এরপর হঠাৎ শুরু হলো বর্ষণ। অনেকে নিজ নিজ অবস্থান থেকে সরা শুরু করলো। নারী, পুরুষ, শিশুরা নদীতে ঝাঁপ দিয়ে তীরের ওপারে যাওয়া শুরু করলো। পানির ভেতর যৎসামান্য সম্বলের ভারেই বহুকষ্টে সাঁতার কাটা। পুরুষদের কাঁধে জিনিসপত্রের ব্যাগ আর নারীদের কাঁধে কোলের সন্তান। এরপর শিশুরা পিতা-মাতার হাত আঁকড়ে কর্দমাক্ত নদীর তীর বেয়ে আশ্রয় খুঁজে পাওয়ার উদ্দেশ্যে হাঁটতে শুরু করে। শিশুদের কান্নায় আকাশ-বাতাস ভারী হয়ে ওঠে। মলিন অভিব্যক্তি আর চোখে মুখে আতঙ্ক নিয়ে পিতামাতারা চেয়ে থাকেন বাংলাদেশের ভূখণ্ডের ভেতের। নদীর তীরে স্থান স্বল্পতার কারণে অনেকে বসে থেকে ঘুমিয়েছেন বলেও জানান। বাংলাদেশে আশ্রয় পাওয়া নতুন এই শরণার্থীরা এখনো আতঙ্কিত। এখনো তারা ক্ষুধায় কাতর। মিয়ানমারে নিজ নিজ গ্রাম থেকে পালানোর আগে তারা বিভীষিকাময় সহিংসতার বর্ণনা দিয়েছেন। আইওএমকে এক ব্যক্তি বলেছেন, ‘আমরা এখানে রাতে থাকি, পালা করে একজন ঘুমিয়ে থাকে, অপরজন থাকে দাঁড়িয়ে। দুইদিন আমাদের কোনো খাবার জোটেনি।’ আরেক নারী বলেন, ‘ওরা আমাদের বাড়িঘর পুড়িয়ে দিয়েছে। আমাদের ফসলাদি নষ্ট করেছে। আমাদের বাড়িঘর থেকে আমাদের ধাওয়া করে পালাতে বাধ্য করেছে। এখানে পৌঁছাতে আমাদের দশদিন সময় লেগেছে।’ তিনি আরো বলেন, ‘আশ্রয় নেয়ার মতো কোনো ছাদও এখানে নেই। এ কারণে বৃষ্টি এলে আমি ভিজে যাই।’ আটকে পড়া এসব শরণার্থী বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সহায়তায় এক পর্যায়ে আশ্রয় পেয়েছেন উখিয়া ও টেকনাফের অন্যান্য এলাকায়। বর্তমানে তারা আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে আছেন যেখানে জাতিসংঘের অভিবাসন বিষয়ক সংস্থা, আইওএম ও তাদের অংশীদার সংগঠনগুলো প্রাণরক্ষার সহায়তা ও সেবা দিচ্ছে।
[উপরের লেখাটি কক্সবাজারে দায়িত্বরত জাতিসংঘের অভিবাসন সংস্থার একটি দলের লেখা নিবন্ধ অবলম্বনে।]