গায়ের রং দেখে দেয়া হয় নাগরিকত্ব। বিষয়টি বিস্ময়কর হলেও সত্যিই লাইবেরিয়াতে গায়ের রং দেখে নাগরিকত্ব দেয়া হয়।
৫০ বছরেরও বেশি সময় ধরে লাইবেরিয়াতে বসবাস করছেন টনি হেজ। সেখানে পড়াশোনা শেষ করে বিয়েও করেন। হয়ে ওঠেন সফল ব্যবসায়ী। জীবনের প্রায় অধিকাংশ সময় লাইবেরিয়া কাটানোর পরেও এখনও দেশটির নাগরিকত্ব পাননি টনি।
শরীরের রং কালো না হওয়ায় মেলেনি তার নাগরিকত্ব।নাগরিকত্ব না পাওয়ার বিষয়ে টনি হেজ বলেন, অনেক লাইবেরিয়ানের ভয় বিদেশিরা এসে তাদের দেশ দখল করে নেবে। আসলে এ আশঙ্কা একেবারেই ভিত্তিহীন।
যুক্তরাষ্ট্রে মুক্তি পাওয়া দাসদের জন্য পশ্চিম আফ্রিকায় রাষ্ট্র হিসেবে লাইবেরিয়া প্রতিষ্ঠা হয়েছিল। ঐতিহাসিক কারণেই তখন সেদেশের প্রথম সংবিধানে একটি ধারা জুড়ে দেয়া হয়েছিল। যেকোনো ব্যক্তি যদি আফ্রিকান বংশোদ্ভূত না হন, তাহলে তিনি লাইবেরিয়াতে নাগরিকত্ব পাবেন না।কয়েকশ বছর পর লাইবেরিয়ার নতুন প্রেসিডেন্ট সাবেক ফুটবলার জর্জ উইয়াহ ওই বিধানকে ‘অযথা এবং বর্ণবাদী’বলে বর্ণনা করে বলেন, লাইবেরিয়া সৃষ্টির যে মূল চেতনা তা এই বিধানে নষ্ট হচ্ছে।তিনি আরও বলেন, লাইবেরিয়া তৈরি হয়েছিল মুক্ত মানুষের আশ্রয় হিসেবে।
কিন্তু বর্ণের ভিত্তিতে বৈষম্য সেই চেতনার বিরোধী।তবে এই কথায় শঙ্কিত হয়ে পড়েছেন অনেক লাইবেরিয়ান।টনি হেজ বলেন, ‘আমি আমার ১৫তম জন্মদিন পালন করি লাইবেরিয়াতে। এখানে আসার জন্য কখনই অনুশোচনা করিনি। আমি সবসময় আশা করেছি যে, একদিন আইন পরিবর্তন হবে। আমি খুশি যে প্রেসিডেন্ট লাইবেরিয়ার ভবিষ্যৎ নিয়ে ভাবছেন।’বিপুল খনিজ সম্পদ থাকা স্বত্বেও মাথাপিছু গড় আয়ের বিবেচনায় বিশ্বের ২২৮টি দেশের তালিকায় লাইবেরিয়ার অবস্থান ২২৫। গত বছর লাইবেরিয়ার মাথাপিছু আয় ছিল বছরে ৯০০ মার্কিন ডলার যেখানে যুক্তরাষ্ট্রের আয় ৫৯,৫০০ ডলার।রুফুস ওলাগবো নামে এক লাইবেরিয়ান ব্যবসায়ী বলেন, ‘সাদা মানুষরা আবারও আমাদের দাস বানিয়ে ছাড়বে।
অন্য দেশ থেকে আসা মানুষকে সম্পত্তির অধিকার দেয়াটা হবে বিপজ্জনক।নতুন প্রেসিডেন্ট যেন অন্য দেশের, অন্য বর্ণের মানুষদের নাগরিক অধিকার না দিতে পারেন সেই লক্ষ্যে সম্প্রতি একটি সংগঠন তৈরি হয়েছে দেশটিতে।সেই সংগঠনটির নেতা ফুবি হেনরিস বলেন, ‘সৃষ্টির সময় প্রতিটি দেশের একটি ভিত্তি থাকে, সেটাকে নাড়া দিলে জাতি ও দেশ ভেঙে পড়বে।’