সাতক্ষীরা শ্যামনগরের নারীরা স্মাট ফোনে ইন্টারনেট ব্যবহার করে গুগলের মাধ্যমে তথ্য সংগ্রহ করে সবজি চাষে সফলতা পাচ্ছে। নোনা এলাকায় বিভিন্ন প্রযুক্তি ব্যবহার করে সম্পূর্ণ বিষমুক্ত সবিজ চাষ করে পুষ্টির চাহিদা পূরণের পাশাপাশি আয় করছে বাড়তি অর্থ। কম খরচে বাড়ির পাশের পতিত জমিতে চাষ করে লাভবান হওয়ায় দিনে দিনে আরো জনপ্রিয় হয়ে উঠছে এ পদ্ধতি। সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা পেলে অর্থনীতিতে আরো অবদান রাখতে পারে এ অঞ্চলের নারীরা।
এলাকাবাসী বেলাল হোসেন জানান, ২০০৯ সালের প্রলয়ংকরী আইলার প্রবল জলোচ্ছ্বাসে উপকূলীয় জেলা শ্যামনগরে নোনা পানির জন্য চাষাবাদ হুমকির মুখে পড়ে। হতাশার কাল মেঘ ভর করে এ অঞ্চলের মানুষের মধ্যে। পরবর্তিতে অষ্ট্রেলিয়ার মোনাস বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থায়নে, অক্সফ্যামের সহযোগিতায় ‘সুশীলন রি-কল প্রকল্প’ নারীদের নিয়ে কাজ শুরু করে। এ প্রকল্পের মাধ্যমে শ্যামনগর উপজেলার বড়কুপট গ্রামে একশ’ জন নারীকে স্মার্ট ফোন দেয়া হয়। ফোন ব্যবহারে প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়। ফেসবুক আইডি খুলে দেয়া হয়। এছাড়া মোবাইলে মেগাবাইট সরবারহ করা, ফোনের মাধ্যমে উপজেলা কৃষি অফিস, ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টার ও প্রতীক কল সেন্টার, প্রতীক এসএমএস ও প্রতীক ভয়েস এসএমএস এর মাধ্যমে কৃষি তথ্য সংগ্রহ করে সবজি চাষ বিষয়ে তথ্য পাওয়ার পদ্ধতি সম্পর্কে ধারণা দেয়া হয়। এসব ব্যবহার করে ব্যাপক সাড়া ফেলেছে এ অঞ্চলের নারীরা।
ওই নারীরা জানান, বড়কুপট গ্রামের লবনাক্ততার কারণে এক সময় শাক-সবজি চাষ করতে পারতো না চাষিরা। চাষ করতে না পারায় পতিত থাকত বেশিরভাগ জমি।
বর্তমানে এসব এলাকায় স্মার্ট ফোনে তথ্য প্রাপ্তির জন্য কমিউনিটিভিত্তিক নারীদের কৃষি সার্ভিস সেন্টার গড়ে তোলা হয়েছে। তারা টাওয়ার বা থ্রীডি পদ্ধতি, বস্তাপদ্ধতি (বস্তারমধ্যে মাটি ও জৈব সার মিশিয়ে বস্তায় ভরে বস্তার ভিতরে সবজি চাষ), ১.৫ ফুট মাটির নীচে পলিথিন বিছিয়ে জৈব সার প্রয়োগের মাধ্যমে সবজি চাষ, লবণ পানির এলাকায় মাটিতে গর্ত করে পলিথিন ও ত্রিপল বিছিয়ে মিষ্টি পানি সংরক্ষণের মাধ্যমে সবজি চাষ, বাগদা রেনু বহনকারী কর্কসিটে জৈব সার ও মাটি ভরাট করে সবজি চাষ শুরু করে সফলতা পাচ্ছেন।
