মিয়ানমার আর্মির নির্যাতনের শিকার হয়ে প্রায় ৮ লাখ রোহিঙ্গা শরণার্থী গত বছর সীমান্ত পার হয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। যার বেশির ভাগই নারী। এসব নারীরা যে শুধুমাত্র স্বজন ও সম্পদ হারিয়ে এসেছে তা নয়। অধিকাংশ নারীই ধর্ষণের শিকার হয়েছেন। আর এখন এসব নারীরা এখন প্রতিদিনই জন্ম দিচ্ছেন নতুন নতুন শিশু।
পালিয়ে আসা রোহিঙ্গা নারীদের ওপর নারকীয় যৌন নির্যাতন চালানোর ফলে গর্ভবতী হওয়া ঐ নারীদের অনেকেই গর্ভপাত করেছেন, তবে অনেকে সন্তান জন্মের পর তাদেরকে পরিত্যাগ করেছেন। কিন্তু অনেক নারীই আবার সন্তান লালন পালন করার সিদ্ধান্তও নিয়েছেন। যদিও তারা জানেন না এসব ‘অবাঞ্চিত’ শিশুদের ভবিষ্যত কী?
সম্প্রতি এরকম সাতদিন বয়সী এক শিশুর মা বিবিসি’র সঙ্গে বলেন, কেন তার সন্তানকে সাথে রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তিনি। নারকীয় সহিংসতার শিকার অসংখ্য নারীর মাঝে তিনিও একজন।
তিনি বলেন, আমি পালানোর আগেই সৈন্যরা আমাকে ধরে ফেলে। তারা আমাকে আটক করে এবং ধর্ষণ করে। একবার পালানোর পর আবারও ধরা পড়ে যাই। এরপর আরও অনেকবার ধর্ষণ করা হয়। এরপর একদিন সীমান্ত পার হয়ে বাংলাদেশে পৌঁছাতে সক্ষম হয়েছি।
তবে তিনি যে জীবনের সবচেয়ে কঠিন সঙ্কটের সম্মুখীন হচ্ছেন তা বুঝতে পারেন কিছুদিন পর। তিনি বুঝতে পারেন ধর্ষণের শিকার হয়ে অন্তঃসত্ত্বা হয়ে গেছেন।
সন্তান জন্ম দেবেন না গর্ভপাত করবেন- এই সংশয়ে কিছুদিন জর্জরিত হয়ে শেষ পর্যন্ত মা হওয়ার সিদ্ধান্ত নেন মাত্র ১৭ বছর বয়সী ঐ নারী।
তিনি বলেন, গর্ভপাত করাটা যেমন পাপ, আমার সন্তানকে জন্ম দেয়ার পর তাকে ফেলে দেয়াও তেমন পাপ হতো। তারা পাপ করেছে, আমি তো কোনো ভুল করিনি। সন্তানকে জন্ম দেই।
বয়স্ক দাদা-দাদী ছাড়া এই নারীর পরিবার বলতে আর কেউ নেই। তার বাবা-মা নিখোঁজ, সম্ভবত নিহত হয়েছেন তারা।
ঐ নারীর দাদা মনে করেন বাচ্চাটিকে ফেলে দেয়া উচিত। তিনি বলেন, আমি তাকে বলেছিলাম বাচ্চাটিকে ফেলে দিতে। কিন্তু সে রাজী হয়নি। তার কথা হলো, আল্লাহর ইচ্ছার ওপর নির্ধারিত হবে শিশুটির জীবন।
এসব শিশুর জন্য প্রস্তুত ছিল সাহায্যকারী সংস্থাগুলোও। এখন পর্যন্ত এধরনের শিশুর সংখ্যা বেশ কম বলেই জানান সেইভ দ্য চিলড্রেনের ডেফনি কুক।
মিজ কুক বলেন, আমাদের সবচেয়ে বড় ভয়, এই শিশুদের অধিকাংশই মনের মধ্যে একধরনের কলঙ্ক নিয়ে বড় হবে, যা এইরকম পরিবেশে জন্ম হওয়া শিশুদের মধ্যে তৈরি হওয়া স্বাভাবিক।
তিনি বলেন, আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি যেন এখানকার শিশুদের স্বাভাবিকভাবে বড় হওয়ার মত পরিবেশ তৈরি করতে পারি।
ধর্ষণের শিকার হওয়া আরেক নারী বিবিসিকে বলেন, তার গর্ভপাত হয়ে গেছে, কিন্তু তিনি সন্তানটি জন্ম দিতে ইচ্ছুক ছিলেন। কারণ তার দুই ছেলেই সেনাবাহিনীর হাতে মারা গেছে।