বন্দিদশায় প্রাণীদের কেমন লাগে, তা জানতে কাজ করেছেন ফ্রান্সের একদল বিজ্ঞানী। আপাতত তাঁরা ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসের কাছে একটি মেরিন পার্কে ডলফিনের ওপর গবেষণা করছেন। এই বিজ্ঞানীদের লক্ষ্য, বন্দিদশায় সামুদ্রিক স্তন্যপায়ী প্রাণীরা পছন্দের মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারলে কতটা খুশি হয়, তা পরিমাপ করা।
ফ্রান্সের ওই বিজ্ঞানীদের দাবি, তিন বছরের গবেষণায় তাঁরা দেখেছেন যে সামুদ্রিক স্তন্যপায়ী প্রাণীরা চেনা মানুষের দেখা পেতে গভীরভাবে অপেক্ষা করে। অ্যাপ্লায়েড অ্যানিমেল বিহেভিয়ার সায়েন্স সাময়িকী এ-বিষয়ক একটি নিবন্ধ প্রকাশ করেছে। ফ্রান্সের পার্ক অ্যাসটেরিক্স নামের থিম পার্কের গবেষক ইসাবেলা ক্লেগের নেতৃত্বে গবেষণাটি পরিচালনা করছেন প্যারিস বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণী আচরণ গবেষণাগারের বিজ্ঞানীরা।
ইসাবেলা ক্লেগ বলেন, গবেষণার সময় ডলফিনের আচরণ বোঝার চেষ্টা করেছেন তাঁরা। গবেষণায় চমকপ্রদ ফলাফল পেয়েছেন। বেশির ভাগ ডলফিনই চেনা মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ করতে উদ্গ্রীব হয়ে থাকে। পানিপৃষ্ঠের ওপর থেকে ডলফিনের প্রশিক্ষকদের গতিপ্রকৃতি এবং তাদের কার্যক্রমের সঙ্গে তাল মিলিয়ে ডলফিনগুলোর শারীরিক অভিব্যক্তি পর্যবেক্ষণ করেছেন বিজ্ঞানীরা। গবেষণায় তাঁরা দেখেছেন, চেনা মানুষের উপস্থিতি টের পেলেই ডলফিন অপেক্ষাকৃত বেশি সক্রিয় হয়ে ওঠে।
প্রাণীকে বন্দিদশায় রাখা ঠিক না বেঠিক, তা নিয়ে বহুদিন ধরেই যুক্তিতর্ক চলছে। বিশেষ করে ফ্রান্সে এই বিতর্কটা বেশি। বন্দিদশায় সামুদ্রিক স্তন্যপায়ী প্রাণীর প্রজননের ওপর নিষেধাজ্ঞার একটি প্রস্তাব সম্প্রতি ফরাসি সরকার বাতিল করে দিয়েছে। এ ব্যাপারে পার্ক অ্যাসটেরিক্সের ডলফিন সংরক্ষণাগারের পরিচালক ব্রিজত মারসেরা বলেন, বন্যেরা বনে সুন্দর। তবে বন্দিদশায় জন্ম নেওয়া ডলফিনেরা সামুদ্রিক জীবনের চেয়ে বন্দিদশাই বেশি পছন্দ করে। তাঁর মতে, ‘বন্দিদশায় জন্ম নেওয়া ডলফিনদের জীবনের গণ্ডি বন্দিদশার মধ্যেই সীমাবদ্ধ।’
তবে যুক্তরাজ্যের ম্যানচেস্টার বিশ্ববিদ্যালয়ের সামুদ্রিক প্রাণীর সামাজিক আচরণ বিশেষজ্ঞ সুসান শুলজ অনেকাংশেই ফ্রান্সের ওই গবেষকদের সঙ্গে একমত নন। তিনি বলেন, বন্দিদশায় যতটা সুখী থাকে ডলফিন, মুক্ত অবস্থায় নিঃসন্দেহে তার চেয়ে বেশিই সুখী হবে। গবেষণায় প্রাপ্ত বন্দিদশায় ডলফিনদের মানুষের সঙ্গ প্রত্যাশা করার তথ্যটি গুরুত্বপূর্ণ। তাই বলে বিষয়টা এমন নয় যে ডলফিনকে মুক্ত হওয়ার সুযোগ দিলে তা সে নেবে না।
যুক্তরাজ্যের দাতব্য সংস্থা হোয়েল অ্যান্ড ডলফিন কনজারভেশনের তথ্যমতে, বিশ্বজুড়ে ৫০টি দেশে অন্তত তিন হাজার ‘দাঁতওয়ালা তিমি’ পরিবারের সদস্য বন্দিদশায় রয়েছে। ডলফিন এই পরিবারের সদস্য। তবে ইসাবেলা ক্লেগ সংখ্যাটা আরও বেশি বলেই মনে করেন। তাঁর মতে, প্রাণিজগতের ওই পরিবারের আরও অন্তত ৫০০০ অনিবন্ধিত সদস্য বন্দিদশায় রয়েছে।