নির্বাচনকালীন সরকারের প্রশ্নে বিএনপির অবস্থানই স্পষ্ট নয় বলে জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। শুক্রবার সকালে রাজধানীর রমনায় ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনে আয়োজিত সেমিনারে বক্তব্য রাখেন তিনি। এ সময় সব দলের ঐক্যমত গঠনে বিএনপিকে দায়িত্ব নেয়ার আহ্বানও জানান তিনি।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘নির্বাচনকালীন সরকারের প্রশ্নে সকল রাজনৈতিক দলের ঐক্যমত প্রয়োজন। এ দায়িত্ব তো বিএরপির ফখরুল সাহেব নিজেও নিতে পারেন। সবাইকে ঐক্যবদ্ধ করতে পারেন। তারা (বিএনপি) নিজেরাই তো ঠিক নেই। এখন বলে সহায়ক সরকার, কখনও বলে তত্বাবধায়ক সরকার। নির্বাচনকালীন সরকার সম্পর্কে তাদের (বিএনপি) একেক জনের একেক সংজ্ঞা। তাহলে আমরা কোনটা মেনে নিবো। আমরা পরিস্কার বলে দিচ্ছি, এখন সংবিধানের বাইরে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই।’
বিএনপির উদ্দেশ্যে তিনি আরো বলেন, ‘নিয়মের বাইরে যেতে চাইলে চিৎকার করতে পারেন। আন্দোলন করে আদায় করবেন একথা তো নয় বছর ধরে শুনছি। কিন্তু আপনারা নয় মিনিটের জন্যও রাস্তায় নামতে পারেন নি, দাঁড়াতে পারেন নি, আন্দোলনের সক্ষমতার প্রমাণ দিতে পারেন নি। মানুষ আন্দোলনে সাড়া দিচ্ছে না, আমি জোর করে আন্দোলন করবেন! মানুষ ছাড়া কি আন্দোলন হবে? দেশের জনগণ সুখে আছে, তারা এসব চাই না।’
বিএনপির সাতধারা প্রসঙ্গে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘আমরা (আওয়ামীলীগ) ইচ্ছা করলে কলমের খোঁচায় আমাদের গঠনতন্ত্রের কোনো ধারা বাদ দিতে পারি না। অথচ বিএনপি তা পারে। কারণ বেগম জিয়ার দণ্ড হবে, আদালত তারিখ ঘোষণা করবেন ঠিক তখনই তাদের (বিএনপি) মাথায় এলো সাতধারা আত্মঘাতী। এটা বাদ দিতে হবে।
সাতধারায় কি আছে? সাতধারায় আছে, কোনো নেতা যদি দণ্ডিত হয় তাহলে সে নির্বাচন করতে পারেন না। দুর্নীতির অভিযোগ প্রমাণিত হলে, বিএনপির নেতা হতে পারবেন না, কোনো পর্যায়ের নেতৃত্বে থাকতে পারবেন না, নির্বাচন করতে পারবেন না, প্রতিনিধিত্ব করতে পারবেন না। এছাড়া এই ধারায় আছে কেউ উন্মাদ হলে, ভয়ে থাকলে, দেউলিয়া হলে বিএনপির কোনো পর্যায়ের নেতা হতে পারবেন না, এমপি হতে পারবেন না। এর মধ্যে সাত ধারা কিন্তু বাদ। এখানে মিডিয়া আছে, তারা লিখবে কিনা জানি না। তবে আগে এনিয়ে হয়তো দু’এক কথা লিখেছেন।’
এসময় বিএনপিকে ধরার আসল সময় এটা উল্লেখ্য করে তিনি বলেন, ‘তাদের চরিত্র , তাদের স্বরূপ এখানেই আজকে পরিষ্কার এবং তাদের মুখোশ এই সাতধারা বাদ দেওয়ার মাধ্যমে উন্মোচিত হয়েছে।’
খালেদা জিয়ার জামিন প্রসঙ্গে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘বেগম জিয়াকে যদি ভালোবাসেন তাহলে আইনি লড়াই করুন। আইন মোকাবেলা করে তাঁর দণ্ড মওকুফ করাতে পারেন, অথবা তাঁকে উচ্চ আদালতে খালাস করাতে পারেন। এটা আপনাদের আইনি লড়ায়ে প্রমাণ হবে। তিনি যদি নির্দোষ হোন ছাড়া পাবেন। কাজেই ওই লড়াইটাই আপনাদের জন্য উত্তম।’
তিনি ছাত্রলীগ প্রসঙ্গে বলেন, ‘আমাদের অবস্থান অত্যন্ত পরিস্কার। ছাত্রলীগ হোক, আওয়ামী লীগ হোক আমাদের যেকোনো সংগঠন অপরাধ করে এবং অপকর্ম করে কেউ পার পেয়ে যেতে পারবে না। আমরা কোনো খারাপ সংস্কৃতি গড়ে তুলে দেয়নি। এ ব্যাপারে জননেত্রী শেখ হাসিনার জিরো টলারেন্স নীতি। তিনি কঠোর অবস্থানে। কোনো অপরাধে শাস্তি হয়না, বলুন? আমাদের অনেক কর্মী আজ কারাগারে। অপরাধ করে কেউ পার পেয়ে যায় এই সংস্কৃতি আওয়ামী লীগে নেই। বিএনপিতে থাকতে পারে। বর্তমানে আমাদের কয়েকজন এমপি কারাগারে, দুইজন মন্ত্রী দুর্নীতির মামলায় আদালতে হাজিরা দিচ্ছেন। প্রতিনিয়ত আইনি মোকাবেলা করছেন। অপকর্মের বিচার হবে না, এটা আওয়ামীলীগে নেই।’
ছাত্রলীগ ইস্যুতে তিনি আরো বলেন, ;ছাত্রলীগ নিয়ে আমরা নতুন কিছু ভাবছি। সামনে ছাত্রলীগের সম্মেলন আছে আপনারা জানেন (১২-১৩ মে)। ছাত্রলীগকে নতুন মডেলের বিকাশে গড়ে তুলবার একটা নির্দেশনা আমাদের নেত্রীর আছে। আমরা সেই লক্ষ্যে এগিয়ে যাচ্ছি। একটু ধৈর্য ধরুন, অপেক্ষা করুন।