আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে মোস্তাফিজুর রহমানের অভিষেকটা ধূমকেতুর মতোই। এক বছরে পেয়ে যান আকাশছোঁয়া সাফল্য। সেবারই তিনি জায়গা করে নেন আইসিসির বর্ষসেরা ওয়ানডে ক্রিকেটারের তালিকাতে। কিন্তু বছর না ঘুরতেই তিনি পড়েন ইনজুরিতে। আইপিএলে খেলতে গিয়ে চোট পান। সেই থেকে তার মাঠে ফেরার লড়াই শুরু।গেল বছর নিউজিল্যান্ড সিরিজে মাঠে ফিরলেও খুঁজে পাওয়া যায়নি কাটার মাস্টারকে। দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে পেস বান্ধব উইকেটে যখন তাকে নিয়ে ফের স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছিল দল, ঠিক তখনই ইনজুরির হানা। টেস্টে মাঠে নামলেও শেষ হয়ে যায় ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টি সিরিজে খেলার স্বপ্ন। দেশেও ফিরেছেন। তবে প্রথমবারের মতো বিপিএলে মাঠে নামার যে স্বপ্ন তাও অনেকটা ফিকে হয়ে আসছে। গতকাল তিনি মিরপুর স্টেডিয়ামে এসেছিলেন। ছিলেন বেশ হাসি খুশিও। কিন্তু ৪ঠা নভেম্বর থেকে শুরু হতে যাওয়া বিপিএলের ৫ম আসরে রাজশাহী কিংসের হয়ে তার মাঠে নামা এখন বেশ শঙ্কায়। তামিমের মতো তাকে নিয়ে বিসিবির চিকিৎসক দেবাশীষ চৌধুরী ঝুঁকি নিতে চান না। তিনি বলেন, ‘প্রপার পুনর্বাসন না হয়ে ও যদি খেলায় ফেরে তাহলে ভবিষ্যতে এ ইনজুরি আবার ফিরে আসতে পারে। তো আমরা চাইবো ও পুরোপুরি সুস্থ হয়ে ফিরে আসুক। এজন্য বিপিএলের কিছু ম্যাচ যদি মিস করতে হয় তাহলে আমরা মেনে নেবো।’
গেলবার ইনজুরি হয়েছিল তার কাঁধে। ইংল্যান্ডে অস্ত্রোপচার শেষে লম্বা সময় মাঠের বাইরে ছিলেন। তবে মাঠে ফেরার পর থেকে মানসিকভাবেও নিজেকে হারিয়ে ফেলেছিলেন তিনি। কাটার মাস্টার ছিলেন না একেবারেই ফর্মে। চিকিৎসকদের মতে মানসিক কারণেই এমন হচ্ছে। খেলতে খেলতে ঠিক হয়ে যাবে। কিন্তু আরো একটি ইনজুরি তাকে আবারো এক ধাপ পিছিয়ে দিলো।
এবার তার ইনজুরির ধরন নিয়ে দেবাশীষ চৌধুরী বলেন, ‘মোস্তাফিজের লেটারেল অ্যাঙ্কেল ইনজুরির আজ ১৩তম দিন চলছে। বুধবার থেকে আমরা ফিজিওথেরাপি শুরু করেছি। প্রথমদিনের পর ওর উন্নতি বেশ ভালো। কিন্তু ক্লিনিক্যালি ইমপ্রুভমেন্ট থাকলেও যেহেতু স্ক্যান রিপোর্ট বলছে এ ইনজুরিটা গ্রেড-২ বা মডারেট টাইপ অব অ্যাঙ্কেল স্ট্রেইন। তাই ওর ব্যাপারে আমরা সাবধানতা অবলম্বন করবো অন্তত আগামী দুদিন। ওর রেগুলার ফিজিওথেরাপি ও কিছু ব্যায়াম চলবে। এরপর দুই সপ্তাহ পর আমরা ওকে রিভিউ করবো। তারপর পরবর্তী ম্যানেজম্যান্ট প্ল্যান ঠিক করা হবে। খুব গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে লেটারেল অ্যাঙ্কেল স্ট্রেইন খুব খারাপ ধরনের ইনজুরি।
কতদিন সময় লাগতে পারে মোস্তাফিজের মাঠে ফিরতে? বিসিবির চিকিৎসক বলেন, ‘ওর ইনজুরির দিন থেকে প্রায় দুই সপ্তাহ হয়ে গেছে। আরো যদি দুই সপ্তাহ বিশ্রাম নিতে পারে তাহলে একমাস হবে। এক মাস রিকভারির জন্য খুব ভালো একটা সময়। কিন্তু সমস্যা থেকে যাবে রিকভারির পরেও ও অনেক দিন ধরে অনুশীলনের বাইরে আছে। বোলিং অনুশীলনের জন্য ওকে কিছুদিন সময় দিতে হবে। সে সময়টা নির্ভর করবে ওর উপর। ও যেহেতু পেস বোলার এক মাসের পরও যদি মনে করে রিহ্যাব করবে তাহলেও করতে পারে। শেষের দিকে পুনর্বাসন ও বোলিং প্রাকটিস হয়তো একসঙ্গে চলবে। সবমিলিয়ে ২-৩ সপ্তাহের মতো সময় লেগে যাবে। এর আগে পুরোপুরি ফিট মোস্তাফিজকে হয়তো আমরা পাবো না।’
বিপিএলের বাকি আর ৮ দিন। চলবে ১২ই ডিসেম্বর পর্যন্ত। চিকিৎসকের হিসাব অনুসারে শুরু থেকে তো নয়ই, শেষ দিকেও তার মাঠে নামা নিয়ে রয়েছে যথেষ্ট শঙ্কা। বিসিবিও চাইবে না শ্রীলঙ্কা সিরিজের আগে দেশ সেরা এ পেসারকে নিয়ে কোনো রকম ঝুঁকি নিতে।
নিজের প্রিয় ফরমেটে খেলতে না পেরে মাসসিকভাবে কতটা চাঙ্গা আছেন এ পেসার? বিসিবির চিকিৎসক বলেন, ‘ওর সবচাইতে প্রিয় খেলা টি-টুয়েন্টি, ও এখানে ভালো পারফর্মও করে। গত বছর বিপিএল মিস করেছে। এ বছরও মিস করছে। আমরা ধারণা করেছিলাম ও মানসিকভাবেও ভেঙে পড়বে। তবে আশার বিষয় ও স্পোর্টিংলি নিচ্ছে, হাসিখুশি আছে। যে পরিমাণ ধারণা করেছিলাম ও সেই রকম মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়নি।’