এসব প্রযুক্তি ব্যবহার করে নারীরা বাড়ির পাশে পতিত জমিতে ওলকপি, বাঁধাকপি, ফুলকপি, বীটকপি, টমেটো, বেগুন, মিষ্টিকুমড়া, লালশাক, পালংশাক, মূলা, গাজর, পুঁইশাক, কচুরমুখী, লাউ, চালকুমড়া, গোলআলু, ঝিঙ্গা, ডাটাশাক, শিম, বরবটি, কচু, ঢেঁড়স, তরুল, পেঁয়াজ, রসুন, ওলকচু, চিচিঙ্গা ও মরিচসহ বিভিন্ন সবজি উৎপাদন করছে।
এসব সবজিতে আলুর ধ্বসা রোগ, বেগুনের ডগা ছিদ্রকারী পোকার আক্রমণ, টমেটোর নাভি ধ্বসা রোগ, শিম, মরিচ, বরবটি গাছের জাব পোকার আক্রমণ, লালশাক, পালংশাক, মরিচ গাছ, টমেটো গাছের ছত্রাকে আক্রমণ বা মাজা পঁচা রোগের আক্রমণসহ সবজির বিভিন্ন প্রকার রোগ দেখা দিলে প্রতিকারের জন্য স্মার্ট ফোনের মাধ্যমে গুগল অ্যাপস বা প্রতীক কল সেন্টার থেকে তথ্য সংগ্রহ করেন তারা। প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী ব্যবস্থা প্রয়োগ করে লবণাক্ত এলাকাতে আগের তুলনায় ৪-৫ গুণ পর্যন্ত ফলন বৃদ্ধি করতে সক্ষম হয়েছেন।
বর্তমানে এ অঞ্চলের নারীরা সংসারের অন্যান্য কাজের পাশাপাশি বাড়ির কাছের পতিত জমিতে সবিজ চাষ করে পরিবারের চাহিদা মিটিয়ে বাজারে বিক্রি করে বাড়তি অর্থ আয় করছে।
শ্যামনগরের কৃষাণী মমতাজ বেগম জানান, মোবাইলে প্রযুক্তি ব্যাবহার করে আমরা সফলতা পেয়েছি। যেকোন সমস্যা আমরা অ্যাপসের মাধ্যমে সমাধান পেয়ে থাকি। আমরা বিষমুক্ত শাক সবজি চাষাবাদ করে আর্থিক ভাবে লাভবান হচ্ছি। সরকারিভাবে যদি আরো সহযোগিতা পাওয়া যায় তাহলে আমরা লবনাক্ত এলাকায় কৃষি বিপ্লব ঘটাতে পারবো।
সুশীলনের প্রোগ্রাম অফিসার তাপস কুমার মিত্র বলেন, আইলার পরে এ অঞ্চল নোনা হওয়ায় ফসল ফলাতে না পেরে কৃষকরা হতাশ হয়ে পড়েন। তখন থেকে তারা কৃষি উন্নয়নে কাজ শুরু করেছেন। বর্তমানে প্রযুক্তি ব্যবহারে ফলে কৃষির ব্যপক উন্নয়ন হয়েছে।
সাতক্ষীরার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপপরিচালক কৃষিবিদ আব্দুল মান্নান বলেন, এ অঞ্চলের কৃষকরা স্মার্ট ফোন ব্যবহার করে শাক-সবজি চাষ করছে। এর মাধমে সহজেই তারা প্রযুক্তিগুলো পাচ্ছে। সেগুলো মাঠ পর্যায়ে প্রয়োগ করছে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের কয়েকটি জনপ্রিয় অ্যাপস রয়েছে সেগুলো কৃষকের কাছে পৌঁছে দিতে কাজ করে যাচ্ছি। মাঠ পর্যায়েও এই অ্যাপসগুলোর ব্যবহার বৃদ্ধি পাচ্ছে। দ্রুত সময়ের মধ্যেই সাতক্ষীরা কৃষকরা এই অ্যাপস ব্যবহার করে ফসল উৎপাদন করবে।